স্টাফ রিপোর্টার: কোষ্ঠিবিচার, বা পাত্র-পাত্রীর রক্ত পরীক্ষা। বিয়ে পাকা করার আগে এগুলো নতুন কিছু নয়। পাত্র বা পাত্রীর স্বভাব-চরিত্র, মাইনেকড়ি ইত্যাদি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে তাদের অফিসে খোঁজখবর, এমনকী গোপন সম্পর্কের হদিশ পেতে পিছনে প্রাইভেট গোয়েন্দা লাগানোর কথাও শোনা যায়। এবার এই যাচাই-প্রক্রিয়ার রেডারে চলে এসেছে খাস মেডিক্যাল কাউন্সিল। ডাক্তার পাত্র বা পাত্রী সত্যিই ডাক্তার কি না, তা জানতে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের অফিসে সপ্তাহে গড়ে দশ-পনেরোটা আবেদন জমা পড়ছে।
চিকিৎসক মহলের অভিমত, ইদানিং যে রকম ভুয়ো ডাক্তারের রমরমা দেখা যাচ্ছে, তাতে এটা আশ্চর্যের কিছু নয়। বরং দিন দিন আবেদনের সংখ্যা বাড়বে বলে ওঁরা মনে করছেন। ওয়েস্টেবেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের রাজ্য দপ্তর সল্টলেক। রাজ্যের সব অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর এখন কম্পিউটার বন্দির কাজ চলছে। আগে জাবদা খাতায় ইংরেজি আদ্যক্ষর অনুযায়ী নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর লেখা থাকত। গতবছর থেকে ডিজিটাইজেশন হচ্ছে। কাজ করছে ওয়েবেল। জুন মাসের মধ্যে রাজ্যের সব চিকিৎসকের নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর নথিভুক্ত করার কাজ শেষ হবে। শুধুমাত্র এমবিবিএস নয়, এমডি, এমএস, ডিএনবি,এমসিএইচ পাস করার পরেও সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক শংসাপত্র নিয়ে কাউন্সিলে এলে, সেটি প্রথমে যাচাই করা হয়। এরপর ফি দিয়ে সেগুলি রেজিস্ট্রশনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার মানস চক্রবর্তীর কথায়, বিয়ে একটি মেয়ে বা ছেলের সারাজীবনের বিষয়। তার আগে যাচাই করে নেওয়াই তো স্বাভাবিক। এরমধ্যেই অস্বাভাবিক কিছু নেই। মেডিক্যাল কাউন্সিলের অপর এক সদস্যের কথায়, ‘‘এর নেপথ্যে দু’টি কারণ। প্রথমত, কোনও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের রেজিস্ট্রেশন নম্বর অবৈধভাবে ব্যবহার করে দেদার প্র্যক্টিস করছে কোনও কোয়াক। দ্বিতীয়ত, সম্প্রতি একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, যত ভুয়ো ডাক্তারদের সিংহভাগ উত্তরপ্রদেশের রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করছেন। এইসব ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর অভিভাবক বাস্তবিকই বিভ্রান্ত। তাঁদের পক্ষে উত্তরপ্রদেশে গিয়ে যাচাই করা অসম্ভব। কিন্তু রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল ফোন বা ই-মেল করে দেশের যেকোনও রাজ্যের যে কোনও সরকারি-বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের ডাক্তারি স্নাতকের পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ করতে পারে। তাই ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিল ক্রমশ ডাক্তার যাচাইয়ের কেন্দ্র হয়ে উঠছে।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. অঞ্জন অধিকারীর কথায়, বাঙালির জিনের মধ্যে ডাক্তার রয়েছে। কখনও ভুয়ো ইঞ্জিনিয়ার বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট শুনেছেন? শুনবেন না। কারণ বাঙালি এখনও ডাক্তারি পেশায় নস্টালজিক। বাড়িতে বা পরিবারে একজন ডাক্তার থাকলে খানিকটা শ্লাঘা অনুভব করে। তবে এমন ঘটনাকে কোনওভাবেই সমর্থন করা যায় না। ভুয়ো ডাক্তারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। কাউন্সিল সূত্রে খবর, জুনের মধ্যে ডিজিটাইজেশনের কাজ শেষ হওয়ার পর জেলার মেডিক্যাল কলেজ পাশ করা হবু চিকিৎসককে রেজিস্ট্রেশন আর সার্টিফিকেট পেতে দফতরে অাসতে হবে না। অনলাইনেই সমাধান হবে।