shono
Advertisement

Breaking News

রাজনীতিতে অনীহা বর্তমান প্রজন্মের, ভোটের আবহে নিরুত্তাপ কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি

রাজবাড়ির বর্তমান প্রজন্মের সকলেই কলকাতার ভোটার৷ The post রাজনীতিতে অনীহা বর্তমান প্রজন্মের, ভোটের আবহে নিরুত্তাপ কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 06:30 PM Apr 28, 2019Updated: 06:30 PM Apr 28, 2019

পলাশ পাত্র, তেহট্ট: রাত পোহালেই কৃষ্ণনগরে ভোট উৎসব৷ কিন্তু রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের বাড়িতে তার লেশমাত্র ছোঁয়া নেই৷ রাজবাড়ির উত্তরসূরীরা সকলেই কলকাতার বাসিন্দা৷ সেখানকার ভোটার৷ তাই এখানে ভোট উত্তাপের কোনও বাড়তি আঁচ নেই৷

Advertisement

রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় শাক্ত উপাসক ছিলেন। রাজবাড়িত আজও জ্বলজ্বল করে ‘শ্রী শ্রী কালি জয়তি’। বুদ্ধিমান কৃষ্ণচন্দ্র শাসন ব্যবস্থাকে মসৃণ করতে শাক্ত ও বৈষ্ণবকে একসারিতে এনেছিলেন। শুধু কৃষ্ণচন্দ্র নন, এই বংশের অন্যতম পুরুষ ভবানন্দ মজুমদারের উত্তরসূরীরাও কৃষ্ণনগরে থেকে দক্ষতার সঙ্গে রাজ্যপাট সামলেছেন। একদা অঙ্গ-বঙ্গ-কলিঙ্গের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠা সেই রাজতন্ত্রের চারণভূমি রেউই গ্রামে অবশ্য ভোট ভোট হাওয়া ভালই বইছে৷ ১৬৮৫ সালে রাজা রুদ্র রায় রেউই গ্রামের নাম দেন – কৃষ্ণনগর৷ প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষে রাজনীতির কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল রাজবাড়িগুলি৷ কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি থেকে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ও তেমনি শাক্ত-বৈষ্ণবের মেলবন্ধন ঘটিয়ে দীর্ঘ সময় রাজত্ব করেছেন। নহবতখানা, বিষ্ণুমহল, নাটমন্দির, নীলকণ্ঠ পাখি, রাজরাজেশ্বরী, গোপীনাথে আজও বুঁদ কৃষ্ণনগরের বাসিন্দারা। গাঁ-গঞ্জ থেকে এ শহরের অলিগলির পরতে পরতে রাজবাড়িকেন্দ্রিক উপাখ্যান৷ স্বাভাবিকভাবেই কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রের ভোটে রাজবাড়ির অবস্থান নিয়ে আলোচনা হবেই।

[আরও পড়ুন : ভোটের ব্যস্ততা সামলে সুগৃহিণীর মতো ব্যাগ হাতে বাজারে লকেট]

একসময় রানির মান ভাঙাতে বৈশাখের প্রবল গরমে বারোদোল মেলা চালু করেছিলেন রাজা৷ সেসব পেরিয়ে রাজবাড়ির অন্দরেই ঢুঁ মারলাম। রাজবাড়ির বর্তমান বংশধর সৌমিশ্চন্দ্র রায়ের সঙ্গে কথায় কথায় উঠে এল এই শহরের আটের দশকের কথা। এখানে যে একসময় রাজনীতির টানাপোড়েন ছিল, তা অস্বীকার করার উপায় নেই৷ কিন্তু তার আঁচ রাজবাড়িতে পড়লে অবশ্যই একটা আলোচ্য বিষয়। একটা চরম রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকেই কৃষ্ণনগরের ভোটার সৌমিশ্চন্দ্ররা বাধ্য হয়ে দক্ষিণ কলকাতার ভোটার হয়ে গেলেন। সৌমিশবাবুর ছেলে মণীশচন্দ্র বলেন, রাজনৈতিক সংকটই পরিবারের সকলকে কৃষ্ণনগর থেকে কলকাতায় চলে যেতে বাধ্য করে৷ 

[আরও পড়ুন : সাজানো নৌকা নিয়ে ইছামতীতে নজরকাড়া প্রচার বনগাঁর কংগ্রেস প্রার্থীর]

আলাপচারিতায় একে একে উঠে আসে নরেন্দ্র মোদি, রাহুল গান্ধী, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র, কল্যাণ চৌবে থেকে আরও নাম৷ আজকের রাজনীতির কচকচানি৷ দমবন্ধ একটা পরিবেশ৷ আচমকাই পট বদল৷ ঝোড়া হাওয়ায় মোটা দেওয়াল, মেহগনি কাঠের দরজা ভেদ করে ঝাড়বাতি ছুঁয়ে যায়। একটা মন ভাল করা বাতাসের পথ ধরে চোখ চলে যায় বিষ্ণুমহলের ছোট, বড় একাধিক পানের ডিবেতে। হাসতে হাসতে সৌমিশ্চন্দ্র বলেন, ‘এগুলো একসময় ফিল্মে ব্যবহার হয়েছে। বিখ্যাত পরিচালক মুজাফর আলি, সত্যজিৎ রায়ও এ’বাড়ির সোনার গয়না, জিনিসপত্র ব্যবহার করেছেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় এ বাড়িতে এসেছেন। রাজার শয্যা, শিকার করা বাঘের ছাল, বিদেশ থেকে আসা খাদ্যে বিষক্রিয়া হলে পরীক্ষার পাত্র, সেই আমলের টাইপ রাইটার, বড় বড় ঝাড়বাতিতে – হারিয়ে যাচ্ছিলাম। ঝুপ করে  মোক্ষম প্রশ্নটা ছুঁড়ে দিই। রাজবাড়িতে ভোটের আঁচ নেই কেন? সৌমিশ্চন্দ্র বলেন, ‘রাজবাড়ি রাজনীতির উর্ধ্বে। যাঁরা ভোটে দাঁড়িয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে শুভেচ্ছা। মানুষ রাজবাড়িকে সম্মানের চোখে দেখে। কোন দলের সমর্থনে বলা মানে নদিয়ার মানুষকে অপমান করা হয়।’

[আরও পড়ুন : তৃণমূল কর্মীদের গাছে বেঁধে পেটানোর নিদান, বিতর্কে তমলুকের বিজেপি প্রার্থী]

রাজবাড়ির এই প্রজন্মের গৃহকর্তা সৌমিশ্চন্দ্র, গৃহকর্ত্রী অমৃতা দেবী, ছেলে মণীশচন্দ্ররা নিয়মিত রাজবাড়িতে আসেন। রাজরাজেশ্বরী, জগদ্ধাত্রী, বারোদোল সহ একাধিক পুজো- পার্বণ পালন করেন। তাই সন্ধ্যা নামতেই কুলদেবতার পুজোর ধূপ-ধুনোর সুগন্ধ পাওয়া যায়৷ অমৃতা দেবী জানান, ‘ভোট নিয়ে আমাদের কোনও উন্মাদনা নেই। মনে রাখবেন, কৃষ্ণনগর প্রাচীন ঐতিহ্যের ভূমি। সেটাকে মর্যাদা দিয়ে যিনিই জিতুন, কৃষ্ণনগরকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন, সেটাই চাই।’

The post রাজনীতিতে অনীহা বর্তমান প্রজন্মের, ভোটের আবহে নিরুত্তাপ কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement