বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: লোকসভা ভোট এগিয়ে আসতে রাজবংশী তথা কামতাপুরী ভোটব্যাঙ্কে বিভাজন স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। সম্মুখ সমরে কামতাপুর পিপলস পার্টি (কেপিপি) এবং গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন (অমলচন্দ্র দাস গোষ্ঠী)। কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টির (কেপিপি) একটি অংশ তৃণমূলের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। গ্রেটার কোচবিহারের অন্য একটি অংশ অনন্ত মহারাজের হাত ধরে বিজেপির হয়ে প্রচারে উত্তরের বিভিন্ন আসনে। ওই পরিস্থিতিতে রাজবংশী ভোট বিভাজনে লাভবান হবে কে, লোকসান হতে পারে কোন শিবিরের আলোচনা শুরু রাজনৈতিক মহলে।
অস্বস্তিকর পরিস্থিতির কথা স্বীকার করেছেন ‘ইউনাইটেড ফোরাম ফর সেপারেট স্টেট’-এর মুখপাত্র নিখিল রায়। তিনি বলেন, “শেষ পর্যন্ত ভোট বিভাজনের দিকেই পরিস্থিতি এগোচ্ছে। এটা মোটেও কামতাপুরী রাজ্য ও ভাষার দাবিতে চলা আন্দোলনের পক্ষে শুভ নয়।” কার্যত ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই পালটাতে শুরু করেছে রাজবংশী তথা কামতাপুরী, আদিবাসী এবং গোর্খা ভোটের সমীকরণ। যদিও পৃথক রাজ্যের দাবিতে যৌথ আন্দোলন এবং উত্তরের পাহাড়-সমতলে ভোট বিভাজন ঠেকাতে মূলত কেপিপির উদ্যোগে কয়েক মাস আগে তৈরি হয়েছিল ‘ইউনাইটেড ফোরাম ফর সেপারেট স্টেট’ নামে মঞ্চ। সেখানে সদস্য রয়েছে কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টি, গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন, বীর বিরসা মুন্ডা ইল উলগান, ভূমিপুত্র কো-অর্ডিনেশন পার্টি এবং বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।
[আরও পড়ুন: হিমাচলে নতুন ‘খেলা’, বিজেপিতে যোগ কংগ্রেসের ৬ বহিষ্কৃত বিধায়কের, পদত্যাগ ৩ নির্দলেরও]
বলা হয়েছিল, লোকসভা নির্বাচনে মঞ্চের তরফে প্রতিটি আসনে একজন প্রার্থী দেওয়া হবে। পাহাড়ে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সুপ্রিমো বিমল গুরুং বেসুরো হয়ে বিজেপির পক্ষে সওয়াল করতে শুরুতেই ইউনাইটেড ফোরাম ফর সেপারেট স্টেটের পরিকল্পনা ধাক্কা খায়। এর পর কামতাপুর প্রোগ্রেসিভ পার্টির একটি অংশ তৃণমূলের পক্ষে কথা বলতে শুরু করলে রাজনৈতিক মহলে ফোরাম ফর সেপারেট স্টেটের অস্তিত্ব নিয়েই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। ওই পরিস্থিতিতে কামতাপুর পিপলস পার্টি (কেপিপি) একক শক্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা ঘোষণা করে প্রথম দফায় চারটি আসনে প্রার্থী দেয়। ওই রেশ না-কাটতে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন কোচবিহার লোকসভা আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা জানায়। গোষ্ঠীর কর্ণধার অমলচন্দ্র দাস নিজেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ওই আসনে কামতাপুর পিপলস পার্টির (কেপিপি) প্রার্থী রয়েছে।
স্বভাবতই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, পদ্ম শিবির কি গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের বংশীবদনের গোষ্ঠীর ভোট কাটতে অমলচন্দ্র দাস গোষ্ঠীকে তুরুপের তাস করেছে! এমন প্রশ্নের কারণ, বংশীবদনের গোষ্ঠী থেকে বেরিয়ে অমলবাবুদের নতুন গোষ্ঠীর জন্ম। বংশীবদনবাবু এখন রাজ্য সরকারের পক্ষে আছেন। কার্যত পরিস্থিতি এখন এমনই যে উত্তরের আটটি লোকসভা আসনে রাজবংশী তথা কামতাপুরী ভোট কত ভাগে ভাগ হতে পারে সেটাই বড় প্রশ্ন হয়েছে রাজনৈতিক মহলের। যদিও বিভাজনের সমীকরণের ফাঁক গলেই বিজেপি এবং তৃণমূল দু’পক্ষ ওই ভোট টানতে মরিয়া।