ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ট্যাবের টাকা নিয়ে দেদার জালিয়াতি শিক্ষা দিয়ে গিয়েছে। রাজ্যের কৃষকদের ধান বিক্রির টাকার দিকে যাতে কেউ নজরও দিতে না পারে তার জন্য ‘সুরক্ষাবলয়’ তৈরি করল খাদ্য দপ্তর। ডায়রেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফারের মাধ্যমে রাজ্যের কৃষকদের অ্যাকাউন্টে তাঁদের ধান বিক্রির সহায়ক মূল্য পাঠানো হয়। সেই টাকা যে প্রযুক্তিতে যে পোর্টালের মাধ্যমে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছয়, তা কতটা সুরক্ষিত, সেখানে কোথাও ফাঁক রয়েছে কিনা তা খতিয়ে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সদ্য এই সংক্রান্ত নির্দেশ দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ।
এখন খরিফ মরশুম। এই মরশুমের ধান উঠেছে, তা বিক্রিও চলছে। এই সময় ছাড়া ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রবিশস্য ওঠে। বছরে এই দুই ধরনের শস্য হিসাবে খাদ্য দপ্তর সরাসরি চাষির থেকে ধান কিনে নেয়। বর্তমানে নিবন্ধীকৃত চাষির সংখ্যা ১৭ লক্ষ ৭৮ হাজার ৪২৯। সহায়ক মূল্য হিসাবে তাঁরা খাদ্য দপ্তরের কাছে কুইন্টাল প্রতি পান ২৩০০ টাকা। সরাসরি ক্রয়কেন্দ্রে চাষিরা তা বিক্রি করলে আরও বাড়তি ২০ টাকা করে পান। ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা বর্তমানে ৭০ লক্ষ মেট্রিক টন, ইতিমধ্যে ৫১ লক্ষ কেনা হয়ে গিয়েছে। চলতি মরশুমে খাদ্য দপ্তর এখনও পর্যন্ত চাষিদের থেকে কিনেছে ৫ লক্ষ ৯২ হাজার ৫৮১ মেট্রিক টন ধান। দপ্তরের দাবি, প্রত্যেক চাষির কাছে ধান বিক্রির টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছয়। এত চাষির থেকে ধান কেনার হিসাব একটি নির্দিষ্ট পোর্টালে তুলে দেওয়া হয়। তাঁদের কাছে পাঠানো টাকার হিসাবও সেই পোর্টালে নথিবদ্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যে পদ্ধতিতে সেই টাকা চাষির কাছে পৌঁছয় তা কতটা সুরক্ষিত সেই পরীক্ষাই এবার করবে খাদ্য দপ্তর।
মন্ত্রীর কথায়, “আমাদের এই ডিবিটি পদ্ধতি একেবারে সুরক্ষিত। চাষিরা এ নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকুন। তবু আগাম সতর্কতা হিসাবে আমরা নিজে থেকেই নিজেদের এই প্রক্রিয়া কতটা সুরিক্ষত তা দেখে নিতে চাইছি।” রেশন যে পদ্ধতিতে গ্রাহকদের দেওয়া হয় সেই প্রক্রিয়া আবার দপ্তরের নিজস্ব। রেশন ব্যবস্থায় শুধু গ্রাহকদের খাদ্যশস্যই দেওয়া হয়। তবে সেখান থেকেও একসময়ে আধার-তথ্য ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। দপ্তরের দাবি, এই পদ্ধতি একেবারে সুরক্ষিত। তার জন্য বিশেষ সুরক্ষা বলয় ইতিমধ্যে রয়েছে। ফলে সেই ব্যবস্থায় কোনও ফাঁক নেই বলে জানিয়েছে দপ্তর।
অন্যদিকে, চাষিদের ধান বিক্রির টাকা নানা সময় কম দেওয়া হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে এই অভিযোগ সামনে এনেছিলেন মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির বিধায়ক বায়রন বিশ্বাস। ফড়ে-রাজের অভিযোগ তোলা হয়েছিল। সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে। তাতে কোনও ফাঁকফোকর নেই বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। চাষি আর খাদ্য দপ্তরের এই ধান বিক্রির কেন্দ্রগুলির মধ্যে সরাসরি ‘ডিল’ হয়। সেখানে কোনও ফড়ে ঢুকলে তা ধরারও ব্যবস্থা আছে। সেই ব্যবস্থার মাধ্যমেই বায়রনের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়েছে। কোনওভাবে তাতে ফাঁকি ধরা পড়েনি। তবে ধান বিক্রির কেন্দ্রের বাইরে কোনও চাষির সঙ্গে কারও ‘অন্য কথা’ হয়ে থাকলে তার দায় খাদ্য দপ্তরের নয় বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।