সুমিত বিশ্বাস ও সুব্রত বিশ্বাস: আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত করার দাবিতে চতুর্থ দিনে পড়ল কুড়মি সম্প্রদায়ের আন্দোলন। রীতিমতো উৎসবের মেজাজে পুরুলিয়ার (Purulia) কুশতাঁড়, ঝাড়গ্রামের (Jhargram) খেমাশুলি রেল স্টেশনে অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। রেললাইনে বসেই ছোলা-মুড়ি খাওয়া, স্টেশনে ধামসা-মাদল বাজিয়ে নাচগান চলছে পুরোদমে। তাঁদের সাফ বার্তা, অবরোধ তোলার প্রশ্নই নেই। এদিকে, কুড়মিদের (Kurmi) এই অবরোধের জেরে আদ্রা, খড়গপুর-সহ একাধিক ডিভিশনে বহু ট্রেন বাতিল হয়েছে। তাতে যাত্রীরা তো মহা সমস্যায় পড়েছেনই, রেলের প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে বলে খবর। সবমিলিয়ে কুড়মিদের এই আন্দোলন ঘিরে জটিলতা ক্রমশই বাড়ছে।
রেল স্টেশনের চেহারাই যেন বদলে গিয়েছে। রেলট্র্যাকের পাশে তাঁবু, স্টেশনে রান্নাবান্না, নাচগান, ধামসা-মাদল। ট্র্যাকের উপর কখনও বসে, কখন শুয়ে আন্দোলনে পথ সচল রেখেছেন পুরুলিয়ার কুড়মি সম্প্রদায়ের মানুষজন। নিজেদের দাবি আদায়ে এবার তাঁরা মরিয়া। এই আন্দোলন বৃহত্তর স্বার্থে আঘাত হানতে না পারলে, অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না, তা স্পষ্টই বুঝেছেন কুড়মিরা। আর তাই একেবারে প্রস্তুত হয়ে একটানা অবরোধের রাস্তা বেছে নিয়েছেন। রেল, সড়ক কার্যত স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।
[আরও পড়ুন: গরু পাচার মামলায় এবার CID’র স্ক্যানারে এনামুলের ৩ ভাগ্নে, জারি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা]
এই আন্দোলনের ব্যাপকতা বুঝে পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দপ্তরের তরফে আন্দোলনকারীদের শুক্রবার বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব এককথায় উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। আলোচনায় বসা কিংবা অবরোধ তোলার কথা ভাবাইঅ হচ্ছে না, জানালেন কুড়মি সমাজের প্রধান, আন্দোলনের নেতা অজিত প্রসাদ মাহাতো। তাঁর একটাই বক্তব্য, ”কেন্দ্র যে রাজ্যের কাছে টিআরআই রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে, তা কি রাজ্য সরকার পাঠিয়েছে? যদি পাঠিয়ে থাকে, তাহলে তার প্রতিলিপি দেখাক আমাদের। ওই রিপোর্ট না পেলে আন্দোলনে ইতি টানার প্রশ্ন নেই।”
এদিকে, কুড়মি সম্প্রদায়ের এই আন্দোলন যে সহজে মিটবে না, তা টের পেয়েছে রেল। বৃহস্পতিবার রাতেই ফের ২১টি ট্রেন বাতিল ও ছ’টি ট্রেন ঘুরপথে চালানোর কথা আগাম জানিয়ে দেওয়া হয়। শুক্রবার সকাল থেকে ট্রেন বাতিলের পাশাপাশি বেশ কিছু দেন হাওড়া, সাঁতরাগাছি, খড়গপুর থেকে রওনা হয়ে আদ্রা পর্যন্ত যাচ্ছে। আদ্রা ডিভিশন সূত্রে খবর, অবরোধের প্রথম দিন ২২টি, দ্বিতীয় দিন ৬২টি, তৃতীয় দিন ১১১ টি ট্রেন বাতিল হয়েছে।
[আরও পড়ুন: বোর্ড নির্বাচন ১৮ অক্টোবর, সেদিনই নির্ধারিত হবে সৌরভের ভবিষ্যৎ]
পুরুলিয়ার মতো ঝাড়গ্রামের খেমাশুলিতেও আদিবাসী জনজাতি কুড়মি সমাজের পক্ষ থেকে রেল ও পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। টানা রেল অবরোধের ফলে ৭ লক্ষ যাত্রী টিকিট কেটেও যেতে পারেননি। রেলের ক্ষতি চব্বিশ কোটি টাকার বেশি। আরেকদিকে, ৬ নম্বর জাতীয় সড়কে হাজার হাজার ট্রাক, পণ্যবাহী লরি-সহ বহু গাড়ি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এবং ওই গাড়িতে থাকা কাঁচামাল, সবজি, ফল সমস্ত কিছু নষ্ট হচ্ছে। কোটি কোটি টাকার জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে।