সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘শেষ হয়েও হইল না শেষ’। ছোট গল্পের এই প্রকৃতির কথা কে না জানে? রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ণিত এই কয়েকটি কথা সামান্য একটু বদলে ফেললে যা দাঁড়ায়, সেটাই বোধহয় এখন বাম, কংগ্রেস শিবিরের পরিস্থিতি – শুরু হয়েও হইল না শুরু। হাত-হাতুড়ি-কাস্তে জোটবদ্ধ হয়ে সাগরদিঘিতে (Sagardighi) সবেমাত্র ঘাসফুল দুমড়েমুচড়ে দিয়ে ‘হাত’ তুলে দাঁড়িয়েছিলেন বায়রন বিশ্বাস। বাম সমর্থিত কংগ্রেস বিধায়ক। বিধানসভায় ‘শূন্য’ থেকে এক বিধায়ক পেয়ে সবে পালে অক্সিজেন পাচ্ছিল বাম, কংগ্রেস শিবির। চালু কথাই হয়ে গেল ‘সাগরদিঘি মডেল’। তারপর ছোট ছোট একাধিক নির্বাচনে তৃণমূলকে পরাস্তও করেছিল বাম-কংগ্রেস। কিন্তু মাস তিনেকের মধ্যেই বৃত্তটা সম্পূর্ণ হল। ফের ‘শূন্যে’ ডুবে গেল দু’দল। সোমবার ঘাটালে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিলেন বায়রন বিশ্বাস (Bairon Biswas)। একমাত্র কংগ্রেস বিধায়কও ‘হাত’ছাড়া। মুখ চুন জোটেরও। তৃণমূল আর বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে একজন মাত্র জনপ্রতিনিধি সাহস বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু আজ সেই ভরসাও শেষ। এরপর জোটের ভবিষ্যৎ নিয়েও নিশ্চিতভাবেই ভাবতে হবে বিধান ভবন, আলিমুদ্দিন।
২০২১ সালের মে মাসে বিধানসভা নির্বাচনে (Assembly Election 2021) ২৯৪ আসনের মধ্যে একটিও পায়নি বাম কিংবা কংগ্রেস। সেও এক ইতিহাস। সেবার আব্বাস সিদ্দিকির আইএসএফকে (ISF) সঙ্গী করে জোটের প্রাপ্তি মাত্র এক। ভাঙড় থেকে জয়ী আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি। কিন্তু নওশাদকে দিয়ে মোটেই বাম, কংগ্রেসের শূন্য পাওয়ার লজ্জা ঢাকেনি। তারপর প্রায় দেড় পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে রাজ্যজুড়ে তরতরিয়ে বেড়ে চলা ঘাসফুলের জয়রথ থামিয়ে বাম (Left)সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস জয় লাভ করেন। তাতে কংগ্রেস বা লাল পার্টি যতই চাঙ্গা হোক, নিন্দুকরা হাওয়ায় গল্প ভাসাচ্ছিলেন, বায়রনের দলবদল অবশ্যম্ভাবী।
[আরও পড়ুন: সেদিন বলেছিলেন, ‘দল ছাড়ার প্রশ্নই নেই’, তৃণমূলে যোগ দিয়ে আজ কী বলছেন বায়রন?]
মাত্র মাস তিনেকের মধ্যেই সেই ভবিষ্যদ্বাণী ফলে গেল অক্ষরে অক্ষরে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের হাত ধরে শাসকদলে যোগ দিলেন বায়রন বিশ্বাস। জানালেন, উন্নয়নের স্বার্থে তিনি শাসকদলে নাম লেখালেন। এলাকার কাজকর্ম করতে সুবিধা হবে। এও বললেন, তাঁর জয়ের পিছনে কংগ্রেসের নাকি তেমন কোনও অবদানই নেই! স্রেফ নিজের কাজে জনতার ভোট পেয়েছেন। এহেন ‘অকৃতজ্ঞ’ সহযোদ্ধাকে নিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অবশ্য বলছেন অন্য কথা। এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে অধীররঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) বলেন, ”বায়রন নন-পলিটিক্যাল, আমি ওকে পছন্দ করতাম। ও নিজেই এসে বলেছিল, এলাকার কাজ করতে চায়। আমি হাইকম্যান্ড থেকে অনুমতি নিয়ে সর্বসম্মতিক্রমে ওকে প্রার্থী করেছি। ও একটু দুর্বল, সুগার আছে। সবসময় মিটিং, মিছিল করতেও পারেনি। সে ঠিক আছে। ও জিতে বুঝিয়ে দিয়েছিল, তৃণমূলকে হারানো যায়। তবে আমরা জানতাম, ওকে এভাবে একদিন টেনে নেওয়া হবে।” অধীরের এই বক্তব্যের পালটা দিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) বক্তব্য, ”ওখানে কংগ্রেস জেতেনি, তৃণমূলের কিছু ত্রুটির জন্য ভোট কমেছে। আর বায়রন তো নিজেই বলেছেন, তিনি তৃণমূলের ভোটও পেয়েছেন। তিনি তৃণমূল পরিবারের লোক ছিলেন, ফিরে এসেছেন।” জোটের আরেক সঙ্গী আইএসএফ বিধায়ক নওশাদের বক্তব্য, ”উনি যদি ভেবে থাকেন, উনি চলে যাওয়ার ফলে আমাদের ভোট কমে যাবে, তা ভুল। আমরা যেমন লড়াই করছি, তেমনই চালিয়ে যাব।”
[আরও পড়ুন: চাপের চাকরি করার দরকার নেই, মেয়েকে মাসে ৪৭ হাজার বেতন দেবেন মা-বাবাই!]
বায়রনের দলবদল আলিমুদ্দিন স্ট্রিটেও ধাক্কা। এনিয়ে সিপিএম (CPM) সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বক্তব্য, জনতার রায়কে অপমান করলেন বায়রন বিশ্বাস। তবে তৃণমূল বুঝিয়ে দিল, তারা অমিত শাহর পথেই। বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের নিজেদের দলে টেনে নেওয়া স্রেফ ক্ষমতা বজায় রাখার লক্ষ্যে। বায়রন বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও তাই হল। এই দলবদল রাজনৈতিক দিক থেকে কোথায় কতটা সমীকরণ বদলে দিল, তা তো অনেকটা প্রত্যক্ষ। তবে জনমানসেও এর প্রভাব আছে বইকী। জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে যেমন দল গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই ব্যক্তি ক্যারিশ্মাও আছে। তৃণমূল বিরোধিতা করে যাঁরা বায়রন বিশ্বাসকে জিতিয়েছিলেন, তাঁদের ‘বিশ্বাস’ তো রাখলেন না বিধায়ক। সেইসঙ্গে ধাক্কা জোটেও। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে একসঙ্গে আদৌ লড়াই করবেন কি না, সেটাও ভেবে দেখতে পারেন আলিমুদ্দিনের কর্তাব্যক্তিরা।