স্টাফ রিপোর্টার: সোমবার ‘বঙ্গভঙ্গ ইস্যুতে’ তোলপাড় হল বিধানসভা। বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব আনেন রাজ্য। বাংলা ভাগের জিগির তোলার বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস বিধানসভায় প্রস্তাব আনতেই গেরুয়া শিবিরের অন্তর্দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে। আলোচনায় অংশ নিয়ে কার্শিয়াংয়ের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা যখন স্থানীয় মানুষের মন বুঝতে পাহাড়ে গণভোটের বিস্ফোরক দাবি করলেন, তখন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ‘এক পশ্চিমবঙ্গ, শ্রেষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গ’ বলে ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামলেন। এদিকে, শাসক শিবির একের পর এক উদাহরণ টেনে বুঝিয়ে দিলেন, কীভাবে বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা, জন বারলা, সৌমিত্র খাঁয়ের মতো বিজেপি নেতারা লাগাতার বাংলা ভাগের উসকানি দিয়ে চলেছেন। তবে এই আঁকচা-আঁকচির মধ্যেই বিধানসভায় পাশ হয়ে যায় এই প্রস্তাব।
এদিন বিধানসভায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব আনেন রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী এবং হেমতাবাদের বিধায়ক সত্যজিৎ বর্মন। প্রস্তাবে বলা হয়, কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি বঙ্গভঙ্গ করার সব রকম অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যা রাজ্যের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী। এই অপচেষ্টার নিন্দা করে রাজ্যে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় পশ্চিমবঙ্গকে অটুট রাখার জন্য জনগণের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে। প্রস্তাবের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, ব্রাত্য বসু, সাবিনা ইয়াসমিন, তাপস রায়, মোশারফ হোসেন।
[আরও পড়ুন: আরও সময় চাইল বিশ্বভারতী, মিউটেশনের শুনানিতে কাটল না অমর্ত্যর জমিজট]
ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘জন বারলা মানুষকে ভুল বোঝাতে শুরু করেন। পৃথক উত্তরবঙ্গের কথা বলেন। ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ির বিধায়ক, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়কও বাংলা ভাগের কথা বললেন।’’ এই সব বিধায়কদের সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নে জগদীপ ধনকড়ের প্রসঙ্গও টেনে আনেন মন্ত্রী। যদিও ধনকড়ের নাম রেকর্ড থেকে বাদ দেন স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়। ফিরহাদের পর্যবেক্ষণ, “ইংরেজ আমল থেকেই বাংলাকে ভাগ করার চক্রান্ত চলছে। রবীন্দ্রনাথকেও পথে নামতে হয়েছিল। বা়ংলাকে ভাগ করতে গিয়ে দেশকে ভাগ করল। এর পিছনেও ছিল আরএসএস। ১৯৮০ সালে পাহাড়কে অশান্ত করে বাংলাকে ভাগ করার চেষ্টা করে তার পিছনে ছিল বিজেপি। আমরা বাংলা ভাগ করতে দেব না। তাতে যদি মৃত্যুবরণ করতে হয় করব।’’ শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় ভারত-নেপাল চুক্তির প্রসঙ্গ তুলে মনে করিয়ে দেন, “দার্জিলিংয়ে নানা উপজাতি, জনজাতি আছেন। এরা নিশ্চয়ই দেশপ্রেমী। নজরুল, রবীন্দ্রনাথের, জীবনানন্দের বাংলায় আমরা রাজ্য ভাগ চাই না।” শোভনদেব আরও বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গে আগে বঞ্চনা হয়েছে। তাই তো মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসে নজর দেয় উত্তরবঙ্গের দিকে। দার্জিলিংয়ে শিল্পতালুক ঘোষণা করেছেন। উন্নতি ঘটিয়েছেন শিক্ষা, স্বাস্থ্যে। তাই আবেদন, আবার নতুন করে রাজ্যকে ভাগ করার চেষ্টা করবেন না।’’
আলোচনায় অংশ নিয়ে কার্শিয়াংয়ের বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘‘অনীত থাপা গোর্খাল্যান্ডের নাম করে ভোটে জিতেছে। গোর্খাল্যান্ডের নাম করে যারা রাজনীতি করে, সেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের জোট ছিল। গোর্খাল্যান্ডের দাবি করা এমন অনেক নেতাদের সাথে আপনাদের সুসম্পর্ক ছিল।’’ এরপরই স্থানীয় মানুষের মন বুঝতে গণভোটের বিস্ফোরক দাবি করে বসেন বিজেপি বিধায়ক! বলেন, “নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে ওখানে গণভোট করুন। দেখবেন ওখানকার মানুষ কী চান!” বিজেপির সুশীল বর্মন, নীরজ তামাং জিম্বা, দীপন বর্মন, অগ্নিমিত্রা পাল, শংকর ঘোষ উত্তরবঙ্গের মানুষের বঞ্চনার কাহিনি তুলে ধরেন। যা শুনে তৃণমূলের তাপস রায় শংকরবাবুর বিলম্বিত বোধোধয় নিয়ে খোঁচাও দেন।
[আরও পড়ুন: গড়িয়াহাটের পর পার্ক স্ট্রিট, ফের কলকাতায় উদ্ধার বিপুল টাকা]
অন্যদিকে শুভেন্দু বিধানসভায় অভিযোগ করেন, ‘‘এটা তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী এজেন্ডা। ২০২১-এ বাঙালি-অবাঙালি করে একটা অংশের ভোটকে নিতে চেয়েছে। এসএসসি কেলেঙ্কারি-সহ একাধিক দুর্নীতি ইস্যু থেকে চোখ ঘোরাতেই পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই প্রস্তাব আনা হল।” এদিন বিধানসভায় এসে অখণ্ড বাংলার পক্ষে সওয়াল করেন দিলীপ ঘোষও। বলেন, ‘‘বিজেপি কখনওই বাংলা ভাগ চায় না।’’
