স্টাফ রিপোর্টার: যাত্রী তোলার নাম করে দীর্ঘক্ষণ স্টপেজে বাস দাঁড় করিয়ে রাখা যাবে না। এক মিনিটের বেশি দাঁড়ালে সেই বাসকে জরিমানা করা হবে। পরিষেবা সংক্রান্ত কোনও অসুবিধা হলে যাত্রীদের অভিযোগ জানানোর জন্য প্রত্যেক বাসে রাখতে হবে রেজিস্টার্ড কমপ্লেন বক্সও। দুর্ঘটনা রোধে যাত্রীবাহী বাসের জন্য গাইডলাইন প্রকাশ করল রাজ্য সরকার। ছয় পাতার এই গাইডলাইনে চালক কন্ডাক্টরদের আচরণ থেকে শুরু করে দুর্ঘটনা ঘটলে তাদের কী করণীয়, তার যাবতীয় বিষয় লেখা রয়েছে। এই নিয়মের উদ্দেশ্য হল শহরের রাস্তায় বাসের চলাচলকে আরও সুশৃঙ্খল করা এবং বাস চালকদের অযথা জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা থেকে বিরত রাখা।
জানা গিয়েছে, চালক-কন্ডাক্টরদের ইউনিফর্ম চালু করতে চায় পরিবহণ দপ্তর। কমিশন প্রথার বিকল্প কী হতে পারে তা নিয়েও ভাবতে বলা হয়েছে মালিকদের। গাইডলাইনে আরও বলা হয়েছে, শহরের রাস্তায় আগামীদিনে টাইম টেবিল মেনে চলতে হবে। তা ছাড়া কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে সঙ্গে সঙ্গে সেই বিষয়ে চালক বা কন্ডাক্টর যাতে থানায় ফোন করে জানান সে বিষয়টিও এসওপিতে উল্লেখ করা হয়েছে। চালক ও কন্ডাক্টরদের নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁদের অতীতের কাজের অভিজ্ঞতা বা কোনও অভিযোগ রয়েছে কি না তা মালিকদের খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। এদিকে, প্রতিটি বাস চালক এবং কন্ডাক্টরদের লাইসেন্সের কপি বাসে আটকে রাখতে বলা হয়েছে, যাতে সহজেই যাত্রীদের নজরে আসে।
পাশাপাশি রিফ্রেশার কোর্সও চালক এবং কন্ডাক্টরদের করানোর কথা উল্লেখ রয়েছে গাইডলাইনের মধ্যে। সেখানে বলা হয়েছে, তিন বছর অন্তর অন্তর চালক, কন্ডাক্টরদের ৭ থেকে ১৫ দিনের রিফ্রেশার কোর্স করাতে হবে। তাতে ট্রাফিক আইন থেকে শুরু করে যাত্রীদের সঙ্গে ব্যবহার প্রভৃতি শেখানো হবে। এ বিষয়ে মালিকদের উদ্যোগী হতে বলা হয়েছে। পরিবহণ কর্মীদের শ্রম দফতরের ওয়েলফেয়ার স্কিমের আওতায় আনতে বাসমালিকদের তদারকি করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি বাসকে সুশৃঙ্খলতায় বাঁধতে বেপরোয়া গতিতে বাস চালানোর উপরও রাশ টানা হবে বলে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, রাস্তার বাঁদিক থেকে যাত্রী তুলতে হবে বাসকে। প্রত্যেক চালককে মোবাইলে রাজে্যর তৈরি একটি অ্যাপ রাখতে হবে। বাস নিয়ে বেরোনোর সময় ওই অ্যাপে ঢুকে কিউআর কোড স্ক্যান করে গাড়ি চালু করতে হবে। সেই রিপোর্ট তৎক্ষণাৎ প্রশাসন জেনে যাবে। এর পর ওই বাসের গতি ট্র্যাক করতে পারা যাবে। ওভারস্পিড হলেই সেই অ্যালার্ট পৌঁছে যাবে প্রশাসনের কাছে। এ ক্ষেত্রে যদি কোনও বাস চালক নিয়ম অমান্য করেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।
এই বিষয়ে পরিবহণ দপ্তরের কর্তারা জানান, নতুন নিয়ম চালু হলে বেপরোয়া বাস-মিনিবাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সহজ হবে। এছাড়া গাড়িতে রাখতে হবে ফার্স্ট এড বক্স। দুর্ঘটনা ঘটলে সে ক্ষেত্রেও চালক এবং কন্ডাক্টরদের কী করণীয় তা বিশদে গাইডলাইনে লেখা রয়েছে। বাস-মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পথ নিরাপত্তা বাড়াতে মানুষকে সচেতন করতে আমরা একাধিক ক্যাম্প করছি। সরকারের পাশে এ বিষয়ে আমরা সব সময় আছি।’’ একই কথা বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসুরও। তিনিও জানান, যতটা সম্ভব চালক এবং কন্ডাক্টরদের প্রশিক্ষিত করার চেষ্টা করা হবে। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত।