অর্ণব আইচ: শিক্ষক নিয়োগ বা দমকলে নিয়োগ দুর্নীতি কোন ছাড়! টাকার বিনিময়ে ডব্লুবিসিএস (WBCS) পরীক্ষা পাশ করিয়ে রাজ্যের পদস্থ আমলার পদ পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়েছিলেন তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা (Tapas Saha)! এমনই অভিযোগ উঠে এসেছে তাপসবাবু ও তাঁর প্রাক্তন আপ্তসহায়ক প্রবীর কয়ালের বিরুদ্ধে। রাজ্য পুলিশের দুর্নীতিদমন শাখা প্রবীর কয়ালের কাছ থেকে এই ব্যাপারে নথিও উদ্ধার করে। সেই নথি খতিয়ে দেখছে সিবিআই (CBI)।
সিবিআই সূত্রে জানা যাচ্ছে, শিক্ষক ও অশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি ছাড়াও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগের জন্যও টাকা নেওয়া হয়েছিল। এমনই অভিযোগ উঠেছিল তেহট্টের বিধায়ক (TMC MLA) তাপস সাহা ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। এই ব্যাপারে আগেই রাজ্য পুলিশের হাতে এসে পৌঁছেছিল নথি। অভিযোগ উঠেছে, নদিয়া ও আশপাশের জেলা থেকে প্রাথমিক শিক্ষক, নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষক নিয়োগের জন্য টাকা নেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও দমকল ও স্বাস্থ্য দপ্তরে বিভিন্ন পদের নিয়োগের জন্যও টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। রাজ্যের আবগারি দপ্তরে নিয়োগের নথি উদ্ধার করা হয় বিধায়ক তাপস সাহার প্রাক্তন আপ্তসহায়ক প্রবীর কয়ালের কাছ থেকে। প্রবীরের হাওড়ার (Howrah) শ্যামপুরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করা হয় কৃষি দফতরের নথিও। এছাড়াও বিভিন্ন দপ্তর নিয়োগের জন্য বায়োডাটা উদ্ধার করেছিলেন রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা, যে নথিগুলি এখন সিবিআই পরীক্ষা করছে।
[আরও পড়ুন: জিম করতে গিয়ে উদ্দাম নাচ! অনুষ্কা-বিরাটের ভিডিও দেখে হতবাক নেটদুনিয়া]
কিন্তু নিয়োগ দুর্নীতির অনেক তথ্যকেই ছাপিয়ে গিয়েছে তেহট্টের (Tahatta) বেতাইয়ের বাসিন্দা এক ব্যক্তির বয়ান। তিনি রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দাদের জানিয়েছিলেন যে, একটি সূত্র মারফত প্রবীর কয়ালের মাধ্যমে তাঁর যোগাযোগ হয়। প্রবীর তাঁকে আশ্বাস দিয়ে বলেন যে, বিধায়ক তাপস সাহা এতটাই প্রভাবশালী যে, তিনি রাতকেও দিন করতে পারেন! তিনি ওই ব্যক্তির ভাইপোকে টাকার বিনিময়ে ডব্লুবিসিএস পাশ করিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এমনকী, পরীক্ষায় পাস করে ওই যুবক যেন ওই পদস্থ আমলা ভাল জায়গায় পোস্টিং পান, সেই ব্যবস্থাও করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
ওই ব্যক্তির দাবি, বিধায়ক তাপস সাহার নাম করেই ২০২১ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে দফায় দফায় তাঁর কাছ থেকে ২৪ লক্ষ টাকা নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১৪ লক্ষ ১০ হাজার টাকা নগদে দেওয়ার প্রমাণ মিলেছে। তৃতীয় এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে কয়েক দফায় তিনি ৯৯ হাজার টাকাও দেন। যদিও এত টাকা দেওয়ার পরও ওই ব্যক্তির ভাইপো চাকরি পাননি। তাই তিনি টাকা ফেরত চাইতে যান। তাতে প্রবীর কয়াল নিজেকে প্রভাবশালী বলে দাবি করে রীতিমতো হুমকি দেন বলে অভিযোগ। এভাবে অনেককেই প্রবীর হুমকি দেন। তাই টাকা খোয়া যাওয়ার পরও সশরীরে থানায় গিয়ে কেউ অভিযোগ জানাতে পারতেন না।
[আরও পড়ুন: কালিয়াগঞ্জের নাবালিকার দেহ টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার জের, সাসপেন্ড ৪ ASI]
এছাড়া সিবিআইয়ের হাতে আরও তথ্য, তেহট্টর ফতজপুর গ্রামের এক বাসিন্দা এক যুবক ও তেহট্টরই চাঁদেরঘাট গ্রামের বাসিন্দা এক যুবতী গত বছরের মে মাসে রাজ্য পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখাকে আলাদাভাবে মেল করে জানান যে, তাঁদের কাছ থেকে ৭ লক্ষ টাকা ও ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নেওয়া হয়। এই তথ্যগুলি সিবিআই আধিকারিকরা খতিয়ে দেখছেন।