স্টাফ রিপোর্টার: কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিতে বেড়েছে নির্মাণ খরচ। তার প্রভাবে বাড়তে চলেছে ফ্ল্যাটের (Flat) দামও। যা আগামী ৬ থেকে ১২ মাসের মধ্যে ধাপে ধাপে প্রায় ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে আবাসন নির্মাতা সংস্থাগুলির সর্বভারতীয় সংগঠন ক্রেডাইয়ের পশ্চিমবঙ্গ শাখা। একই কারণে ফ্ল্যাটের দাম বিগত ছ’মাসে প্রায় ৫ শতাংশ বেড়েছে।
আবাসন নির্মাণে অতি আবশ্যক বহু সামগ্রী যেমন, স্টিল, বালি, অ্যালুমিনিয়াম, পাইপ ইত্যাদির মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। ক্রেডাইয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় স্টিলের দাম ২০২০-র অক্টোবরে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা ছিল। যা চলতি বছর অক্টোবরে বেড়ে হয়েছে ৬২ টাকা। মূল্যবৃদ্ধি প্রায় ৪৫ শতাংশ। বালির দাম এক বছরে ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে গিয়েছে। টাইলসের মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ২০-৩০ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত এক বছরে নির্মাণ খরচ প্রায় ১২ শতাংশ এবং শ্রমিক খরচ ২০ শতাংশ বেড়েছে। সঙ্গে রয়েছে ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি। যা কাঁচামাল সরবরাহের খরচের উপর প্রভাব ফেলেছে।
[আরও পড়ুন: ২০২৪-এর আগেই রাজ্যের সব ওয়ার্ডে শাখা খুলতে চায় RSS, সোমবারই শহরে আসছেন মোহন ভগবত]
নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির জেরে প্রতি বর্গফুট তৈরিতে খরচ বেড়েছে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। যার প্রভাব পড়বে ফ্ল্যাট বিক্রির দামেও। ক্রেডাইয়ের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি সুশীল মোহতা বলেন, “নির্মাণ সামগ্রীর চরম মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। যার প্রভাব থেকে বাঁচতে আমাদের বিক্রয়মূল্য পর্যালোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে। অতিমারীকালে বিভিন্ন কারণে আবাসন শিল্পের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তার ফলে নতুন ফ্ল্যাটের দাম প্রতি বর্গফুটে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা বাড়তে পারে।”
ইস্পাতের দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। ইস্পাত শিল্পের প্রয়োজনীয় লৌহ আকরিকের অভাব তীব্র। কয়লার জোগান কমেছে। কারখানা চালাতে খরচ বেড়েছে ডিজেলের। ফলে প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি, দুই ধরনের সংস্থাগুলি ইস্পাতের দাম অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। তার চাপ সামলাতে হচ্ছে আবাসন শিল্পকে। সে কারণেই নতুন আবাসন প্রকল্পের ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো ছাড়া আর কোনও পথ খোলা নেই বলেই জানিয়েছেন আবাসন শিল্পের সঙ্গে যুক্তরা।
[আরও পড়ুন: বিলুপ্তির পথে ১৬টি পদ! কলকাতা পুরসভায় ২৮ হাজার শূন্যপদের মধ্যে নিয়োগ মাত্র ৩৩%]
ক্রেডাই বেঙ্গলের সভাপতি নন্দু বেলানি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে ৫ থেকে ১০ শতাংশ দাম বাড়ালেই নির্মাণ সংস্থাগুলি একটু নিশ্বাস ফেলতে পারবে। স্টিলের দামই ৪৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। তামা, অ্যালুমিনিয়ামের মতো ধাতুগুলিরও দাম বেড়েছে। তাই ফ্ল্যাটের মূল্য প্রায় ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।” ক্রেডাইয়ের উত্তরবঙ্গ শাখার সভাপতি নরেশ আগরওয়াল জানিয়েছেন, “কলকাতা এবং রাজ্যের অন্যান্য ক্ষুদ্র বাজারের তুলনায় পরিবহণ এবং বালির দাম উত্তরবঙ্গে বেশি বেড়েছে। যার ফলে উত্তরবঙ্গে ফ্ল্যাটের বিক্রয়মূল্য কলকাতার তুলনায় একটু বেশি হবে। তবে, এই বৃদ্ধি ধাপে ধাপে হবে বলেই জানিয়েছেন ক্রেডাইয়ের কর্তারা।”
শুধু ফ্ল্যাটের দাম বাড়ানো নয়। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণেও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানাচ্ছে নির্মাণ সংস্থারা। সুশীল মোহতা বলেন, “স্ট্যাম্প ডিউটি এবং সার্কেল রেটে ছাড় দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নিলেও নির্মাণ সামগ্রীগুলির মূল্যবৃদ্ধির কারণে নতুন প্রকল্পের বিক্রয়মূল্য বেড়েছে। আমরা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে স্টিল এবং অন্যান্য কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার আবেদন জানাচ্ছি।”