স্টাফ রিপোর্টার: খোলনলচে বদলানো সিপিএমের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে জায়গা পেয়েছেন সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। রবিবার মাদুরাইয়ে পার্টি কংগ্রেসের শেষদিনে কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাঁর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আর তারপরই বাংলায় পার্টির যুব সংগঠনের পরবর্তী মুখ কে হবেন, তা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে সিপিএমের অন্দরে। কারণ দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ায় ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক পদ থেকে মীনাক্ষীকে এবার সরতে হবে। কিন্তু মুশকিল হল, পার্টিতে এই মুহূর্তে যুব সংগঠনের কোনও দক্ষ নেতা নেই, জনপ্রিয় মুখও নেই। রাজ্যে সিপিএম যখন শূন্য থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে তখন মীনাক্ষীর বিকল্প হিসাবে যুব সংগঠনের হাল কে ধরবে, তা নিয়ে আলিমুদ্দিন যথেষ্ট চিন্তায়।

আলিমুদ্দিনের চিন্তা অবশ্য আরেকটি বিষয় নিয়েও। এত কম বয়সে কেন্দ্রীয় কমিটিতে মীনাক্ষী জায়গা পাওয়ায় দলের একাংশের মধ্যে চাপা ক্ষোভও রয়েছে। পার্টিতে মীনাক্ষীর দ্রুত উত্থান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে দলের কট্টরপন্থীদের মধ্যেও। প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও দলের ওই অংশের প্রশ্ন, পার্টির তো অনেক দক্ষ নেতৃত্ব রয়েছেন, যাঁরা মাঠে-ময়দানে কাজ করছেন। তাঁদের কেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে জায়গা দেওয়া হচ্ছে না? মীনাক্ষীকে তো পরেও নিয়ে যাওয়া যেত। এত তাড়াতাড়ি গুরুদায়িত্ব কেন? তাছাড়া নির্বাচনেও মীনাক্ষী উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি।
এদিকে, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হওয়ার পর মীনাক্ষীকে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতেও নিয়ে আসতে চলেছে সিপিএম। সিপিএমের একাংশের বক্তব্য, তরুণ প্রজন্মের আর কোনও নেতানেত্রীর মধ্যেই পার্টিতে মীনাক্ষীর মতো জনপ্রিয়তা নেই। পার্টিতে মীনাক্ষীকে কেউ বলেন 'ক্যাপটেন', কেউ বলেন 'ব্র্যান্ড'। পার্টির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বেও রয়েছেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। এবার আরও দায়িত্ব বাড়ল তাঁর। ফলে যুব সংগঠনের সম্পাদকের পদ ছাড়তে হবেই তাঁকে। পার্টির গঠনতন্ত্রের নিয়মানুযায়ী, দল ও যুব সংগঠন - দুটি দায়িত্বে একসঙ্গে থাকতে পারবেন না বঙ্গ সিপিএমের 'ক্যাপটেন'। তাই দলের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের পরবর্তী রাজ্য সম্পাদক কে হবেন, তা নিয়ে ফাঁপরে পড়েছেন সিপিএমের রাজ্য নেতারা।
পার্টি সূত্রে খবর, দলের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদকের পদ সম্প্রতি ছেড়েছেন সৃজন ভট্টাচার্য। মীনাক্ষীর মতো জনপ্রিয়তা না হলেও সৃজন তরুণ প্রজন্মের পরিচিত মুখ দলে। তাই মীনাক্ষী পার্টিতে আরও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেলে সৃজনকে ডিওয়াইএফআইয়ের পরবর্তী রাজ্য সম্পাদক করা হোক বলে দাবি রয়েছে সিপিএমের অন্দরে। কেউ কেউ আবার দীপ্সিতা ধরের কথাও বলছেন। কিন্তু দীপ্সিতা দলের দিল্লির কেন্দ্রীয় শাখার পার্টি সদস্য। ফলে তাঁকে যুবর দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু পার্টিগত সমস্যা রয়েছে।
সিপিএমের যুবনেত্রী দীপ্সিতা ধর। ফাইল ছবি
প্রসঙ্গত, আগামী জুলাই মাসে মুর্শিদাবাদে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্মেলন। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক পদে এই মুহূর্তে রয়েছেন মীনাক্ষী। আর সভাপত ধ্রুবজ্যোতি সাহা। বিকল্প মুখ কাউকে না পেলে রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতিকে শেষমেশ যুব সংগঠনের সম্পাদক করতে পারে বঙ্গ সিপিএম। আর জি কর ইস্যুতে অভিযোগ থাকায় যুব নেতা কলতান দাশগুপ্তকে ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক করার বিপক্ষে আবার পার্টির একাংশ।