প্রস্রাবে ফেনা! এটা অনেকেরই মনে হয় স্বাভাবিক ব্যাপার। তাই এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা খুব বেশি। কিন্তু জানেন কি, এই লক্ষণ মোটেই ভালো নয়। কিডনির সমস্যা থেকে এমন হয়। বিস্তারিত বুঝিয়ে বললেন নেফ্রোলজিস্ট ডা. পার্থ কর্মকার
মল-মূত্র শরীরের বর্জ্য পদার্থ। যার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন টক্সিক বা বিষাক্ত উপাদান বেরিয়ে যায়। কখনও কখনও আবার মূত্রের সঙ্গে অনেক প্রয়োজনীয় উপাদানও শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। তাই যে কোনও রোগের চিকিৎসা করাতে গেলে মূত্রের ধরন কেমন সেটা দেখা হয়। প্রস্রাব সাধারণত জলের মতো স্বচ্ছ অথবা হলদেটে হতে পারে। কোনও রক্ত বা ফেনা থাকে না।
প্রস্রাব ফেনার মতো (Foamy like Urine) মাঝে মধ্যে হতে পারে, যা স্বাভাবিক। অনেক সময় খুব গতিতে মূত্র ত্যাগ করলেও ফেনা হয়। এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু স্বাভাবিক গতিতেও মূত্র করার পর যদি দেখা যায় অতিরিক্ত ফেনা হচ্ছে তা হলে কিন্তু চিন্তার ব্যাপার। শরীরে জলের অভাব হলে, প্রস্রাব ঘন (Concentrated) হতে পারে। প্রস্রাবে বুদবুদ আর ফেনা এক নয়। বুদবুদ অনেক বড়, পরিষ্কার হয় ও ফ্লাশ করলে চলে যায়। অন্যদিকে, ফেনা হলে তা কিন্তু প্রস্রাবের পর জল দিলেও যায় না। তখন সতর্ক হোন।
কেন এমন হয়?
- যদি প্রস্রাবে প্রায়শই ফেনা হয় বা ফেনার মাত্রা সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে তাহলে তা রোগের লক্ষণ। কিডনির রোগে যখন প্রস্রাবে প্রোটিন (যেমন অ্যালবুমিন) বেরিয়ে যায় তখন ফেনা হয় এবং এটি একটি কিডনির রোগের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। যদি আপনার প্রস্রাব অধিকাংশ সময় ফেনাযুক্ত হয়, তা হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রস্রাবের পরীক্ষা করতে হবে। যদি প্রস্রাবে প্রোটিন থাকে তাহলে আরও অন্যান্য পরীক্ষা করে দেখতে হবে কেন প্রোটিন বেরচ্ছে।
- রেট্রোগ্রেড ইজাকুলেশন (Retrograde Ejaculation), যেখানে পুরুষদের বীর্য মূত্রথলিতে জমা হয়, সেক্ষেত্রেও প্রস্রাবে ফেনা হয়, যদিও এই ঘটনা খুব বিরল। সাধারণত, কিডনি যখন রক্ত পরিস্রুত করে, রক্তের প্রোটিন প্রস্রাবে আসে না। কিডনির ফিল্টারের ছিদ্র বড় মাপের হলে এই প্রোটিন বের হয়ে যায়, এবং তা বাতাসের সঙ্গে ক্রিয়া করে ফেনার সৃষ্টি করে। এই প্রোটিন বের হওয়াকে প্রোটিনিউরিয়া বলে। প্রোটিনের পরিমাণ যত বেশি হবে কিডনির ক্ষতি তত বেশি ও দ্রুত হতে পারে।
প্রস্রাবে ফেনা ও আরও উপসর্গ
- সারা শরীর ফুলে যায়, মুখ, হাত পা ফোলে।
- দুর্বলতা।
- ক্ষুধামান্দ্য বা খেতে অনীহা।
- বমি ভাব বা বমি হওয়া।
- প্রস্রাবের পরিমাণ।
কী কী কারণে কিডনি থেকে প্রোটিন বেরতে পারে?
- মধুমেহ বা ডায়াবেটিসজনিত কিডনির রোগ হলে।
- উচ্চ রক্তচাপ থেকে কিডনির রোগ হলে।
- নেফ্রোটিক সিন্ড্রোম।
- ক্রনিক গ্লোমেরিউলো নেফ্রাইটিস।
রেট্রোগ্রেড ইজাকুলেশন: যে যে পরিস্থিতিতে হতে পারে
- মধুমেহ (Diabetes)
- প্রস্টেট অপারেশনের পর বা প্রস্টেট বড় হলে যে ওষুধ দেওয়া হয়।
- শিরদাঁড়ার কোনও আঘাত থেকে নার্ভ নষ্ট হলে।
- উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেলে।
[আরও পড়ুন: শ্বাসকষ্ট মানেই ফুসফুসজনিত নয়, এই সমস্যা নাকেরও হতে পারে, সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞর]
কী টেস্ট করতে হবে?
- ২৪ ঘণ্টা প্রস্রাবে কতটা প্রোটিন বেরচ্ছে দেখতে হবে।
- Spot বা তৎক্ষণাৎ প্রস্রাবে অ্যালবুমিন ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রার অনুপাত।
- Urine albumin-creatinine ratio (UACR)) টেস্ট করে প্রস্রাবে প্রোটিন ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অনুপাত দেখা।
- ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে থাকে এবং এক সময় কিডনি ফেলিওর হয়ে যায়।
- প্রাথমিক অবস্থায় রোগ চিহ্নিত হলে তার চিকিৎসা সম্ভব।
কখন ডাক্তার দেখাবেন?
- প্রস্রাবের ফেনা যদি কয়েকদিন পরেও না যায়।
- প্রস্রাবে ফেনার সঙ্গে অন্যান্য উপসর্গ (উপরে উল্লিখিত) থাকলে।
- প্রস্রাব যদি ঘোলাটে বা লালচে হয়।
- পুরুষদের যদি বীর্যপতন কম হয় বা না হয়।