shono
Advertisement

ডিম, চিংড়ি, বেগুনে অ্যালার্জি? খুব সহজেই দূর হবে সমস্যা, টিপস দিলেন চিকিৎসক

প্রধানত ধুলো ও খাবারের দ্বারা অ্যালার্জি খুব দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
Posted: 08:40 PM Jul 10, 2023Updated: 08:40 PM Jul 10, 2023

ডা. সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায়: রকমারি লোভনীয় খাবার দেখলে সবারই জিভে জল আসে। চোখ চকচক করে। কিন্তু মন চাইলেও শরীর যে অনেক কিছুই নিতে পারে না! সেক্ষেত্রে খেলেই গা চুলকানো, শরীর জুড়ে চাকা চাকা দাগ, শ্বাসকষ্ট, কাশি, নাক বন্ধ হয়ে আসা, যার পোশাকি নাম অ‌্যালার্জি। যেমন ধরুন, পায়েস! তা যদি আবার নলেন গুড়ের হয় তা হলে তো কথাই নেই! লোভ সামলানো যায় নাকি! কিন্তু খেয়ে অনেকেই বিপদে পড়েন। এমন হয় যে, পায়েস খাওয়ার জন্য হাসপাতালেও ভর্তি হতে হয়।

Advertisement

কিংবা চিংড়ি মাছের মালাইকারি। একই অভিযোগ রোগীদের। ‘‘একটু মুখে দিলেই হয়েছে ডাক্তারবাবু, ব্যস শরীর জুড়ে শুরু হয় এক অদ্ভুত অস্বস্তি।’’
তালিকায় রয়েছে বেগুন, পমফ্রেট, মাশরুম আরও অনেক খাদ‌্যবস্তু। আসলে অ্যালার্জির সমস্যার আড়ালে কোনও না কোনও খাবারই অনেকক্ষেত্রে দায়ী। কিন্তু সেটা সঠিকভাবে নির্ণয় করতে না পারলে সমস্যা গুরুতর হয়। প্রাণসংশয় পর্যন্ত দেখা দেয়। তাই অ্যালার্জি যাঁদের রয়েছে তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা দরকার।

অ্যালার্জি যাঁদের রয়েছে তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে বিশেষ সতর্কতা দরকার।

কী ভাবে আসে

সবাই অ্যালার্জিক হয় না। তবে যাঁদের এই প্রবণতা রয়েছে তাঁদের বেশ সতর্ক থাকা দরকার। বিশেষত ত্বক, চামড়া, নাক, গলা, চোখ ও শ্বাসনালির মতো যেসব অঙ্গের সঙ্গে সরাসরি পরিবেশের যোগ রয়েছে, সেগুলির মাধ্যমে অ্যালার্জেন শরীরে প্রবেশ করে। শ্বাসনালি বা খাদ্যনালিই অ্যালার্জেনের প্রবেশপথ। যা শরীরে গিয়ে অ্যান্টিবডি বা আইজিই (IGE) তৈরি করে। সেই অ্যালার্জেন ও আইজিই মিলিত হয়ে হিস্টামিন ও অন‌্য নানারকম রাসায়নিক তৈরি হয় ও সেই স্থানে অ্যালার্জির সৃষ্টি হয়। প্রধানত ধুলো ও খাবারের দ্বারা অ্যালার্জি খুব দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।

অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া নানা প্রকার

খুব চেনা অ‌্যলার্জি রাইনাইটিস। এতে নাক দিয়ে কাঁচা জল পড়া, চুলকানি, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ার সঙ্গে সাইনাস ইনফেকশন হয়ে সাইনোসাইটিস হয়ে থাকে। ঘরে সামান্য ধুলো পরিষ্কার করলে বা নাকে আঘাত লাগলে এ জাতীয় অস্বস্তির শিকার হন অনেকে। ত্বকের ক্ষেত্রে আর্টিকেরিয়া অর্থাৎ আমবাতের কারণে চামড়া লাল হয়ে গরম ও গোল গোল চাকা দাগ হয়। অ্যানজিওডেমা থাকলে রোগীর অ্যালার্জির প্রকোপ বেশি হয়। ঠোঁট ফুলে যায়, গলা ভারী ও বুজে আসে, শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অ্যানজিওডেমা কোনও খাবারের মাধ্যমে বা পতঙ্গের হুল ফোটালে দ্রুত বিশাল আকারে দেখা দিতে পারে। তাই কোন খাবারের অ্যালার্জেন রোগীর শরীরের জন্য নিষিদ্ধ সেই বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকা উচিত। ফুসফুসের ক্ষেত্রে অ্যালার্জি মানে অ্যাজমা। এতে বুক ভারী হয়ে জ্বালা করে, শ্বাসকষ্ট হয়, শ্বাসে সাঁইসাঁই আওয়াজের সঙ্গে কাশি শুরু হয়। বিশেষ কোনও ড্রাগ যেমন নন স্টেরয়েড, অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বা পেনকিলার জাতীয় ওষুধ, বিভিন্ন অ্যান্টিবায়োটিক সালফার ড্রাগ বা পেনিসিলিন থেকেও মারাত্মক অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

অ্যালার্জি হলে বুক ভারী হয়ে জ্বালা করে, শ্বাসকষ্ট হয়, কাশি শুরু হয়।

খাওয়া ছাড়লে অ্যালার্জিও ভাগে

গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- আটা, ময়দা, বার্লি, ওটস ও ডালিয়া প্রভৃতি শস্য আমাদের শরীরের জন্য উপকারী হলেও এর মধ্যে থাকা প্রোটিন অ্যালার্জি সৃষ্টি করে।
আবার বিভিন্ন রকমের সামুদ্রিক মাছ অর্থাৎ চিংড়ি, কাঁকড়া, ডিম ও দুধ, দুধের তৈরি খাবার এই তালিকায় পড়ে। তবে মায়ের বুকের দুধের কোনও তুলনা হয় না বরং ছোট শিশুকে নিয়মিত স্তন্যপান করালে তার সুফল হিসেবে আগামী দিনে নানা অ্যালার্জি প্রতিরোধ করা যায়। আমাদের রোজের খাদ্যতালিকায় মুসলি, সোয়াবিন, পোস্ত, সরষে বা সরষের তেল, চিনেবাদাম ইত্যাদি প্রায়শই থাকে। এগুলি থেকে শিশুদের সাংঘাতিক অ্যালার্জি হয়।

যাঁদের অ্যালার্জির প্রবণতা রয়েছে পুঁইশাক, পালংশাক ও বেগুন দৃঢ়ভাবে এড়িয়ে চলুন। মুসুর ও মুগ ডাল, খাসির মাংস, এমন কী সিদ্ধ চাল বা সাদা ভাত খেলেও অনেকের অ্যালার্জিক কষ্ট হয়। তাই তেমন বুঝলে আতপ চাল খেতে বলা হয় রোগীদের।

অ্যালার্জির প্রবণতা থাকলে পালংশাক এড়িয়ে চলুন।

কিছু ফল যেমন কাঁঠাল, আনারস এমনকী কার্বাইডে পাকানো আম বা যে কোনও ফল অ্যালার্জির প্রধান কারণ হতে পারে। ফাস্ট ফুডে উপস্থিত সালফাইড জাতীয় কেমিক্যাল অ্যালার্জি সৃষ্টি করে‌। গম বা আটা, ময়দার চেয়ে মাল্টিগ্রেন আটা খাওয়া শ্রেয়। অথবা বাজরা বা রাগীর তৈরি রুটিও স্বাস্থ্যকর। তাছাড়া একটা সময়ের পর অ্যালার্জি সেরে গেলে অ্যান্টি অ্যালার্জিক ওষুধ খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং যে খাবার খেলে অ্যালার্জির প্রবণতা দেখা দিচ্ছে সেটা বুঝে গেলে তা বর্জন করতে হবে।

অ্যান্টি অ্যালার্জিক খাবারও আছে

ভারতীয় খাদ্যাভাসে কিছু খাবার আছে যার মধ্যে অ্যান্টি অ্যালার্জিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। আমাদের রোজের রান্নায় ব্যবহৃত হলুদ যার মধ্যে অন্যতম। এটি ত্বক ও পেটের খেয়াল রাখে সাথে অ্যান্টি অ্যালার্জিক হিসাবে কাজ করে। কাঁচা হলুদের সঙ্গে রসুন, আদা অ্যালার্জির প্রবণতা কমায়। কিছু সাইট্রাস বা টক জাতীয় ফল যেমন লেবু, টম্যাটো, পেঁয়াজ ও তৈলাক্ত মাছ অ্যালার্জি প্রতিহত করতে ভীষণ উপকারী।

হলুদ ত্বক ও পেটের খেয়াল রাখে সাথে অ্যান্টি অ্যালার্জিক হিসাবে কাজ করে।

তবে চিকিৎসাই শেষ কথা
বর্তমানে সর্বজনগ্রাহ্য অ্যালার্জি টেস্ট হল ‘অ্যালার্জেন স্কিন প্রিক টেস্ট।’ এই পরীক্ষার ফলাফলের মাধ্যমে কোন খাবারগুলো থেকে সাবধান থাকা উচিত, কোন খাবার খেলে তৎক্ষণাৎ অ্যালার্জির জন্য শ্বাসকষ্ট, গায়ে লাল চাকা দাগ, গলা বুজে আসা, চুলকানির মতো কষ্টের সন্মুখীন হতে হচ্ছে তা নির্ধারণ করা সম্ভব। এর খরচ মোটামুটি ৩-৫ হাজার টাকা।

[আরও পড়ুন:হার্নিয়ার ব্যথায় কাবু? কীভাবে পাবেন এই যন্ত্রণা থেকে মুক্তি? জানালেন বিশেষজ্ঞ]

অ্যালার্জিক রাইনাইটিসের ক্ষেত্রে এক্স রে, সিটি স্ক্যান করা হয়। শ্বাসনালিতে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়ার মাত্রা দেখার জন্য ফেনো (FENO) টেস্ট করা হয়।
অ্যালার্জির সঠিক কারণ ধরা পড়লে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দরকার। ওষুধ, ইনহেলার প্রয়োজন। যাঁদের ধুলোয় অ্যালার্জি রয়েছে তাঁদের ধুলো ঝাড়ার বদলে ভিজে কাপড় দিয়ে তা মোছা উচিত। অ্যালার্জিপ্রবণ হলে ধুলোস্থানে না থাকাই শ্রেয়। মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। আর সব কিছুর সঙ্গে নিত্য খাদ্যাভ্যাসে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে হবে। কারণ এটি ঠিক থাকলে অ্যালার্জেন শরীরে ঢুকলেও তার প্রতিক্রিয়া অনেক কম হবে।

অধ্যাপক ডা. সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় এসএসকেএম হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক।

[আরও পড়ুন: কোন খাবারে বাড়ে ক্যানসারের ঝুঁকি? জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement