সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নবাগত অভিনেতা-অভিনেত্রীরা তাঁর সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করতেন। শুধু সেলেব নয়, টলিউডের বড় বড় তারকারা তাঁর হাতেই সেজে উঠতেন পর্দার নায়ক হয়ে। আজ্ঞে হ্যাঁ, বলছি বাংলা ইন্ডাস্ট্রির জনপ্রিয় ফ্যাশন স্টাইলিস্ট সন্দীপ ঘোষালের কথা। ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি স্যান্ডি নামেই পরিচিত। আজ তাঁর অবস্থা দেখলে চমকে উঠতে হয়। জানা গিয়েছে ব্রেন টিবিতে (Brain TB) আক্রান্ত তিনি। ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে তাঁর বেশ কিছু ভিডিও। এতদিন মানুষ জেনে এসেছেন টিবি সাধারণত ফুসফুসে হয়। কিন্তু মাথাতেও যে টিবি হতে পারে তা বোধয় অনেকেই জানেন না। কী এই রোগ?
ব্রেন টিবি কী?
ব্রেন টিবি বা মস্তিস্কের যক্ষ্মা হল এক বিশেষ ধরনের গুরুতর রোগ। এটি ফুসফুসের সাধারণ টিবি রোগ থেকে কিছুটা আলাদা। এই রোগকে ডাক্তারি ভাষায় 'টিউবারকুলার মেনিনজাইটিস' বলা হয়। মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস নামক ব্যাকটেরিয়া এই রোগের মূল কারণ। সাধারণত টিবি ফুসফুসে হলেও, এটি শরীরের যে কোনও অঙ্গে হতে পারে। ব্রেন টিবি-র ক্ষেত্রে এই ব্যাকটেরিয়া মস্তিস্ক ও মেরুদণ্ডকে ঘিরে থাকা পাতলা আবরণী বা মেনিনজেসকে আক্রমণ করে। এটি অত্যন্ত বিপদজনক। কারণ এটি সরাসরি কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে।
লক্ষণ কী কী?
ব্রেন টিবি-র প্রাথমিক লক্ষণগুলি সাধারণ রোগের মতোই মনে হতে পারে। তবে দ্রুত চিকিৎসা না শুরু করলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
১. তীব্র মাথা ব্যথা: এটি সাধারণত সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে।
২. জ্বর: দিনের বেলায় হালকা জ্বর থাকতে পারে।
৩. ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া: ঘাড় ঘোরাতে বা নিচু করতে অসুবিধা হয়।
৪. বমি ভাব: বিশেষত সকালে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।
৫. মানসিক বিভ্রান্তি: রোগী অসংলগ্ন কথা বলতে পারেন বা অলসতা দেখা দিতে পারে।
৬. খিঁচুনি: বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে খিঁচুনি দেখা দেয়।
৭. দৃষ্টিশক্তির সমস্যা: অনেক সময় দৃষ্টিশক্তি কমে যায় বা ঝাপসা হয়ে আসে।
কতটা ছোঁয়াচে?
ব্রেন টিবি সাধারণত ফুসফুসের টিবি-র মতো সরাসরি ছোঁয়াচে নয়। ফুসফুসের টিবি হাঁচি বা কাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়ায়। ব্রেন টিবি-তে আক্রান্ত ব্যক্তির মস্তিস্ক বা মেরুদণ্ড থেকে ব্যাকটেরিয়া সরাসরি অন্য কাউকে সংক্রমিত করে না। তবে, রোগের মূল কারণ অর্থাৎ মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস ব্যাকটেরিয়াটি ছোঁয়াচে। ব্রেন টিবি আক্রান্ত ব্যক্তির যদি একই সঙ্গে ফুসফুসেও টিবি থাকে, তবে তাঁর থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে।
ব্রেন টিবি একটি গুরুতর রোগ। এর সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।
১. দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ: এই রোগের চিকিৎসা দীর্ঘদিন ধরে চলে। সাধারণত ৯ থেকে ১২ মাস বা তার বেশি সময় ধরে একাধিক অ্যান্টি-টিবি ওষুধ খেতে হয় রোগীকে। মাঝপথে চিকিৎসা বন্ধ করা যায় না।
২. স্টেরয়েড: মস্তিস্কের ভেতরের ফোলা ভাব কমাতে এবং স্থায়ী ক্ষতি এড়াতে অনেক সময় স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করতে হয়।
৩. হাসপাতালে ভর্তি: রোগ নির্ণয়ের প্রাথমিক পর্যায়ে এবং জটিলতা দেখা দিলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করা উচিত।
সময়মতো চিকিৎসা শুরু করলে রোগটি সম্পূর্ণভাবে নিরাময় করা সম্ভব। রোগের কোনও লক্ষণ দেখলে দ্রুত একজন স্নায়ু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
