স্টাফ রিপোর্টার: মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব শুধু গৃহস্থের হেঁশেলে পড়েনি। পড়েছে চিড়িয়াখানাতেও (Zoo)। সরকার থেকে যে অর্থ চিড়িয়াখানার জন্য বরাদ্দ করা হয়ে থাকে, তা দিয়ে এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারে এতগুলো সদস্যকে খাবার, ওষুধ, চিকিৎসা পরিষেবা-সহ আনুষঙ্গিক খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। তার উপর এখানকার সব বাসিন্দার ডায়েটও (Diet) আবার এক নয়। একেকজনের একেকরকম ডায়েট চার্ট থাকে। একটা বাঘের প্রতিদিন সাড়ে ৮ কেজি মোষের মাংস লাগে। সিংহেরও একই পরিমাণ মাংস লাগে। হাতি দিনে ৫টি কলা খায়, আখ লাগে ৩৭টি, চাল-গম লাগে প্রায় দেড় কেজি করে। এছাড়া গণপতির অন্যান্য খাবারও লাগে। শিম্পাঞ্জির আবার প্রতিদিন কাঁচা সবজির সঙ্গে কমপ্লান, দুধ, মুসাম্বি, আপেল, কলা, রুটি, ড্রাই ফ্রুট না হলে চলে না।
এ তো গেল খাবার। অসুস্থ হলে ওষুধ, চিকিৎসা পরিষেবার খরচ আবার আলাদা। টিকিট বিক্রি করে যে আয় হয়, তার থেকে চিড়িয়াখানার ব্যয় বেশি হয়। অগ্নিমূল্যের বাজারে এদের খাবার কাটছাঁটও করা যাবে না। এদিকে, এই বিপুল অঙ্কের খরচ বহন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আলিপুর কর্তৃপক্ষকে। তাই পশুদের দত্তক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এক্ষেত্রে দত্তক নেওয়া প্রাণীর অভিভাবকরাই খাবার, ওষুধ-সহ আনুষঙ্গিক খরচের একটা অংশ বহন করবে। দত্তকের উদ্যোগ নেওয়ার পর প্রথমদিকে ভাল সাড়াও পেয়েছিল চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। বিদেশ থেকেও আলিপুর চিড়িয়াখানার বাঘ, সিংহকে দত্তক নেওয়া হয়েছিল।
[আরও পড়ুন: কাঁধে প্রিসাইডিং অফিসারের দায়িত্ব, কী উপায়ে সামলাবেন কাজ? দুশ্চিন্তায় দৃষ্টিহীন শিক্ষক]
কিন্তু লকডাউনের (Lockdown) পর থেকেই চিত্র বদল। চিড়িয়াখানার পশুদের দত্তক নিতে আর সেভাবে কেউ এগিয়ে আসছেন না। চলতি অর্থবর্ষে মাত্র তিনটি পশু দত্তক নেওয়া হয়েছে। দু’টি শিম্পাঞ্জি এবং একটি জিরাফ। শিম্পাঞ্জি বাবুকে দত্তক নিয়েছেন অভিনেত্রী সোহিনী সেনগুপ্ত এবং সপ্তর্ষি মৌলিক। আলিপুর চিড়িয়াখানার এডুকেটর রূপসা ব্রহ্মচারী জানান, আগে অনেক প্রাণী দত্তক নেওয়া হয়েছিল। লকডাউনের পর থেকে সেভাবে কেউ দত্তক নিতে এগিয়ে আসছেন না। চলতি অর্থবর্ষে একটি জিরাফ এবং দু’টি শিম্পাঞ্জি দত্তক নেওয়া হয়েছে।
চিড়িয়াখানার প্রাণীদের এক বছর করে দত্তক দেওয়া হয়ে থাকে। এক বছর পর চাইলে আবার পুনর্নবীকরণ করে থাকে কর্তৃপক্ষ। তিনি জানান, যিনি দত্তক নেবেন, তাঁকে এক বছরের জন্য একটা অর্থ চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষকে দিতে হয়। সেই টাকা দিয়ে ওই দত্তক নেওয়া প্রাণীর খাবার, ওষুধ, চিকিৎসা পরিষেবা ইত্যাদি খাতে ব্যয় করা হয়। চিড়িয়খানার পশুদের যে কেউ দত্তক নিতে পারেন। অবশ্য দত্তক নেওয়া পশুপাখিদের চিড়িয়াখানায় রাখতে হবে। অভিভাবকরা বাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন না। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষই তাদের দেখাশোনা করবে। তবে অভিভাবকরা চাইলে চিড়িয়াখানায় এসে তাদেরকে দেখে যেতে পারেন। সেজন্য চিড়িয়খানার পক্ষ থেকে একটি পাস দেওয়া হয়ে থাকে।
[আরও পড়ুন: কলকাতায় পাখি পাচারে বাংলাদেশ যোগ, চিড়িয়াখানার টাউকান চুরি রহস্যে নয়া তথ্য]
এছাড়া দত্তক নেওয়া প্রাণীর সঙ্গে জন্মদিন কিংবা বিশেষ কোনও দিন উদযাপন করতে পারবেন অভিভাবকরা। দত্তক নেওয়ার পর অভিভাবকদের নামের একটি বোর্ড ওই প্রাণীর খাঁচার সামনে টাঙিয়ে দিয়ে থাকে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ। এখানে প্রাণীদের দত্তক নেওয়ার খরচ অবশ্য এক নয়। প্রতিটি প্রাণীর ক্ষেত্রে আলাদা খরচ পড়ে। যেমন, একটি ফিশিং ক্যাট দত্তক নিতে বছরে প্রায় ৩০ হাজার টাকা লাগে। শিম্পাঞ্জি প্রায় ৫০ হাজার টাকা। বাঘ, সিংহ এবং হাতি দত্তক নিতে সব থেকে বেশি টাকা লাগে। এদের ক্ষেত্রে বছরে প্রায় ২ লক্ষ টাকা করে লাগে।