শম্পালী মৌলিক: সদ্য জন্মদিন (২১ মে) গেল অভিনেত্রী কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তবে বার্থ ডে পার্টি দিয়েছেন সপ্তাহ খানেক আগেই। আগাম উদযাপন কেন? জিজ্ঞেস করতেই স্পষ্ট বললেন, “কারণ আমাদের বেড়াতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মায়ের অসুস্থতার জন্য যাওয়া ক্যানসেল করি। কিন্তু ওই পার্টির দিনটা আগে থেকেই স্থির করা ছিল। প্রত্যেককে সময়টা খালি রাখতে বলেছিলাম। তাই দিনটা পাল্টাইনি। অনেকেই জিজ্ঞেস করেছে, ‘তাহলে কেন পার্টি দিলি?’ উত্তরটা হল, "শেষ চারটে বছর জীবনে যা যাচ্ছে, এই জন্মদিন আমাকে শেখাল জীবন এভাবেই চলবে। সমস্ত সমস্যা, লড়াইয়ের মধ্যেও আমাকে হাসতে হবে। এবং এগিয়ে যেতে হবে। যেদিন পার্টি দিয়েছিলাম, মাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছিল। আমি বিশ্বাস করি, ইউনিভার্স আমাকে প্রত্যেক মুহূর্তে শক্তিশালী করে তুলছে। আরও একটা কথা যোগ করতে চাই, আমার বাবা-মা কোনওদিন আমাকে মেয়ে হিসাবে মানুষ করেননি। এই যে বলা হয়, মেয়েদের ভাই না থাকলে মা-বাবাকে দেখার কেউ নেই, এটা কিন্তু ঠিক নয়। প্রত্যেক বাবা-মায়ের সেলিব্রেট করা উচিত একটি মেয়ের জন্ম হলে।”
কিছুদিন আগে কনীনিকা অভিনীত ‘এটা আমাদের গল্প’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছিল, তার ২৫ দিন পূর্ণ হয়েছে সদ্য। ছবিটা মানুষ হইহই করে দেখেছে। মানসী সিনহা পরিচালিত প্রথম ছবিতেঅপরাজিতা আঢ্য, শাশ্বত চট্টোপাধ্যায় মুখ্য চরিত্রে। আর কনীনিকা তো রয়েইছেন। তবে প্রচারের সময় তাঁকে সেভাবে দেখা যায়নি কেন? অভিনেত্রী বললেন, “প্রথমত, মায়ের অসুস্থতার কারণে দু-একবার যাইনি। তারপর ভুলেও গিয়েছিলাম। তবে এই ২৫ দিনের সেলিব্রেশনে গিয়েছিলাম। মানসীদির জন্য খুব খুশি কারণ, ওর শেষ কয়েক বছরের লড়াই আমি দেখেছি। সবসময় বলতাম, যে করে হোক ছবিটা রিলিজ করাও। আর আমরা প্রত্যেকে খুব আনন্দ করে কাজটা করেছিলাম। আমি চেয়েছিলাম, ছবিটা একটা জায়গায় যাক। এত বড় জায়গায় পৌঁছবে, এটা বোধহয় আমরা কেউই ভাবিনি। মানসীদির কাছে স্বপ্নপূরণের মতো হল।”
সৌরভ চক্রবর্তী পরিচালত 'রাজনীতি' সিরিজের দ্বিতীয় সিজন ‘আবার রাজনীতি’ মুক্তি পেল শুক্রবার। ‘মল্লিকা’ আপনার চরিত্র, আগেরবারও মানুষের মন কেড়েছে। এবারে কতটা আশাবাদী? আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কনীনিকা বলছেন, “প্রচণ্ড আশাবাদী আমি সিরিজটা নিয়ে। এই মুহূর্তে সমস্ত অন্ধকার, খারাপ সময়ের মধ্যেও ‘আবার রাজনীতি’-ই আমার আশার আলো। বলতে পারো সমুদ্রে সাঁতার কাটছি আর দূরে ‘রাজনীতি’র আলোটাই একমাত্র দেখতে পাচ্ছি। ২৪ মে আমার জীবনে বড় দিন, সিরিজটা আসবে। রাজনীতির কাজটা খুব মন দিয়ে করেছি। খুব ভালো একটা চরিত্রে আমাকে কাস্ট করেছে। আমাকে সবাই বলছে মল্লিকা খলনায়িকা। আমি বলব, চরিত্রটা ধূসর। কোনও মানুষই কি সাদা-কালো হয়? কেউ-ই হয় না। আমি নিজেও নই। অনেক সময়েই ভিতরের বাজে কনী বেরিয়ে আসে। এই চরিত্রে আমার পারফরম্যান্স মানুষের ভালো লাগবে, আশা করি। অনেকদিন বাদে ভালো অভিনয় করার একটা জায়গা পেয়েছি।” আপনি কম দিন তো নেই টলিউডে, এতগুলো বছরে কি ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতি বুঝে উঠতে পারলেন? অভিনেত্রী হেসে বললেন- ‘হ্যাঁ, কিন্তু রাজনীতিটা করতে পারলাম না। আমাকে একজন অ্যাস্ট্রোলজার বলেছিলেন, তুমি তো ভালো অভিনয় করো, বাস্তব জীবনে অভিনয়টা শুরু করো। ওইটা আমার দ্বারা হয় না। তবে ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতি না করলে ভালো কাজ পাওয়া মুশকিল। টিকে যাবে, যেমন আমি গেছি। কিন্তু ইন্ডাস্ট্রির রাজনীতি জেনে, সেটা অনুশীলন করা দরকার।"
[আরও পড়ুন: ‘নিজের বাড়িতেই হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে…!’, বিস্ফোরক সোহিনী]
রিয়েল লাইফে অনেক অভিনেতাই এখন রাজনীতিতে। বিশেষ করে আপনার সহ-অভিনেতা দেবের কথা বলব। যাঁর সঙ্গে আপনি সাম্প্রতিক কালে কাজ করছেন। বাস্তবে রাজনীতির প্রাঙ্গণে ডাক এসেছে? অভিনেত্রী বলছেন, ‘আমি দেবকে খুব কাছ থেকে দেখেছি, চিনেছি। এইটুকু বলব, একটা বাচ্চা ছেলে ছিল, এখন মানুষের সম্পর্কে যেভাবে ভাবে, এবং মাটির মানুষ দেব। এবং ও মানুষ-ধর্ম করে। অনেকদিন ধরে চিনি বলেই বলছি। সত্যি যদি ও মানুষ-ধর্ম পালন করে যেতে পারে, আমি বলব, ও লড়ে যাচ্ছে। এখন রীতিমতো পড়াশোনা করে সাক্ষাৎকারে বসে। আর ডাকের প্রসঙ্গে বলি– হ্যাঁ, আমাকে সবাই ডেকেছে। কিন্তু আমি রাজনীতিতে যেতে চাই না। কারণ আমার নিজের বক্তব্য থাকবে। শেখানো বুলি বলতে পারি না। সোজা কথা স্পষ্ট বলে ফেলি যে। রাজনীতি করতে গেলে জানতে হবে, কোথায় কীভাবে বলতে হবে, কী করতে হবে। এটা অন্য ধরনের কাজ। গ্ল্যামার আছে বলে দাঁড়িয়ে পড়লাম মানুষের পাশে, কিন্তু সেটা দুদিন চলে। কাজ করতে হবে, মানুষের চাহিদা বুঝতে হবে। যারা দাঁড়াচ্ছে তারা আস্তে আস্তে গ্রুমড হয়ে যাবে, এমনটাই আমার বিশ্বাস। এত বড় দায়িত্ব নিলে, পিছনে ফেরা যায় না, আমার মনে হয়।”