নন্দন দত্ত, সিউড়ি: জীবনভর প্রচারের আড়ালে থেকেই বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন দেশকে। সেটাই ছিল মহান কর্তব্য। কিন্তু চিন সেনার হাতে শহিদ হওয়ার পর শেষটা এত আড়ম্বরহীন রইল না। বরং জনসমুদ্রের মাঝে পবিত্র ভারতভূমিতে, আপন ঘরের মাটিতে চিরশয্যায় শায়িত হলেন শহিদ সেনা রাজেশ ওরাং। বীরভূমের রাঙা মাটিতে চিহ্নিত হয়ে রইল ল’দিঘির মাঠ। চিহ্ন রইল চিন সেনার নৃশংসতারও।
সকালে সাড়ে ন’টা নাগাদ রাজেশের কফিনবন্দি দেহ মহম্মদবাজারের বেলগড়িয়া গ্রামে পৌঁছতেই জনতার ঢল নেমে এসেছিল পথে। ছিল না কোনও করোনাতঙ্ক, ছিল না সামাজিক দূরত্ববিধি বজায় রাখার বালাই। শহিদের প্রতি আবেগই যে তখন প্রধান। বাড়ির মধ্যে কফিনটি নেওয়ার পর তা খুলতেই রাজেশের ক্ষতবিক্ষত মুখ দেখে জ্ঞান হারালেন মা মমতা ওরাং। চিন সেনার আগ্রাসন ছেলের জীবন বদলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে – এপর্যন্তও কোনওভাবে মেনে নিয়েছিলেন। কিন্তু চেহারা এমন করে ফেলেছে! নাঃ, এই বীভৎসতা নিতে পারেনি মায়ের হৃদয়।
[আরও পড়ুন: জমি বিতর্কে বিশ্বভারতী, উপাচার্যের বাংলো-সহ একাধিক প্লটের রেকর্ড নিয়ে প্রশ্ন]
রাজেশের শেষকৃত্য তো শহিদের মর্যাদায় সম্পন্ন হবে। কিন্তু পারিবারিক কিছু রীতি তো আছেই। সেসব তো করতেই হবে। তাই রীতি মেনে কফিনের ভিতরে রাজেশের মুখে গঙ্গাজল দেওয়া হয়, কফিনের ভিতরে তুলসি গাছ রাখা হয়। এরপর রাজেশের কফিন কাঁধে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপার শ্যাম সিং এবং পদস্থ কর্তারা আধ কিলোমিটার পথ হেঁটে ল’দিঘির মাঠ পর্যন্ত যান। সেখানে তাঁর পায়ে আলতা দিয়ে শেষ পদচিহ্ন রাখা হয়। মাঠে তখন হাজার পঞ্চাশ লোক।
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ১০টি তোপধ্বনি দিয়ে রাজেশকে শেষ সম্মান জানানো হয়। এরপর সেনাবাহিনী গার্ড অফ অনার দেয়। শেষকৃত্যে ছিলেন দুই মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, চন্দ্রনাথ সিনহা। ছিলেন জেলার চার বিধায়ক, তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল, কংগ্রেসের অধীর চৌধুরি, আবদুল মান্নান, সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী, বিজেপির দুই সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, সৌমিত্র খাঁ। সকলেই পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন।
[আরও পড়ুন: ঘরে ফিরলেন কফিনবন্দি রাজেশ ওরাং, শোকে ভেঙে পড়ল মহম্মদবাজারের গ্রাম]
রাজ্য সরকারের তরফে ৫ লক্ষ টাকা চেক পরিবারকে দিয়েছেন মন্ত্রীরা। রাজেশের বোন শকুন্তলাকে দেওয়া হয়েছে চাকরির প্রতিশ্রুতিপত্র। এছাড়া সিপিএম নেতা রামচন্দ্র ডোম দলের পক্ষ থেকে ১লক্ষ টাকা দিয়েছেন পরিবারকে। এছাড়া সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে রাজেশের মায়ের হাতে জাতীয় পতাকা, রাজেশের ব্যবহৃত টুপি, পদক ও প্রয়োজনীয় কাগজ তুলে দিয়েছেন মেজর কেকে থাপা। সবাই রয়েছে পরিবারের পাশে, নেই শুধু ছেলেটা, যাঁকে বড় বেশি দরকার ছিল মা, বাবার।
ছবি: সুশান্ত পাল।
The post চিনা বর্বরতায় শহিদ রাজেশের শেষকৃত্য বীরভূমে, প্রিয়জনদের সম্বল আলতামাখা পায়ের ছাপ appeared first on Sangbad Pratidin.