রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: বেআইনি মদ বিক্রি। ভুয়ো কাগজের সাহায্যে জমি বিক্রি। এ সবের মাঝে এবার বিক্রি হয়ে গেল সরকারি বাসস্ট্যান্ড ও পাশের মার্কেট! এবং তা জানেই না জেলা প্রশাসন। নদিয়ার পলাশিপাড়ার ঘটনা।এই নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে খোদ প্রশাসনের অন্দরেই।
ঘটনাটি কী? কী করেই বা বিক্রি হল সরকারি জমি? স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই বাসস্ট্যান্ডের উদ্বোধন হয়েছিল বাম আমলে। উদ্বোধন করেছিলেন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ। সেই সময় সরকার জমি অধিগ্রহণ করলেও রেকর্ড বা পর্চাতে জমির মালিকানার পরিবর্তন করেনি। সেই সুযোগে জমির পুরনো মালিকেরা ওয়ারিশ সূত্রে সেই জমি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
যদিও এই ঘটনা সম্পর্কে পলাশিপাড়া বিএলআরও (BLRO) অফিসের আধিকারিকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি কোনও মন্তব্য করতে চাননি। জেলার ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিক এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: সাদ্দামের বাড়ি থেকে উদ্ধার আগ্নেয়াস্ত্র, কুলতলির ‘টানেল ম্যানে’র আরও কুকীর্তি ফাঁস]
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১ জুলাই ১৯৭৯ সালে পলাশিপাড়ায় জলঙ্গি নদীর উপর মন্ত্রী যতীন চক্রবর্তীর হাত দিয়ে দ্বিজেন্দ্রলাল সেতুর উদ্বোধন হয়। সেই সময় সেতুর দুপাশে বেশ কিছু জমি খালি পড়ে ছিল। রাস্তা করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সেই জমি অধিগ্রহণ করা হয়। কিছুদিন পর সেতুর ঠিক দক্ষিণ পাশে পাকা রাস্তার পশ্চিম দিকে তৈরি হয় পলাশিপাড়া বাস স্ট্যান্ড। পাশাপাশি এই বাসস্ট্যান্ডের সামনে পিডব্লিউডির জায়গায় তৈরি হয় বেশ কিছু ছোট ছোট দোকান। বাম আমলের মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ ও প্রয়াত আরেক মন্ত্রী কমলেন্দু সান্যাল বাসস্ট্যান্ডের উদ্বোধন করেছিলেন। এভাবেই চলছে দীর্ঘদিন। এখনও সেই বাসস্ট্যান্ড ব্যবহার করা হয়।
হঠাৎ মাস কয়েক আগে বাসস্ট্যান্ডের সামনে থাকা ব্যবসায়ীদের কাছে উচ্ছেদের জন্য হাই কোর্টের নোটিশ আসে। সেই নোটিশের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীরা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন সেতুর দুই পাশে রাস্তা করার জন্য যে সমস্ত জমি সরকার অধিগ্রহণ করেছিল সেই সব জমির রেকর্ড পূর্বতন জমির মালিকদের নামেই রয়ে গিয়েছে। এবং সেই মালিকদের কোনও একজন ওয়ারিশ বাসস্ট্যান্ডের সেই জমি বিক্রি করে দেন।
খোঁজ খবর নিয়ে তাঁরা আরও জানতে পারেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে সেই জমি কৃষ্ণনগরে কোনও এক মহিলার নামে রেকর্ড হয়ে যায়। জমির বর্তমান মালিক রাস্তার পাশে থাকা এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করার জন্য হাই কোর্টে মামলা করেন। সে মামলার কপি কয়েক মাস আগে ব্যবসায়ীদের কাছে এসে পৌঁছায়। এই ঘটনা সম্পর্কে অতিরিক্ত জেলা শাসক, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তর আধিকারিক প্রলয় রায় চৌধুরী জানান, এই সম্পর্কে আমার বিশদে জানা নেই, খোঁজ খবর নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।