স্টাফ রিপোর্টার: ডেঙ্গু আতঙ্কে থরহরি কম্পমান রাজ্য। কিন্তু এরমই বিভিন্ন জেলায় জাঁকিয়ে বসেছে স্ক্রাব টাইফাস। আক্রান্তের সংখ্যা নয় নয় করে প্রায় ২০ হাজার। যদিও স্বাস্থ্য দফতরে এখনও এই রোগে মৃত্য়ু খবর নেই। কিন্তু ঘটনা হল, প্রাথমিক থেকে ব্লক হয়ে মেডিক্যাল কলেজে রোজ ভিড় বাড়ছে রোগের। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রোগীর শরীরের বিভিন্ন অংশ ভাল করে পর্যবেক্ষণ না করলে দুঁদে ডাক্তারবাবুও রোগ নির্ণয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন।
আট থেকে আশি যেকোনও বয়সে এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে রোগের প্রকোপ বেশি। বিশেষ করে যারা খালিগায়ে থাকে তাদের মধ্যে রোগের প্রকোপ বেশি। গায়ে সিগারেটের ছ্যাঁকার মতো ২-৩দিন পরে কালো দাগ হয়ে যায়। মূলত বগল, পিঠ, ঘাড়, গোপনাঙ্গে এই মাকড় কামড়ায়।
ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত রোগ স্ক্রাব টাইফাস (Scrub Typhus) হয় একধরনের মাকড়ের কামড়ে। অতিক্ষুদ্র এই মাকড়ের শরীরে বাস করে ‘ওরেন্টিয়া সাতসুগামুসি’ নামে একধরনের ব্যাক্টেরিয়া। এই ব্যাক্টেরিয়া মাকড়ের লালারসের মাধ্যমে মানবদেহে প্রবেশ করে। ৩-৫ দিনের মধ্যে শরীরে উপসর্গ দেখা দেয়। তুমুল জ্বর, সঙ্গে মাথার যন্ত্রণা। গা ব্যথা। বমির ভাব। প্রস্রাব কমে যাওয়া। মূলত স্যাঁতসেতে ভিজে এলাকায় স্ক্রাব টাইফাসের প্রাদুর্ভাব বেশি। স্বাস্থ্য ভবনের জনস্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়ার তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। কিন্তু স্ক্রাব টাইফাসের মতো রোগের ক্ষেত্রে সেই চলন নেই। তবে বেশিরভাগ রোগী বেসরকারি হাসপাতাল বা চিকিৎসকের কাছে যায়।
[আরও পড়ুন: ক্যানসারের আশঙ্কা! ডাভ, ট্রেসেমির মতো শ্যাম্পু বাজার থেকে তুলে নিল ইউনিলিভার ]
কলকাতায় চলতি বছরে এমন রোগী পাওয়া যায়নি। কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি, মুর্শিদাবাদ-সহ বেশিরভাগ জেলার কৃষক পরিবারে বা গাছপালা ঘেরা এলাকায় এই রোগ বেশি দেখা যায়। শুধুমাত্র দক্ষি ২৪ পরগনায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩০০। কিছু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. সিদ্ধার্থ নিয়োগীর কথায়,‘‘রোগ চিহ্নিত করলেই অর্ধেক যুদ্ধজয়। রোগীর শরীরের কোনও অংশে ছ্যাঁকা দাগ বা ঘা থাকলেই আগে রক্তের অ্যালাইজা পরীক্ষা করে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে।’’ ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথের অধিকর্তা ডা. অপূর্ব ঘোষের কথায়,‘‘বিভিন্ন জেলা থেকে রোজই রোগী আসছে। যেহেতু ছোটরা বেশি আক্রান্ত হয় তাই রোগীর শরীরের সব অংশ ভাল করে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। গায়ে দাগ থাকলেই আগে রক্তের অ্যালাইজা টেস্ট করে দেখতে হবে।’’ বিশেষজ্ঞদের মতে, রোগের একমাত্র ওষুধ ডক্সিসাইক্লিন ও অ্যারিথ্রোমাইসিন অ্যান্টিবায়োটিক। চিকিৎসায় দেরি হলে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ বিকল হয়ে রোগীর মৃত্য়ুও হতে পারে। গত একমাসে রাজ্যের প্রায় সব জেলা হাসপাতালে স্ক্রাব টাইফাসের রোগ নির্ণয়ে অ্যালাইজা টেস্ট করার ব্যবস্থা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য ভবনের দাবি।