শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: ওই দূরে দাঁড়িয়ে আছে গন্ডার! গরুমারার জঙ্গলে হাতির পিঠে চেপে গন্ডার দর্শন। জঙ্গল ভ্রমণের দুর্দান্ত সেই ফিল থেকে গত প্রায় দু’বছর বছর ধরে বঞ্চিত ছিলেন ডুয়ার্সের গরুমারা জাতীয় উদ্যানে বেড়াতে আসা পর্যটকেরা। কারণ, হাতির অভাব। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ কর্মী হাতির অভাবে চালু করেও করোনা পরবর্তী সময়ে এলিফ্যান্ট রাইডিং বা হাতি সওয়ারী বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে কম অনুরোধ শুনতে হয়নি বনকর্তাদের।
শেষ পর্যন্ত পর্যটকদের অনুরোধকে মান্যতা দিয়ে হাতির ব্যবস্থা করল বনদপ্তর। গরুমারায় পা রাখল জলদাপাড়ার যুবতী হাতি জেনি ও মাধুরী। বন্যপ্রাণীর প্রজনন ঋতুর কারণে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে জঙ্গলপথ। খুলবে ১৬ সেপ্টেম্বর। ওই দিন থেকেই গরুমারার জঙ্গলে হাতির পিঠে ভ্রমণে বেরতে পারবেন পর্যটকেরা। তার জন্য প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গিয়েছে। আর সেই খবরে পুজোর মুখে উচ্ছ্বসিত পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
গরুমারা জাতীয় উদ্যানে নিজস্ব হাতির সংখ্যা ২৫। তার মধ্যে ৬টি বাচ্চা হাতি। প্রশিক্ষণ অবস্থায় রয়েছে আরও ৪টি হাতি। বাকি ১৫টি হাতি নিয়ে জঙ্গল ও বন্যপ্রাণীদের সুরক্ষার কাজ করতে হয় বনকর্মীদের। তার মধ্যে থেকে দু’টি হাতিকে পর্যটক ঘোরানোর কাজে লাগানো হয়। তার ফলে ৮০ বর্গকিলোমিটার জঙ্গল পাহাড়ায় সমস্যা দেখা দেয়। তাই করোনা পরবর্তী সময়ে হাতি সওয়ারী বন্ধ করে দেয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ।
গরুমারা বন্যপ্রাণী বিভাগের বনাধিকারিক দ্বিজপ্রতীম সেন জানান, পর্যটক ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের তরফে কম অনুরোধ আসেনি। কিন্তু বন ও বন্যপ্রাণীর সুরক্ষাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বন্ধ রাখতে হয় হাতিতে ভ্রমণ। তবে পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বনকর্তারা। ফলস্বরূপ জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ দুটো হাতি উপহার দেওয়ায় খুশি গরুমারা জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ।
[আরও পড়ুন: ‘বাংলা দিবস’ পালিত হোক ১ বৈশাখই, রাজ্যগান হবে ‘বাংলার মাটি’, প্রস্তাব বিধানসভায়]
গরুমারার কর্মী হাতি হিসেবে কাজে যোগ দেয় জেনি ও মাধুরী। তাদের দুই মাহুতকেও কর্মী হিসেবে নিয়োগপত্র দেন গরুমারা জাতীয় উদ্যান কর্তৃপক্ষ। জানা গিয়েছে, জলদাপাড়ার জঙ্গলে পর্যটক ঘোরানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে ২৮ বছরের জেনি এবং ২০ বছরের মাধুরীর। আপাতত গরুমারা হাতি পিলখানায় বিশ্রামে রাখা হয়েছে তাদের। আগামী সপ্তাহে একজনকে গরুমারার ধূপঝোড়া আর একজনকে কালীপুর পর্যটক আবাসে পাঠানো হবে। সেখানকার হাতি পিলখানায় থাকবে তারা। সেখান থেকেই আগের মতো পর্যটকদের বেড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে।
গরুমারা ভ্রমণে ফের হাতি সওয়ারী চালু হওয়ার খবরে খুশি ডুয়ার্সের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। লাটাগুড়ি রিসর্ট ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দিব্যেন্দু দেব জানান, করোনা পরবর্তী সময়ে হাতি সওয়ারী বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পর্যটকেরা বেড়াতে এসে হতাশ হয়ে পড়ছিলেন। এই নিয়ে বনদপ্তরের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছিল। পুনরায় জঙ্গল ভ্রমণে হাতি যুক্ত হওয়ায় একশৃঙ্গের বাসভূমি গরুমারায় পর্যটকদের আকর্ষণ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন তারা।