কলহার মুখোপাধ্যায়, বিধাননগর: “বাতিল হয়ে যাওয়া পলিসি পুনরুদ্ধার করে দেওয়া হবে। কোনওরকম ঝঞ্ঝাট ছাড়াই দীর্ঘদিনের জমা টাকা ফেরত পাবেন। বিনা পরিশ্রমে ঘরে বসেই টাকা হাতে পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ করে দিচ্ছে সরকার।” এই মর্মে বিমা গ্রাহকদের ফোন। ‘ন্যাশনাল ইন্সুরেন্স’—এর আধিকারিক পরিচয়ে রাজ্য, দেশ মায় বিদেশের গ্রাহকদেরও চোস্ত ইংরজিতে মোবাইলে কল। তারপর ফাঁদে পা দিলেই পলিসি উদ্ধারের নানা অছিলায় টাকা চেয়ে বসা। বহু মানুষ এদের ডাকে সাড়া দিয়ে মোটা টাকা ইতিমধ্যেই খুইয়েছেন। এই সম্পর্কিত একাধিক অভিযোগ আসছিল। এই প্রতারণা চক্রকে ধরতে তক্কে তক্কে ছিল পুলিশ। শেষপর্যন্ত নিউটাউন (Newtown) থানার হাতেনাতে ধরা পড়ল চক্রের মূল মাথা সমেত ছ’জন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, নিউটাউনের গ্রিনউড এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ে ঝাঁ চকচকে অফিস খুলে বসেছিল এই প্রতারনা চক্র। অভিযোগ আসার পর খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছিল পুলিশ। বুধবার এই অফিসে হানা দেয় নিউটাউন থানা। চক্রের মূল মস্তিষ্ক কমলেশকুমার আর্য—সহ ছ’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিধাননগর কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, কমলেশ অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। পুলিশি জেরায় সে জানিয়েছে, বিমার টাকা উদ্ধার করে দেওয়ার নামে একাধিক ব্যক্তির কাছে থেকে টাকা তছরুপ করেছে তারা। এই করে মোটা অর্থ রোজগার করেছে। তাদের অফিসে রেড চালিয়ে অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হত এমন ১৪টি ল্যাপটপ, তিনটি মোবাইল, ব্যাঙ্কের চেকবুক ও একাধিক নথি বাজেয়াপ্ত করেছেন তদন্তকারীরা।
[আরও পড়ুন: বাংলার বন্যা পরিস্থিতি: DVC নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর নালিশের বিরোধিতা, PM-কে পালটা চিঠি শুভেন্দুর]
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন বিভিন্ন কারণে টাকা জমা না দেওয়ার কারণে বহু মানুষের বিমা পলিসি বাতিল হয়ে যায়। তা পুনরায় চালু করা বা তা উদ্ধার করার উপায় অনেকে জানেন না। এই অজ্ঞাতার সুযোগ নিয়েই ফাঁদ পাতে প্রতারকরা। কমলেশরাও একই পদ্ধতিতে প্রতারনা চালাচ্ছিল। বিমার জমানো টাকা উদ্ধার করে দেওয়া হবে বলে এই মর্মে ফোন করত ন্যাশনাল ইনসুরেন্স সংস্থার আধিকারিক পরিচয় দিয়ে। তারপর টাকা উদ্ধার করতে কিছু জরিমানার প্রয়োজন রয়েছে বলে ভুল বোঝাত। অনেকেই তাদের কথায় বিশ্বাস করে টাকা দিয়ে দিতেন। এভাবে একাধিকবার টাকা আদায় করে নিত কমলেশরা। প্রথমবার টাকা দেওয়ার পর সেই টাকা বেকার গেল ভেবে দ্বিতীয় বা তৃতীয়বার টাকা দিয়ে দিতেন গ্রাহকরা। তারপর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেত এই চক্র। দেশ শুধু নয়। বিদেশের গ্রাহকদেরও টাকা একই উপায়ে হাতিয়েছে কমলেশ ও তার গ্যাং।