বিধান নস্কর, বিধাননগর: প্রতিদিন চলে জীবন সংগ্রাম। রিকশা টেনে দিন গুজরান। ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর দশা। যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিয়ে, মুখে হাসি ফোটে। আর পাঁচটা দিনের মতো সোমবারও ভাগ্যান্বেষণে 'বাহন' নিয়ে বেরিয়েছিলেন আটঘরার বাসিন্দা নুর আলি। ভাগ্যদেবতা অন্য কিছুই ভেবে রেখেছিলেন তাঁর জন্য! রাস্তায় কুড়িয়ে পান ১৫ লক্ষ টাকার চেক। তাতে সইও রয়েছে গ্রাহকের। চাইলেই সেই টাকা তুলে নিতে পারতেন। তবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন ওই চালক। পুলিশের হাতে তুলে দিলেন চেক। তাঁকে খালি হাতে ফেরাল না প্রশাসনও। দুই লক্ষ টাকা পুরস্কার পাচ্ছেন সৎ চালক।
সোমবার রিকশা টানতে গিয়ে চিনারপার্ক এলাকার একটি নামী হোটেলের সামনের রাস্তায় প্লাস্টিকের মধ্যে কুড়িয়ে পেয়েছিলেন ৩ লক্ষ টাকা করে পাঁচটি চেক। কুড়িয়ে পাওয়া চেক নিয়ে যোগাযোগ করেন বিধাননগর পুরসভার ১২ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর আজিজুল হোসেন মণ্ডলের সঙ্গে। তাঁর পরামর্শে সোজা চলে যান বাগুইআটি থানায়। দায়িত্বপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর অমিতকুমার মিত্রের কাছে জমা করেন কুড়িয়ে পাওয়া চেকগুলো। পুলিশ ওই চেকের সূত্র ধরে বাগুইআটি পূর্বাঞ্চল শাখার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাতে চেকের মালিক আকাশ দাসের নাম জানতে পারা যায়। এর পর যাবতীয় প্রক্রিয়া মেনে আকাশকে ডেকে হারিয়ে যাওয়া চেক ফেরায় পুলিশ। মোটা অঙ্কের চেক ফিরে পেয়ে রিকশাচালক নুর ও পুলিশকে কৃতজ্ঞতা জানান আকাশ। নিজের সততার জন্য ভূয়সী প্রশংসা কুড়ালেন নুর।
মঙ্গলবার নুরের ডাক পড়ে বাগুইআটি থানায়। সততার জন্য অসহায় নুরকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। আইসির এই ভূমিকায় নুর বলেন, "আমার কাজের সম্মান হিসেবে আইসি যেভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন, ভবিষ্যতে এমন সততার কাজে আরও উৎসাহী হব।" শুধু পুলিশ নয়, রাজারহাট নিউটাউনের বিধায়ক তাপস চট্টোপাধ্যায় ও প্রাক্তন কাউন্সিলর মিলে আজিজুলকে ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।