shono
Advertisement
Golper Sera Haat

জমজমাট 'গল্পের সেরা হাত'! আবহমানের স্রোতে বাংলা গল্পের সোনার তরী খুঁজল সংবাদ প্রতিদিন

গল্পকারদের স্বীকৃতি প্রদানের মঞ্চ যেন ছিল চাঁদের হাট।
Published By: Biswadip DeyPosted: 10:35 PM Apr 03, 2025Updated: 08:44 AM Apr 04, 2025

বিশ্বদীপ দে: গল্প বাঙালির রক্তে। সেই আদ্যিকালে নিবু নিবু লণ্ঠনের আলোয় ঠাকুমা-দিদিমারা যে গল্পের ঝুলি খুলে বসতেন তা সময়কালের সরণি পেরিয়ে আজও বহমান। বঙ্কিম-রবীন্দ্রনাথের ছোঁয়ায় বাংলা সাহিত্য স্বাবলম্বী হওয়ার পর গত দেড়শো বছরে পরিবর্তনের আঁচ লেগেছে বাঙালির সেই গল্পপ্রীতির গায়েও। আজ রিলের দশ সেকেন্ডের চকিত বিনোদনকে অগ্রাহ্য করেও কি বাঙালি গল্পমুখী? উত্তরটা নেতিবাচক কেউ কেউ ভাবতেও পারেন। কিন্তু সংবাদ প্রতিদিন ডট ইন আয়োজিত 'গল্পের সেরা হাত' যেন হিমশৈলের চুড়োটুকু হয়েও দেখতে পেল এক ঝলমলে আশার আলো। এই প্রতিযোগিতায় সবশুদ্ধ গল্প জমা পড়েছিল ৩৮৮টি! অর্থাৎ কেবল শুনতে নয়, গল্প শোনাতেও আগ্রহীর সংখ্যা কম নয় এই ভাইরাল ভিডিওর যুগে। বৃহস্পতিবাসরীয় সন্ধ্যায় ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর কালচারাল রিলেশন-এর (আইসিসিআর) সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে ছিল পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। সেরার সেরা ও সেরা বারোর অন্যতম গল্পকারদের স্বীকৃতি প্রদানের সেই মঞ্চ যেন ছিল চাঁদের হাট। গুণীজন সমাগমে এক অসাধারণ সন্ধ্যা বুঝিয়ে দিয়ে গেল বাঙালি আজও গল্পতরু।

Advertisement

JIS গ্রুপ নিবেদিত সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল 'গল্পের সেরা হাত: ২০২৫'। এই আয়োজনের সহ-নিবেদনে ছিল 'ইনফিনিটি' ও 'শ্যামসুন্দর কোং জুয়েলার্স', সহযোগিতায় ছিল 'দে'জ পাবলিশিং', 'সাহিত্য সংসদ', 'তন্তুজ', 'গিটস', 'স্পাইসেস অ্যান্ড সসেজ' ও 'অরুণ সাইন'। শুরুতেই পৃথ্বীদেব ভট্টাচার্যের সরোদ অনুষ্ঠানের তারকে উঁচুতে বেঁধে দেয়। সন্ধ্যার রাগে শুরু হয়ে ক্রমে রবীন্দ্রনাথের 'নীল- অঞ্জনঘন পুঞ্জছায়ায় সমবৃত অম্বর' হয়ে তাঁর সুর এক অনন্য মুহূর্ত সৃষ্টি করল। এমন এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার এর চেয়ে ভালো অভিজ্ঞান আর কীই বা হতে পারত।

বক্তব্য রাখছেন সংবাদ প্রতিদিনের প্রধান সম্পাদক সৃঞ্জয় বোস। নিজস্ব চিত্র

এরপর একে একে বক্তব্য রাখেন মঞ্চে আসীন গুণীজনেরা। সংবাদ প্রতিদিনের প্রধান সম্পাদক সৃঞ্জয় বোস জানালেন, ''যখন সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল শুরু করেছিলাম, তখন ডিজিটাল মাধ্যমকে লোকে গুরুত্ব দিত না। লোকে বলত ডিজিটালের বাংলা কেউ পড়ে না। গভীরতা নেই। এক সময় দেখা গেল ডিজিটালের গুরুত্ব বাড়ছে।'' আর সেই জায়গায় দাঁড়িয়েই সংবাদ প্রতিদিন ডট ইনের এই উদ্যোগের গুরুত্বও তাঁর কাছে অপরিসীম। আবার আবেগেরও। কারণ পুত্র অরিঞ্জয় বোসের জীবনে এটাই প্রথম ইভেন্ট।

অন্যদিকে সাহিত্যিক ও কনসাল্টিং এডিটর কুণাল ঘোষের কথায় উঠে এল কমবয়সিদের লেখাকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি। তাঁর কথায়, ''গল্প আমাদের জীবনের প্রতি মুহূর্তে রয়েছে। গল্পকে তাই গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। কমবয়সিদের লেখাকে গুরুত্ব দিতে হবে। তাঁদের তুলে আনতে হবে।''

প্রধান অতিথি স্বপ্নময় চক্রবর্তী ও তিন বিচারক অমর মিত্র, বিনোদ ঘোষাল ও মৌমিতার কথায় উঠে এল বাঙালির লেখালেখি, তার সঙ্গে সংবাদ প্রতিদিনের সংযোগ ও 'গল্পের সেরা হাত'-এর নানা প্রসঙ্গ। যাঁরা নির্বাচিত হয়েছেন, আগামিদিনে সেই সব লেখনী থেকেই উঠে আসুক ভবিষ্যতের সেরা সাহিত্য, এমনই কথা শোনা গেল তাঁদের মুখে।

বড়দের বিভাগে প্রথম স্থানাধিকারী পার্থ সেন। নিজস্ব চিত্র

প্রসঙ্গত, এদিন মঞ্চে ছিলেন দেজ পাবলিশার্সের দুই কর্ণধার সুধাংশুশেখর দে এবং শুভঙ্কর দে, শিশুসাহিত্য সংসদের কর্ণধার দেবজ্যোতি দত্ত, সঙ্গীতশিল্পী, পরিচালক ও সংবাদ প্রতিদিনের রোববারের সম্পাদক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, সাহিত্যিক ও সংবাদ প্রতিদিনের কনসালটেন্ট এডিটর কুণাল ঘোষ এবং সংবাদ প্রতিদিনের প্রধান সম্পাদক সৃঞ্জয় বোস। সব মিলিয়ে মঞ্চ ছিল তারকাখচিত। 

অতিথিদের বক্তব্য জ্ঞাপনের পর পুরস্কৃতদের মঞ্চে ডেকে নেওয়ার পালা। বড়দের বিভাগে সেরার সেরা গল্পকারদের মধ্যে প্রথম হয়েছেন পার্থ সেন, দ্বিতীয় রামকৃষ্ণ প্রধান, যুগ্ম তৃতীয় মৌসুমী রায়, রাজীব রায় গোস্বামী। ছোটদের সেরার সেরাদের মধ্যে প্রথম ঋদ্ধিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, দ্বিতীয় সৌরাশিস ভট্টাচার্য, তৃতীয় সিঞ্চন চট্টোপাধ্যায়। যদিও ঋদ্ধিমা চোখের চিকিৎসার কারণে এদিন উপস্থিত থাকতে পারেনি।

প্রথম তিন স্থানাধিকারীরা ছাড়াও বড়দের সেরা বারোর অন্যতম শুভ্রা রায়, সহেলী রায়, সুমন সরকার, মাল্যবান মিত্র, অভিষেক ঘোষ, দেবাশিস দে, শুভজিৎ রায়, সোমা হালদার এবং ছোটদের সেরা ৫ হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়েছে সুতীর্থ ভট্টাচার্য, প্রিয়া মুখোপাধ্যায়, সৌজন্য সরদার, মণীষা দে, আরুষি মিত্রকে। সকলে এদিন উপস্থিত থাকতে পারেননি। কিন্তু প্রতিযোগিতার সমস্ত বিজয়ী ও স্বীকৃতিপ্রাপ্তরাই এদিনের সন্ধ্যায় উচ্চারিত হলেন আইসিসিআরের অডিটোরিয়ামে। এই স্বীকৃতি, সমসময়ের অক্ষরশিল্পের সেরা উদযাপন বুঝিয়ে দিয়ে গেল, সাদা পাতা হোক বা সাদা স্ক্রিন... বাঙালির গল্প বাঁধায় আজও বিরাম নেই। ডিজিটালের যান্ত্রিকতা কল্পনার উড়ানকে রুখতে পারেনি। যুগের হুজুগে মেতেও গল্পের পৃথিবীতে বেঁচে থাকুক গল্প-মৌতাত। বসন্তের এই সন্ধ্যায় যেন সেই প্রার্থনাই বাঙ্ময় হয়ে উঠল বারে বারে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বৃহস্পতিবাসরীয় সন্ধ্যায় ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর কালচারাল রিলেশন-এর (আইসিসিআর) সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়ামে ছিল 'গল্পের সেরা হাত' পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান।
  • সেরার সেরা ও সেরা বারোর অন্যতম গল্পকারদের স্বীকৃতি প্রদানের সেই মঞ্চ যেন ছিল চাঁদের হাট।
  • গুণীজন সমাগমে এক অসাধারণ সন্ধ্যা বুঝিয়ে দিয়ে গেল বাঙালি আজও গল্পতরু।
Advertisement