অভিরূপ দাস: আপাত নিরাপদ পাউডারেই বিপদ। ফ্যানের হাওয়ায় উড়ে তা ঢুকে পড়ছে নাক দিয়ে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফুসফুসের প্রাচীর! টানা পাউডার মেখে ফুসফুসের দফারফা। এমন সমস্যা নিয়ে অনেকেই আসছেন হাসপাতালে।
চিড়বিড়ে রোদ। ঘাম হচ্ছে কুলকুল করে। ঘরে ঘরে পাউডার মাখার হিড়িক। চিকিৎসকরা বলছেন, আদৌ কোনও কাজ করে না পাউডার। স্রেফ কিছুটা সময়ের জন্য একটা ‘ফিল গুড’ এফেক্ট দেয়। সম্প্রতি শিশু হাসপাতালে ত্বকের সমস্যা নিয়ে এসেছিল এক একরত্তি। সারা গায়ে ছোট ছোট ব্রণর মতো উঠেছে। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন ‘ফলিকুলাইটিস’-এ আক্রান্ত ওই শিশু। রোগের কারণ ট্যালকম পাউডার!
কীভাবে পাউডার ডেকে আনছে বিপদ? ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের অধ্যক্ষ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জয়দেব রায় জানিয়েছেন, ঘামাচি ঠেকাতে অনেকেই পাউডার ব্যবহার করছেন। কিন্তু পাউডার দেওয়ার সময় গায়ে বিন্দুমাত্র ঘাম থাকলেই বিপদ। গায়ে নূন্যতম ঘাম থাকা অবস্থায় পাউডার দিলে গুঁড়ো পাউডার ঘামের সঙ্গে মিশে রোমকূপগুলোকে বন্ধ করে দেয়। শরীরের মধ্যে অসংখ্য ছোট্ট ছোট্ট ছিদ্র রয়েছে। সে রোমকূপ বন্ধ হয়ে গেলেই বিপদ। এই ছিদ্রগুলো দিয়ে শরীরে জমে থাকা দূষিত পদার্থ বেরিয়ে আসে। রোমকূপ বন্ধ হয়ে গেলে দেখা যায় ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ।
[আরও পড়ুন: ভারতে বাড়ছে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, চমকে দেওয়া পরিসংখ্যান জানালেন বিশেষজ্ঞরা]
এসএসকেএম হাসপাতালের শিশু শল্য বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. সুজয় পালের কথায়, পাউডারের তেমন কোনও গুণাগুণ নেই। কিন্তু ঘাম বন্ধ করে তা বিপদ ডেকে আনে। ডা. সুজয় পালের বক্তব্য, ঘাম ব্যাক্টেরিয়া এবং অন্যান্য জীবাণুর থেকে শরীরকে বাঁচাতে সাহায্য করে। যত ঘাম হয়, ততই রোমকূপগুলি খুলতে থাকে। ফলে ত্বকে জমে থাকা ধুলো-ময়লা বেরিয়ে যায়। সেই রোমকূপ আটকে দেয় পাউডার। আকস্মিক ঘাম বন্ধ হয়ে ত্বকে র্যাশ বেরিয়ে যায়। যদি একান্তই পাউডার ব্যবহার করতে হয়, তাহলে তা শুকনো গায়ে ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।
আমজনতা ভাবেন, পাউডার মাখলে ঘামাচি হবে না! চিকিৎসকদের কথায়, এমন ধারণা ভয়ংকর ভুল। শুধু ত্বকের সমস্যা নয়। ফুসফুসের মারাত্মক অসুখ ‘অ্যাসবেসটোসিস’ এর নেপথ্যেও ট্যালকম পাউডার। পাউডার মেখে শুইয়ে রাখা হয়েছে শিশুকে। গ্রীষ্মকালে মাথার উপর বনবন করে ঘুরছে ফ্যান। সেই পাউডার উড়তে উড়তে ঢুকে পড়ছে নাক-মুখ দিয়ে। পাউডার নাক দিয়ে ঢুকে জমা হয় ফুসফুসে। ডা. জয়দেব রায়ের কথায়, অনেক সস্তার পাউডারে অ্যাসবেসটসের গুড়ো ব্যবহার হয়। যা ক্ষতি করে ফুসফুসের প্রাচীরের। দেখা যায় ফুসফুসের ক্রনিক অসুখ। পাউডারের পরিবর্তে জামায় ডিওডোরেন্ট ব্যবহার করার পরামর্শ দিচ্ছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞরা। ডা. জয়দেব রায়ের পরামর্শ, সুগন্ধীতে অ্যালকোহল থাকায়, তা কিছুক্ষণের মধ্যেই উবে যায়। তা থেকে শরীরে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।