shono
Advertisement
Everest

মায়ের সঙ্গে এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে, সঙ্গে মোহনবাগান! হরিনাভির সাত্যকির দু'চোখে স্বপ্নজয়ের ঘোর

গাইড ও পোর্টার ছাড়াই প্রতিকূলতাকে হেলায় হারিয়ে আনন্দে দু'জনেরই চোখে জল।
Published By: Biswadip DeyPosted: 06:04 PM May 10, 2025Updated: 09:08 AM May 11, 2025

অরিঞ্জয় বোস: ক্যাপ্টেন হ্যাডক বলেছিল, ''পাহাড়ে উঠে লাভ কী? সেই তো নেমেই আসতে হবে।'' ছোটবেলায় 'তিব্বতে টিনটিন' পড়তে গিয়ে আমরা সকলেই হেসেছি। কিন্তু আদপে হ্যাডকের মুখে এমন খ্যাপাটে সংলাপ বসিয়ে হার্জ যে এর উলটো বয়ানকেই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন তা অনস্বীকার্য। বারে বারে পাহাড়ের ভয়ংকর সৌন্দর্য মানুষের সামনে অতুলনীয় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। হরিনাভির ২৪ বছরের সাত্যকি চট্টোপাধ্যায়ের চোখেও ছোটবেলা থেকেই পাহাড় এক রঙিন স্বপ্ন হয়ে হাতছানি দিত। আসলে এই আকাঙ্ক্ষা যে তাঁর রক্তে মিশে রয়েছে। মামা-মা সকলেই ট্রেকিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। মা সোনালি চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছোট্ট বয়স থেকেই শুরু পর্বত অভিযান। সেবার সান্দাকফু। আর তারপর ক্রমে একটু একটু করে নিজেদের স্বপ্নকে ছড়িয়ে দেওয়া। ফলশ্রুতি, এবার বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের বেস ক্যাম্প পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন দু'জনে। তাও কোনও গাইড ও পোর্টার ছাড়াই। একজন মা। অন্যজন অপত্য। প্রতিকূলতাকে হেলায় হারিয়ে আনন্দে দু'জনেরই চোখে জল।

Advertisement

ছেলের মতো বছর পঞ্চাশের সোনালিকেও ছোটবেলা থেকেই ডাক দিত পাহাড়ের রহস্যময় চুড়ো। স্কুলের ভূগোল বইয়ে এভারেস্টের ছবি দেখার সময় আনমনা হয়ে যেত ছোট্ট মেয়েটা। হয়তো তখন থেকেই মনের গোপনে দানা বেঁধেছিল স্বপ্ন। কিন্তু স্বপ্ন কি আর সহজে পূরণ হয়? মধ্যবিত্ত বাড়ির কিশোরী জানত এভারেস্ট অভিযানের খরচ সাধ্যের বাইরে। তবে পাহাড়ে ওঠার স্বপ্ন দেখা কি এত সহজে ফুরিয়ে যায়। ছাইচাপা আগুনের মতো তা ধিকিধিকি জ্বলছিলই। ছেলে কোলে আসার পর তাঁকে নিয়েই শুরু পাহাড়ের অভিযান। তখন সাত্যকি পাঁচ বছরের। প্রথম ট্রেকিং সান্দাকফু। রিম্বিক থেকে শ্রীখোলা। পরে উত্তরাখণ্ডের গোর্শান বুগিয়াল। আর্গল থেকে ৫ কিমি ট্রেক। কোভিডের সময় ফের সান্দাকফু অভিযান। ক্রমশ স্বপ্ন গড়াতে থাকে এভারেস্টের দিকে। কিন্তু সেই অভিযান যে আজও প্রবল ব্যয়বহুল। আজকের দিনে ইকুইপমেন্ট ছাড়াই খরচ ৪৫ লক্ষ টাকা! তবু ছোট্ট ছেলেটার হাত ধরে সোনালি আবদার করেছিলেন, ''অন্তত একবার আমাকে এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে নিয়ে যাস!''

থোরাং লা পাসে তেরঙ্গা হাতে

মায়ের সেই ইচ্ছে ছেলের কাছে এক অমোঘ ইচ্ছের বীজ হয়ে ওঠে। যা মহীরুহে পরিণত হতে থাকে হৃদয়ের গোপনে। সাত্যকি বলছেন, ''মায়ের স্বপ্নপূরণ করতেই গত বছর থেকেই প্রশিক্ষণ শুরু হয়। ১ জুন থেকে। ডায়েট, ফিটনেস সব দিক মাথায় রেখেই। তার আগেই অন্নপূর্ণা সার্কিট ট্রেক করে এসেছিলাম। পড়াশোনা অবশ্য আরও আগেই শুরু। এক বছর ধরে প্ল্যানিং চলছিল। অবশেষে বেরিয়ে পড়া। কোনও গাইড ছাড়াই। পথ দেখানোর কেউ নেই, তবু আমরা দুর্গম পথ ধরে এগিয়ে গিয়েছি।'' বলতে বলতে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন সাত্যকি। ''দেখেছিলাম অনেককে হেলিকপ্টার করে নামিয়ে আনা হচ্ছে। যেহেতু পারছে না। সেখানে আমি আর মা কিন্তু চাইছিলামই ওই দুর্গম পথ নিজেরাই পায়ে হেঁটে যাব।''

প্যাশনের নাম মোহনবাগান

কেবলই পাহাড়চুড়ো কিংবা এভারেস্ট নয়। সাত্যকির আরেকটা প্যাশনের নাম মোহনবাগান। যখন যেখানে অভিযানে গিয়েছেন সঙ্গে ট্রেকিংয়ের বই ছাড়া যেটা অবশ্যই থেকেছে সেটা মোহনবাগানের পতাকা। আর কী আশ্চর্য সমাপতন! সবুজ-মেরুনের আইএসএল বিজয়ী হওয়ার দিনই তাঁদের রওনা হওয়া! কিন্তু তখন আর সেলিব্রেশন করা হয়নি। পরের দশটা দিন স্বপ্ন বুকে আঁকড়ে এগিয়ে চলা। ২২ এপ্রিল এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে পা রাখা। এই দশটা দিন স্রেফ সেলফ সাপোর্টে একরোখা হয়ে দুর্গম পথ চলা। তারপর লক্ষ্যে পৌঁছে হাতে তুলে নেওয়া সবুজ-মেরুন পতাকা। মা-ছেলের বাঁধ না মানা চোখের জলের সাক্ষী থাকল মোহনবাগানও। আগামিদিনেও থাকবে, এখনই জানিয়ে দিচ্ছেন সাত্যকি। মা আর মোহনবাগান- তাঁর জীবনের দুই লাইটহাউস। যা প্রতি মুহূর্তে মনে করিয়ে দেয় পাহাড় যত উঁচুই হোক, মানুষের প্রত্যয় তাকে পেরিয়ে আকাশকে ছুঁয়ে থাকে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • হরিনাভির ২৪ বছরের সাত্যকি চট্টোপাধ্যায়ের চোখেও ছোটবেলা থেকেই পাহাড় এক রঙিন স্বপ্ন হয়ে হাতছানি দিত।
  • এবার বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের বেস ক্যাম্প পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন দু'জনে। তাও কোনও গাইড ও পোর্টার ছাড়াই। একজন মা। অন্যজন অপত্য।
  • প্রতিকূলতাকে হেলায় হারিয়ে আনন্দে দু'জনেরই চোখে জল।
Advertisement