ক্যানসার চিকিৎসায় জাদুকাঠি অত্যাধুনিক কার টি-সেল থেরাপি। কী এই বিশেষ চিকিৎসা পদ্ধতি? বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টের কষ্ট লাঘবে সক্ষম, ক্যানসার জিনকে শুধরে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। নয়া চিকিৎসার ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরলেন হেমাটোঅঙ্কোলজিস্ট
ডা. দেবমাল্য ভট্টাচার্য।
ক্যানসারের চিকিৎসা শুনলে প্রথমেই আমজনতার মাথায় আসে রেডিওথেরাপি, ইউমিনোথেরাপি কিংবা কেমোথেরাপির কথা। সত্যি বলতে কী, এগুলি সবই ক্যানসার রোগের মুক্তিতে অতি কার্যকরও। এখন এই মারণ রোগের চিকিৎসা পদ্ধতিতে বলা যায় শীর্ষে স্থান পাচ্ছে কার টি-সেল থেরাপি। এই পদ্ধতিটির সম্পূর্ণ নাম 'কাইমেরিক অ্যান্টিজেন রিসেপ্টর টি-সেল থেরাপি'। অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার যেমন খপাৎ করে ভাইরাস ধরে নির্মূল করতে সক্ষম, এটাও ঠিক তেমন। ক্যানসার কোষ ধরতে পারলে সেটাকে ঠিক করে দিতে পারে এই কার-টি-সেল থেরাপি। এটি এক রকমের সেলিউলার থেরাপি।
যখন চিকিৎসা করতে করতে দেওয়ালে রোগীর পিঠ ঠেকে যায়, কোনও কিছুই কাজ করে না, সেই জায়গায় দাঁড়িয়েই এই নতুন অত্যাধুনিক পদ্ধতির কথা ভাবা হয়। অনেক সময় বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বা অন্যান্য পদ্ধতির ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, ক্যানসার সম্পূর্ণ নির্মূল করা যায়নি কিংবা পুরো চিকিৎসা কাজই করেনি। সেক্ষেত্রে আশার আলো কার-টি-সেল থেরাপি। তবে আপাতত সব ক্যানসারের ক্ষেত্রে এটি প্রয়োগ করা না গেলেও, রক্তের ক্যানসার বিশেষ করে বাচ্চাদের ক্ষেত্রে অ্যাকিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়ার (এই রক্ত ক্যানসারে প্রচুর পরিমাণে শ্বেতরক্তকণিকা তৈরি হয়) চিকিৎসায় সবচেয়ে ভালো কাজ করছে। চলছে আরও গবেষণা।
কী এই থেরাপি?
প্রথমে রোগীর থেকে কিছুটা টি-সেল বা কোষ সংগ্রহ করে বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়। বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং করা হয়। তারপর এই টি-সেলগুলিকে নির্দিষ্ট ক্যানসার সেলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। যেসব ক্যানসার বার বার ফিরে আসে সেগুলি প্রতিরোধে এই চিকিৎসা খুব ভালো কাজ দেয়। রক্ত ক্যানসারের অন্যতম চিকিৎসা বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট, যা খুব কষ্টসাধ্যও বটে। এই নয়া চিকিৎসায় কষ্ট অনেকটাই কম, সময় সাপেক্ষও নয়।
আজকাল প্রত্যেকেই মনে মনে এই ধারণা পোষণ করেন, ক্যানসারের চিকিৎসা মানেই তা কষ্টসাধ্য। কিংবা কোনও বড় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। সবসময় তা নয়। আজ থেকে কিছু বছর আগে যা ভাবা যেত না, এখন সে সব করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে। বাড়ছে সুস্থতার হার। শুধু তাই নয়, রোগ পুনরায় ফিরে আসার সম্ভাবনাও কমছে।
স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কত সময় লাগে?
এই চিকিৎসার পরবর্তী পর্যায় রোগীর ক্যানসারের কষ্ট অনেকটাই লাঘব হয়। চিকিৎসা পরবর্তী সময় জীবনযাপনের মানও অনেকটাই স্বাভাবিক হয়। নিয়মিত চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকলে ক্যানসার নিয়েও অনেকদিন ভালো থাকা সম্ভব। এই চিকিৎসা পদ্ধতি ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন আশার আলো দেখিয়েছে। যদিও বেশ ব্যয়বহুল এই পদ্ধতি তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই খরচ অনেকটাই কমবে।
পরামর্শ: 9123751480
