সুদীপ রায়চৌধুরী: রাজ্যজুড়ে শুরু হতে চলা খসড়া ভোটার তালিকার শুনানি পর্বে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (সিইও) দপ্তর ও তার আধিকারিকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব তুলে দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে। কমিশন সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবারই জাতীয় নির্বাচন কমিশন এক নির্দেশে জানিয়ে দিয়েছে সিইও দপ্তরের নিরাপত্তার দায়িত্ব কলকাতা পুলিশের বদল তুলে দেওয়া হচ্ছে কেন্দ্রীয় আধা সেনা বাহিনীর হাতে। সিইও-সহ দপ্তরের আধিকারিকরাও আধা সেনা জওয়ানদের নিরাপত্তা পাবেন। রাজ্যে পাঠানো নিযুক্ত কেন্দ্রীয় বিশেষ রোল অবজার্ভার এবং ১৭ জন রোল অবজার্ভাররাও শুনানি পর্বে জেলায় গেলে কেন্দ্রীয় আধা সেনা বাহিনীর নিরাপত্তা পাবেন বলে খবর কমিশন সূত্রে।
এসবের মধ্যেই সময় যত গড়াচ্ছে ততই বেরিয়ে আসছে খসড়া তালিকায় একের পর এক গলদ। এগারোর পাতায় আগের দিন চণ্ডীতলা বিধানসভা কেন্দ্রর ডানকুনি, মাটিগাড়া নক্সালবাড়ি এবং কোচবিহার দক্ষিণ বিধানসভা কেন্দ্রে চার জন জীবিত ভোটারকে মৃত দেখানোর পর বৃহস্পতিবার আরও তিন জীবিত ভোটারকে ‘মৃত’ দেখানোর নিদর্শন প্রাকশ্যে এল। পাশাপাশি অসম থেকে এনআরসি-র নোটিস পাওয়া আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দা অঞ্জলী শীলের নামও জ্বলজ্বল করতে দেখা গিয়েছে এরাজ্যের খসড়া ভোটার তালিকায়। যতই ‘টাইপিং মিসটেক’ বিষয়টিকে লঘু করার চেষ্টা করুক নির্বাচন কমিশন, খসড়া ভোটার তালিকার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে আমজনতার অবিশ্বাস ক্রমশ গাঢ় হচ্ছে বলেই ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা।
এই অবিশ্বাসের আবহেই আগামী সপ্তাহ থেকে শুরু হতে চলেছে খসড়া তালিকায় নাম থাকা বিপুল সংখ্যক রাজ্যবাসীর বৈধতা যাচাই করার শুনানি পর্ব। যা নিয়ে নতুন করে আতঙ্ক বইছে রাজ্যজুড়ে। বাড়ছে মহিলা-পুরুষ নির্বাশেষে প্রান্তিক মানুষের ক্ষোভও। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ফলতায় ফলতায় এসআইআরের কাজ খতিয়ে দেখতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়া কমিশনের রোল পর্যবেক্ষক সি মুরুগান যে ক্ষোভের সম্যক আঁচ পেয়েছিলেন। তারপরই নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়ে বাংলায় নিযুক্ত কমিশনের অবজার্ভাররা দিল্লিতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে্ছিলেন বলে কমিশন সূত্রে খবর।
তারই ভিত্তিতে এদিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব অনিল সুব্রমনিয়ামকে চিঠি পাঠান জাতীয় নির্বাচন কমিশনের সচিব সুজিতকুমার মিশ্র। চিঠিতে বলা হয়, ‘পশ্চিমবঙ্গে এসআইআর প্রক্রিয়ার মাঝ পর্বে গত ২৪ ও ২৫ নভেম্বর ওই রাজ্যের সিইও কার্যালয়ের সামনে কিছু বিএলও এবং রাজনৈতিক দলের কর্মীদের ঘেরাওয়ের কারণে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি এবং কার্যালয়ের আধিকারিক ও কর্মীদের নিরাপত্তার ক্ষেত্র বড় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসন্ন বিধানসভা ভোটের আবহে এই জাতীয় ঘটনা ফের ঘটার আসঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। এই কারণে সিইও কার্যাালয়ে অবিলম্বে ২৪ ঘণ্টার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হোক।’
এদিকে এদিন দক্ষিণ ২৪ পরগদনার রাজপুর সোনারপুর পুরসভার ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা পেশায় ভ্যান চালক পিন্টু দাসকে মৃত দেখানো হয়েছে খসড়া ভোটার তালিকায়। এ বিষয়ে পিন্টু বলেন, "আমি আর বাবা দু'জনেই ফর্ম ফিল-আপ করেছিলাম। বাবার নাম খসড়া তালিকায় উঠেছে। বুধবার সকালে পাড়ার লোকজন বলে, আমি নাকি মৃত। ব্যাপারটা প্রথমে বুঝতে পারিনি। তারপর যখন নাম বাদের তালিকা দেখি, সেখানে আমার নামের পাশে মৃত লেখা রয়েছে। কী করে এটা হল, বুঝতে পারছি না।’’
অন্যদিকে চণ্ডীতলা বিধানসভার অন্তর্গত ডানকুনির পর ফের এইজেলার উত্তরপাড়া বিধানসভার কোন্নগরে শ্যামল খাটুয়া নামে এক ভোটারকে ‘মৃত’ দেখানোর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। শ্যামল বাবু জানান, ‘‘বিএলও-র দিয়ে যাওয়া এনুমারেশন ফর্ম নির্দিষ্ট নথি দিয়ে জমা করেছিলেন । খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ হওয়ার পর জানতে পারি নাম মৃত ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে।’’
