গৌতম ব্রহ্ম: হরমোন বেরনোর গ্রন্থিতে টিউমার। তাও আবার অগ্ন্যাশয়ের মতো জটিল অঙ্গে। পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত্রের একটা অংশেও থাবা বসিয়েছিল সেই প্রাণঘাতী টিউমার। এক লাখে ২০-২৫ জনের এই রোগ হয়। এতটাই বিরল। অপারেশন করে চারটি অঙ্গের কিছু কিছু অংশ ফেলে দিয়ে আবার রিকনস্ট্রাকশন করতে হয়। আট ঘণ্টার ম্যারাথন অস্ত্রোপচার। ডাক্তার চাইলেও ২০ শতাংশ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার বিফল হয়। অপারেশনের জায়গায় ফিশচুলা হয়। হরমোন লিক করে আশপাশের অঙ্গ প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে ফেলে। ফলাফল, রোগীর মৃত্যু। কিন্তু নতুন এক কৌশল ব্যবহার করে প্যানক্রিয়াটিকো ডিওডেনেক্টমি হওয়া তিন রোগীর ফিশচুলাকে সারিয়ে পুনর্জীবন দিল এন আর এস মেডিক্যালের সার্জনরা। গড়লেন বিরল নজির। এতটাই বিরল যে ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ সার্জারিতে প্রকাশ করা হল নতুন পদ্ধতির এই অস্ত্রোপচার। সার্জনদের আশা, NRS-এর সার্জনদের উদ্ভাবিত এন্ডোক্রাইন টিউমার অপারেশনের এই কৌশল নতুন দিশা দেখাবে। এই জাতীয় রোগে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যু হার কমাবে।
[আরও পড়ুন: আত্মহত্যা নাকি খুন? Divorce Case চলাকালীন গলফ গ্রিনে ফ্ল্যাট থেকে মহিলার দেহ উদ্ধারে রহস্য]
মোট তিনটি রোগীকে এই নতুন পদ্ধতিতে অপারেশন করা হয়েছে। দু’জন মহিলা। একজনের বাড়ি হাওড়ায়। বয়স ৬৬ বছর। অন্যজনের রাজারহাট। বয়স ৪২ বছর। দু’জনই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এই মুহূর্তে হাসপাতালে রয়েছেন একজন রফিকুল মণ্ডল। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরবাজারের রমাকান্ত নগরে। এক বছর ধরেই রফিকুল জন্ডিসের সমস্যায় ভুগছিলেন। রফিকুলের অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন নির্গত হওয়ার গ্রন্থিতে টিউমার বাসা বেধেছিল। ক্রমশ আকারে বাড়ছিল। ৩১ মে রফিকুলকে ভরতি করা হয় অধ্যাপক ডা. উৎপলদের টিমের অধীনে। ৯ জুন অস্ত্রোপচার হয়। সার্জনরা রোগীর পাকস্থলি, ক্ষুদ্রান্ত্র, অগ্ন্যাশয়ের একটা অংশ কেটে বাদ দিয়ে রিকনট্রাকশন করেন। পুরোপুরি বাদ দেন পিত্তাশয় ও পিত্তথলি। কিন্তু বেশিরভাগ রোগীর মতো রফিকুলেরও ফিশচুলা হয়। অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হরমোন গিলে খাচ্ছিল আশপাশের অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে। বাধ্য হয়েই ফিশচুলা সারানোর জন্যে ফের অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন উৎপল বাবুরা।
হাসপাতালে মজুত নেগেটিভ প্রেসার তৈরি করার যন্ত্র দিয়ে ভ্যাকিউম অ্যাসিস্টেড ড্রেনেজ ক্লোজার অপারেশন হয় রফিকুলের। প্রায় কুড়ি দিন এই যন্ত্র রোগীর পেটে লাগিয়ে রাখা হয়। ওই কদিন পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হয় রোগীকে। একটা সময় ফিশচুলা সেরে যায়। বিপন্মুক্ত হয় রোগী। দু-একদিনের মধ্যেই রফিকুলকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এই অস্ত্রোপচারে উৎপালবাবুর সঙ্গী হয়েছেন তিনজন পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনি। ডা. সুচেতা সরকার, ডা. রিয়া আগরওয়াল, ডা. ভাস্কর বড়াই ও ডা. কেকা পাণ্ডে। সহযোগিতা করেছেন ডা. সোমদেব শীল।