shono
Advertisement
Bangladesh

মুজিব মুছতে বাংলাদেশে তাণ্ডব, 'আত্মঘাতী বাঙালি', বলছেন এপারের বিশিষ্টজনেরা

বাংলাদেশের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানালেন পবিত্র সরকার, সুবোধ সরকার এবং গৌতম হালদার।
Published By: Kishore GhoshPosted: 04:14 PM Feb 06, 2025Updated: 04:44 PM Feb 06, 2025

কিশোর ঘোষ: মুজিবের বাংলাদেশে হারছে বাঙালি জাতিসত্তা, জিতছে স্যাঁতস্যাঁতে মৌলবাদ। মিথ্যে হয়ে যাচ্ছে পাক হানাদার বাহিনীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর হুঙ্কার---"সাত কোটি বাঙালিকে দাবায় রাখতে পারবা না।" কারণ বুধবার রাত থেকে নতুন করে নৈরাজ্যের দখলে পদ্মাপাড়। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ মুজিবর রহমানের ধানমন্ডির বাড়ি। জেলায় জেলায় ভাঙা হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি-সহ যাবতীয় স্মৃতি। 'শকুনের উল্লাস' করেছে পাকিস্তান সেনা। সেটাই অবশ্য স্বাভাবিক। এবং প্রশ্ন উঠছে, ধর্মের ঊর্ধ্বে বাঙালি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে মুছে ফেলতেই কি এই হামলা? মৌলবাদীদের উত্থানে কি সে দেশে বাংলা ভাষাও সংকটে? উত্তর দিলেন এপার বাংলার তিন বিশিষ্টজন। যথাক্রমে ভাষাবিদ ও লেখক পবিত্র সরকার, কবি সুবোধ সরকার এবং নাট্য ও চলচ্চিত্র অভিনেতা গৌতম হালদার।

Advertisement

পবিত্র সরকার: আমার নীরদচন্দ্র চৌধুরীর 'আত্মঘাতী বাঙালি'র কথা মনে পড়ছে। এমন হিংস্র ভাবে যে কেউ নিজের ইতিহাসকে ধ্বংস করতে পারে, বাংলাদেশি বন্ধুরাই তা আমাদের দেখালেন। ব্রিটিশদের প্রতি, পাকিস্তানের প্রতিও এত ঘৃণা দেখিনি, যতটা মুজিবের প্রতি দেখছি। যে মুজিব বাঙালির আত্মপরিচয় তৈরি করেছিলেন। তাছাড়া বাংলা ভাষা, বাঙালির আন্দোলন... সমস্ত কিছু মুছে ফেলা হচ্ছে। এতখানি হিংস্রতা, অন্ধকার আমি কল্পনাও করতে পারি না। হয়তো এর ফলে বাংলা ভাষা ধ্বংস হবে না। তবে এর আগে পাকিস্তান পর্বে বাংলা ভাষার যে সংকট তৈরি হয়েছিল, তা আবার ফিরে আসবে। এমনিতে আরবি, ফারসি শব্দ বাংলা ভাষায় অনেক দিন ধরেই রয়েছে এবং থাকবেও। কিন্তু এবারে হয়তো চাপিয়ে দেওয়া আরবি, ফারসি আসবে, রবীন্দ্রনাথ বর্জিত হবে... এগুলোও রোডম্যাপে ওদের।

সুবোধ সরকার: 'এটা দিল্লি নয়, ঢাকা', এই বলে স্লোগান দিচ্ছিল ওরা। এর থেকে দুটো জিনিস পরিষ্কার। প্রথমত, ভয়ংকর ভারত বিদ্বেষ এবং দ্বিতীয়ত, মুজিবকে ওরা মুছে ফেলতে চায়। কিন্তু মুজিবকে মোছা সম্ভব না, তিনি জাতির পিতা। স্বপ্নের বাংলাদেশ তৈরি করেছিলেন মুজিব। সাহায্য পেয়েছিলেন ভারতের। ভারত না সাহায্য করলে কোনওভাবেই ওই স্বপ্নপূরণ সম্ভব হত না। আজকে সেই বাংলাদেশে নতুন প্রজন্মকে এমনভাবে বিপথে চালিত করা হয়েছে যে ভারত বিদ্বেষ তাদের রক্তে ঢুকে পড়েছে। তারা প্রতি মুহূর্তে ভারত সম্পর্কে খারাপ কথা বলছে। এটা একজন ভারতীয় নাগরিক হিসাবে আমি নিতে পারছি না। যার খেলি, যার বাড়িতে আশ্রয় নিলি, যারা তোদের দেশ স্বাধীন করে দিল, যারা তোদের পাশে দাঁড়াতে মৃত্যুবরণ করল, যারা লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে খেতে-পরতে দিল, সেই তাদের বিরুদ্ধেই বিদ্বেষ! এটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। তথাপি কোনও কিছু নিয়েই নিরাশায় ডুবতে ভালো লাগে না আমার। আশা করি একটা 'সিলভার লাইন' মিলবে। নৈরাজ্যবাদীদের সুবুদ্ধি হবে। নিশ্চয়ই ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক আবার ভালো হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে যা চলছে, তা দেখে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি আমি। কারণ মৌলাবাদ ও নৈরাজ্যের এই বাড়াবাড়ির ফলে পদ্মপাড়ের বাংলা ভাষাও বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে।

গৌতম হালদার: রবি ঠাকুর, কাজী নজরুল সকলেই চেয়েছিলেন হিন্দু ও মুসলমান একসঙ্গে থাকবে। ওঁরা ধর্মের ঊর্ধ্বে এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু আজকের নৈরাজ্য দেখে মনে হচ্ছে, এ কোন বাংলাদেশ? শুধু দেশ নয়, এ কোন ভাষা ও সংস্কৃতি! কবে এই দুঃস্বপ্নের অবসান হবে? শেষ অবশ্য হয় না, চলতে থাকে। ছোটবেলায় রেডিওতে মুজিবর রহমানের বজ্রকণ্ঠ শুনেছি---'এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম', 'তোমরা আমাদের দাবায় রাখতে পারবা না'। সেই সময়ে পূর্ববঙ্গের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গও উত্তাল হয়েছিল। আর ওই ঐতিহাসিক ঘটনার জেরে মুজিবর রহমান হয়ে উঠেছিলেন বাঙালির আইডল। তাঁর স্মৃতি, ইতিহাস যদি মুছে ফেলা হয় তবে দেশের ক্ষতি, জাতির ক্ষতি। যারা ধ্বংস চালাচ্ছে তাদেরও ক্ষতি হবে বলেই মনে করি আমি। আসলে আমাদের ছোটবেলায় হিন্দু বা মুসলমানের থেকেও বড় ছিল লোকটা বাঙালি কিনা। সেখানে আজকের ঘটনা নিদারুণ দুঃখের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বুধবার রাত থেকে নতুন করে নৈরাজ্যের দখলে পদ্মপাড়। গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে শেখ মুজিবর রহমানের ধানমন্ডির বাড়ি।
  • প্রশ্ন উঠছে, ধর্মের ঊর্দ্ধে বাঙালি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে মুছে ফেলতেই কি এই হামলা?
  • মৌলবাদীদের উত্থানে কি বাংলা ভাষাও সংকটে? উত্তর দিলেন এপার বাংলার তিনি বিশিষ্টজন।
Advertisement