অর্ণব আইচ: বৃষ্টিভেজা রাতে একই ঘরে ঘুমোচ্ছিলেন সকলে। পাশে ছিল তিন বছরের একরত্তি মেয়ে। মা গঙ্গা ঘোড়ুইয়ের গর্ভে বাড়ছিল আরও একটি প্রাণ। ভেবেছিলেন আর তো কয়েকদিন। তারপরই বছর তিনেকের শিশুই হয়ে উঠবে বড় দিদি। দুই সন্তানকে নিয়ে ভরে উঠবে তাঁর সংসার। ভোররাতের বিপর্যয় বদলে গেল সব কিছু। হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ গেল তিন বছরের শিশু কন্যার। সন্তানহারা বাবা-মায়ের বুক ফেটে যাচ্ছিল যন্ত্রণায়। প্রসবযন্ত্রণায় কষ্ট পেলেও শোকসন্তপ্ত মা হাসপাতালে যেতে চাননি। বলতে গেলে জোর করেই হাসপাতালে যেতে বাধ্য করা হয়েছিল তাঁকে। বড় মেয়ের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আহিরীটোলার বধূর কোল আলো করে এল দ্বিতীয় সন্তান।
সন্তানকে আগলে রাখতে চান সব মা-ই। আহিরীটোলার (Ahiritola) ১০ নম্বর স্ট্রিটের গঙ্গা ঘোড়ুইও তার ব্যতিক্রম নন। ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েও কোলের সন্তানকে নিয়ে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। কংক্রিটের ভিড়ে খুঁজে পাননি সন্তানকে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীদের তৎপরতায় আগেই বেরিয়ে আসেন গঙ্গা। অন্তঃসত্ত্বা গঙ্গাকে উদ্ধার করতে পেরে উদ্ধারকারীরা স্বস্তি পেয়েছিলেন। তবে মায়ের মনে তখন ঝড় বইছে। অ্যাম্বুল্যান্সে উঠতে চাননি। কার্যত জোর করেই তাঁকে তোলা হয় অ্যাম্বুল্যান্সে। নিয়ে যাওয়া হয় আর জি কর হাসপাতালে।
[আরও পড়ুন: ‘উপরওয়ালার সঙ্গে যৌন মিলনে স্বর্গীয় সুখ পেয়েছি’, আজব দাবি মহিলার]
সন্তান ঠিক আছে তো, এই চিন্তাই বারবার কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল গঙ্গাকে। এদিকে, তখনও খুদেকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। সাত ঘণ্টার চেষ্টায় অবশেষে উদ্ধার করা হয় ছোট্ট মেয়েটিকে। হাসপাতালের লেবার রুমে ঢোকার সময় সেকথা জানানো হয়েছিল গৃহবধূকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই দ্বিতীয়বার কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। ততক্ষণে বড় মেয়েকে হারিয়েছেন গঙ্গা। সেই খবরও জানতে পারেন তিনি।
নবজাতককে বুকে জড়িয়ে আনন্দ করবেন নাকি প্রথম সন্তানের মৃত্যুতে বুক ফাটা কান্নায় ভেঙে পড়বেন, সে বোধশক্তিও ততক্ষণে হারিয়েছেন গৃহবধূ। বাকরুদ্ধ তিনি। আনন্দ-দুঃখের অনুভূতিটাই তিনি হারিয়ে ফেলেছেন। সন্তানের মৃত্যুর দিনে আরেক সন্তানের বাবা হওয়ার পর চোখের জলে ভাসছেন গঙ্গার স্বামী সুশান্তও।
দেখুন ভিডিও: