স্টাফ রিপোর্টার: রাত তখন প্রায় ১২টা হবে। মাইকে ঘোষণা হচ্ছিল, দ্রুত স্নান সেরে ফিরে যাওয়ার জন্য। আচমকাই হুলস্থুল, ঠেলাঠেলি, ধাক্কাধাক্কি। মা পড়ে গেল। তারপর...। একজন পুলিশও সাহায্যের জন্য এগিয়ে এলেন না। চোখের সামনে মায়ের মৃত্যু দেখে ফিরে এসেছেন। মায়ের দেহ নিয়ে ফিরলেও ডেথ সার্টিফিকেট পাননি।
শুক্রবার প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সামনে কথাগুলো বলার সময় চোখের জল ধরে রাখতে পারলেন না সুরজিৎ পোদ্দার। কলকাতার রানিকুঠির বাসিন্দা। মা, দিদি, বড়মাসিকে নিয়ে গিয়েছিলেন কুম্ভে। কিন্তু কুম্ভের দুর্ঘটনায় মাকে হারিয়ে ফিরে এসেছেন। শুধু তিনি নন। তাঁর মতো আরও ছয় পরিবার স্বজন হারিয়েছেন। তাঁরাই শুক্রবার শোনাচ্ছিলেন ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। ‘দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের’ তরফে আয়োজন করা হয়েছিল সাংবাদিক সম্মেলনের।
সংগঠনের দাবি, কুম্ভমেলায় উত্তরপ্রদেশের প্রশাসনিক গাফিলতিতে বাংলা-সহ বিভিন্ন রাজ্যের বহু মানুষ পদপিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছেন। নিখোঁজ হয়েছেন তারও বেশি সংখ্যক মানুষ। এদিন এই সভায় দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু, সমাজকর্মী সুষাণ রায়, সঙ্গীতশিল্পী সৈকত মিত্র, প্রবীণ সাংবাদিক রন্তিদেব সেনগুপ্ত, চিত্রপরিচালক এবং অভিনেত্রী সুদেষ্ণা রায়, প্রদীপ্ত গুহঠাকুরতা, অধ্যাপক নাজমুল হক, অভিনেতা রাহুল চক্রবর্তী, জাতীয় বাংলা সম্মেলনের সভাপতি সিদ্ধব্রত দাস, অনন্যা চক্রবর্তী-সহ আরও অনেকে।
দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের প্রতিনিধিরা এদিন জানান, কুম্ভস্নানে পশ্চিমবঙ্গের যে ৬ জন মারা গিয়েছেন, তাঁরা হলেন অমল পোদ্দার (শিলিগুড়ি লাগোয়া বাড়িভাষার মাদানি বাজার এলাকার বাসিন্দা), অমিয় সাহা (কালিয়াচক ৩ ব্লকের রাজনগর গ্রামের বাসিন্দা), মিঠুন শর্মা (আলিপুরদুয়ার জেলার সীমান্ত শহর জয়গাঁর বাসিন্দা), বিনোদ রুইদাস (জামুড়িয়ার কেন্দা গ্রামের বাসিন্দা), উর্মিলা ভুঁইয়া (শালবনির গোদাপিয়াশাল কাছারি রোডের বাসিন্দা), বাসন্তী পোদ্দার (কলকাতার ৯৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা)। এই ৬ জনের মধ্যে মৃত ৩ জনের পরিবারের লোকজন এদিন উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের সকলেরই দাবি এক, উত্তরপ্রদেশের সরকার মৃত্যুর শংসাপত্র পর্যন্ত ইস্যু করেনি। বিনোদ রুইদাস এবং উর্মিলা ভূঁইয়ার পরিবারের সদস্যদের বক্তব্য, তাঁরা নিজেদের চোখে দেখেছেন কতটা অব্যবস্থার মধ্যে পুণ্যার্থীরা ছিলেন। পুণ্যার্থীদের থাকার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থাটুকুও ছিল না।
প্রাক্তন শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, “যাঁরা ধর্মের পথে চলার এবং থাকার কথা বলেন, তাঁরা ন্যায়ের পথেও থাকবেন, সেটাই কাম্য। কারণ, ধর্ম ও ন্যায় একে অপরের পরিপূরক।” গণমঞ্চের প্রতিনিধিরা বলেন, বাংলায় মকরসংক্রান্তিতে গঙ্গাসাগর মেলা মহাধুমধামে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে কোটি কোটি মানুষের সমাগম ঘটে। কিন্তু পুলিশ এবং স্বেচ্ছাসেবীদের কড়া নিরাপত্তায় পুণ্যার্থীদের কখনও এমন প্রতিকূলতার সাক্ষী হতে হয়নি। দেশ বাঁচাও গণমঞ্চের দাবি, কুম্ভমেলায় পদপিষ্ট হয়ে মৃত মানুষদের ডেথ সার্টিফিকেট তাঁদের পরিবারের সদস্যদের দেওয়া হোক। সঙ্গে ক্ষতিপূরণও। যোগী আদিত্যনাথ মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে অবিলম্বে পদত্যাগ করুন।