স্টাফ রিপোর্টার: লালবাজারের সেন্ট্রাল লক আপ আর উত্তর কলকাতার বড়তলা থানার লক আপে বসে কম জ্বালাননি লোকটি। সহবন্দিদের জোর করে জাগিয়ে সারারাত ধরে শুনিয়েছিলেন ‘মোক্সা’র অশ্লীল গান। এবার জেলে যাতে রোদ্দুর রায়ের অশ্লীলতায় অন্য কোনও বন্দি প্ররোচিত না হয়, অথবা অশ্লীল বাক্য বা গান শুনে অন্য কোনও বন্দি তাঁর উপর হামলা চালিয়ে না বসে, সেদিকে গুরুত্ব দিল প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষ। তাই সেল থেকে যখন রোদ্দুর রায় বের হবেন, তখন যাতে অন্য কোনও বন্দি বাইরে না বের হন, সেরকমই নির্দেশ কারা কর্তৃপক্ষের।
দুই দফায় পুলিশ হেফাজতের শেষে ব্যাঙ্কশাল আদালতের নির্দেশে সোমবার জেল হেফাজতে পাঠানো হয় অনির্বাণ দে ওরফে ইউটিউবার রোদ্দুর রায়কে। প্রেসিডেন্সি জেলের ‘একের দশ’ সেলের ন’নম্বর ঘরে রাখা হয় তাঁকে। সোমবার জেলে ঢোকার সময় ব্যাগে করে নিজের শার্ট ও প্যান্ট নিয়েই আসেন। সেগুলি পরীক্ষার পর রোদ্দুরের নিরাপত্তার জন্যই তাঁকে আলাদা সেলে রাখা হয় বলে দাবি কারা দপ্তরের। একই সঙ্গে তাঁর বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়। রাতে তাঁর উপর ছিল কারারক্ষীদের নজর। রোদ্দুরের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে যাতে কোনও ঘাটতি না হয় ও জেলের নিয়ম মেনে যাতে তিনি সবরকম সুযোগ সুবিধা পান, সেদিকে নজর রাখেন প্রেসিডেন্সি জেলের (Presidency Jail) সুপার দেবাশিস চক্রবর্তী।
[আরও পড়ুন: ‘BJP সাংসদ হিসেবেই কাজ চালিয়ে যাব’, বাবা যশবন্ত রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার পর]
পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন গভীর রাতে লকআপে রোদ্দুরের (Roddur Roy) গানের গুঁতোয় প্রাণ আইঢাই করছিল অন্য বন্দিদের। জেলে এসে সেরকম কিছু আচরণ করেন কি না, সেদিকেও নজর রাখা হয়। কারা সূত্র জানিয়েছে, জেলে আসার পর থেকে সেলে এক লাইনও ‘মোক্সা’ গান গাননি রোদ্দুর। যদিও রোদ্দুর রায়ের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ পদ্ধতি নিয়েছেন কারা আধিকারিকরা। ‘একের দশ’ সেলের সামনে রয়েছে একটি ছোট উঠোন। দিনের বিশেষ সময়ে সেল থেকে বন্দিরা ওই উঠোনে ঘোরাঘুরি করতে পারে। জেলের নিয়ম অনুযায়ী, রোদ্দুর রায়ও ওই উঠোনে ঘোরাঘুরি করছেন। কিন্তু রোদ্দুর যখন সেল থেকে বের হচ্ছেন, তখন অন্য বন্দিদের সেল থেকে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। আবার অন্য বন্দিরা যখন সেল থেকে উঠোনে ঘোরাঘুরি করছেন, তখন রোদ্দুরকে থাকতে হচ্ছে সেলের মধ্যে। কারা আধিকারিকদের মতে, রোদ্দুর রায়ের অশ্লীল বাক্য ও গান অন্য বন্দিদের প্ররোচিত করতে না পারে ও অন্যরা তাঁর অশ্লীল কথা বা গানে প্ররোচিত হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ না করতে পারে, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। কারণ, ‘মোক্সা’ শুনে হঠাৎ যদি অন্য কোনও বন্দি রোদ্দুরের উপর হামলা চালিয়ে বসে, তবে জেলের মধ্যেই আইন ও শৃঙ্খলার সমস্যা দেখা যেতে পারে।
যে ন’নম্বর সেলের সামনে রোদ্দুর রায় রয়েছেন, তার কাছেই রয়েছে রান্নাঘর। পাশের একটি সেলে রয়েছেন এক বিদেশি বন্দি। অন্য সেলে রয়েছেন এক ফাঁসির আসামি। রোদ্দুর রায় খাওয়াদাওয়া নিয়ে কোনও সমস্যা করেননি। জেলে তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষাও হয়েছে। রক্তচাপ ও অন্য শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক। কারও সঙ্গে বেশি কথাও বলছেন না। তবে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে কাগজ ও কলম চেয়েছেন। বলেছেন, কিছু লেখালেখি করতে চান। রোদ্দুরের এই দাবি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদ্দুর রায়ের সঙ্গে তাঁর আত্মীয়স্বজন অথবা বন্ধুরা কেউ দেখা করতে চান বলে জেল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানাননি। জেলের ভিতর ফোন বুথ থেকে বন্দিরা বাইরে ফোন করতে পারেন। কিন্তু রোদ্দুর রায় ফোন করবেন বলে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত জেলে কোনও টাকা জমা দেননি। আগামী ২৭ জুন ফের তাঁকে আদালতে তোলা হবে। যদিও পাটুলি থানার একটি নতুন মামলায় রোদ্দুর রায়কে বুধবার আলিপুর আদালতে তোলা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশ।