সুকুমার সরকার, ঢাকা: দৈব-দুর্বিপাক বা নাশকতা নয়, বকেয়া বেতন না পেয়ে শ্রমিকরাই এবার কারখানায় আগুন ধরিয়ে দিলেন! ঢাকার (Dhaka)অদূরে গাজিপুর জেলার এক কারখানায় ঘটল এমনই ঘটনা। টঙ্গি গাজিপুরা সাতাইশ এলাকায় রবিবার রাত ৯টা নাগাদ জি জে ক্যাপস অ্যান্ড হেডওয়ার লিমিটেড কারখানার সাততলা ভবনের পঞ্চম তলায় শ্রমিকরা আগুন (Fire) ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। এছাড়া একইদিনে টঙ্গিতে একটি তুলার গুদাম এবং একটি কারখানায় ভয়াবহ আগুন লাগে। টঙ্গি, উত্তরা ও গাজিপুরের দমকল বিভাগের ১৩টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। টঙ্গি দমকল বিভাগের আধিকারিক ইকবাল হাসান জানিয়েছেন, দমকল বিভাগের আটটি ইউনিট রবিবার রাত ১১টা ৩৬ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
জানা গিয়েছে, ওই কারখানার শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন বকেয়া (Due) রয়েছে। এছাড়াও অভিযোগ, প্রতি মাসেই তাঁদের অতিরিক্ত কাজের টার্গেট দেওয়া হতো। টার্গেট পূরণ করতে না পারলে ওইসব শ্রমিককে চাকরি ছাড়তে বাধ্য করা হতো। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ,বিক্ষোভ ছিল। বকেয়া বেতন মেটানো ও কাজের টার্গেট নিয়ে কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে শনিবার দুপুরে শ্রমিকদের (Labours)কথাকাটাকাটি হয়। এতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা দুপুরে খাওয়াদাওয়ার পর কাজ বন্ধ করে দেন। এ নিয়ে মালিকপক্ষ, পুলিশ ও শ্রমিকপক্ষের লোকজনের মধ্যে দফায় দফায় বৈঠক হওয়ার পরও কোনো সুরাহা না হওয়ায় চাপা উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হয়।
[আরও পড়ুন: কন্ট্রোল রুমে ফোন আসতেই ব্যবস্থা, নবান্নের উদ্যোগে অগ্নিগর্ভ মণিপুর থেকে ঘরে ফিরল ১৮ পড়ুয়া]
শ্রমিক অসন্তোষের খবর পেয়ে থানা ও শিল্প পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্যর্থ হয়। এরপর রাত পৌনে ৯টার নাগাদ কারখানার ৫ম তলায় শ্রমিকরা আগুন ধরিয়ে দেন বলে অভিযোগ। পাঁচতলা থেকে আগুনের লেলিহান শিখা চতুর্থ ও তৃতীয় তলার তৈরি ক্যাপ ও কাঁচামালের গুদামে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে টঙ্গি, উত্তরা ও গাজীপুর দমকল বিভাগের ৮টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
[আরও পড়ুন: আদালত চত্বরে রবীন্দ্র কবিতা পাঠ পার্থর, মুখ খুললেন ‘তৃণমূলে নবজোয়ার’ কর্মসূচি নিয়েও]
কারখানার প্রশাসনিক আধিকারিক মণিরুজ্জামান জানান, শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে। আগামী বুধবার তাঁদের বেতন পরিশোধের কথা ছিল। এছাড়াও টার্গেট ফিলআপের বিষয় নিয়ে শ্রমিকদের সঙ্গে একটা সমস্যা চলছিল। সমস্যা সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার ফাঁকে কারখানায় আগুন লাগিয়ে দিয়েছে শ্রমিকরা। কারখানার সব কিছু পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। টঙ্গি জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মেহেদী হাসানের কথায়, ”বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা প্রতিষ্ঠানে ইট-পাটকেল ছুঁড়ে ভাঙচুর চালালে তাঁদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে পুলিশ। একসময়ে তাঁরা পুলিশের উপর হামলা চালালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সাউন্ড গ্রেনেড ছোঁড়া হয় ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার জন্য। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পঞ্চম তলার ফ্লোরে আগুন লাগিয়ে দেয়।” অগ্নিকাণ্ডের জেরে আপাতত বন্ধ কারখানা। তদন্তে নেমছে পুলিশ।