ডা. সৌর মুখোপাধ্যায়: সেই বিখ্যাত গান মনে আছে? “হৃদয়ের গান তো শুনি গায় গো সবাই, /ক’জনা তোমার মত গাইতে পারে”। না। সবাই পারে না। তাই ফুটবলের মাঠে দুর্দান্ত স্ট্রাইকার হঠাৎ লুটিয়ে পড়ে। তিরের মতো স্প্রিন্টার প্র্যাকটিসের সময় লুটিয়ে পড়ে। ডাক্তার বলেন, ‘সব শেষ। হার্ট অ্যাটাক!’ মোদ্দা কথা, শারীরিক সুস্থ মানেই হৃদয় নীরোগ এমনটা, সব সময় হয় না। কিছু দিন আগেই বাঙালির অন্যতম আইকন প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় হৃদরোগে আক্রান্ত হন। ডাক্তারি পরিভাষায় বলা হয় ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফাকশন’। ফলে তাঁর হৃদযন্ত্রে তিনটি স্টেন বসানো হয়।
ফিট থেকেও হার্ট বিকল কেন?
আসলে, ফিজিক্যাল ফিটনেস (Fitness tips) বা শরীর সুস্থ মানেই ভিতরের হৃদযন্ত্রও (Healthy Heart) সুস্থ সচল থাকবেই, এমন গ্যারান্টি নেই। ইংরাজিতে একটা প্রবাদ আছে, ‘নেভার জাজ এ বুক বাই ইটস কভার।’
প্রধানত এই ধরনের বিরল ঘটনার পিছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। প্রথমত, হার্টের ভিতর কতকগুলি সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ছিদ্র থাকে যাকে আমরা বলি আয়ন চ্যানেল। যার ভিতর দিয়ে সোডিয়াম প্রবেশ ও নির্গত হয়। এই চ্যানেলের গন্ডগোলকে বলে চ্যানেলোপ্যাথি। এছাড়া হার্টের দেওয়াল মোটা হতে পারে। যাকে আমরা বলি হাইপারট্রপিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি। চ্যানেলোপ্যাথি ও হাইপারট্রপিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি সম্পূর্ণভাবে জেনেটিক বা বংশগত সমস্যা। যা শত ফিট থাকলেও যে কোনও মানুষের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদিকে খেলা বা খেলার প্র্যাকটিসের সময় হার্ট অ্যাটাকের পিছনে একটি কারণ ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফেকশন’। এই ক্ষেত্রে কিন্তু বংশগত বা জেনেটিক সমস্যা ততটা প্রবল নয়।
[আরও পড়ুন: শিগগিরি বাজারে আসবে Coronavirus Pill! চলছে শেষ মুহূর্তের ট্রায়াল, দাবি গবেষকদের]
এক্সারসাইজের সঙ্গে আর কী দরকার?
অনেকের মনেই এই ধারণা কাজ করে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো খেলোয়াড়ের যদি এমন হয়, অর্থাৎ এক্সারসাইজ করার পরেও শারীরিকভাবে সুস্থ থেকেও যদি এত বড় হার্টের সমস্যায় তাঁকে আক্রান্ত হতে হয় তাহলে এত এক্সারসাইজ করে লাভ কী?
এই ধারণা মনে পুষে রাখলে ভুল করবেন। এক্সারসাইজ শরীর সুস্থ রাখতে খুবই কার্যকর। সঙ্গে স্বাভাবিক ডায়েট মেনে খাওয়া-দাওয়া দরকার। হৃদরোগের জন্য কতগুলো নির্দিষ্ট শত্রুও আছে। ফিটনেস বজায় রাখার পাশাপাশি সেগুলিও কে কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখছে তার উপর নির্ভর করে হার্ট কতটা ভাল থাকবে। এর মধ্যে বয়স একটা বড় বিষয়। এছাড়া রয়েছে ধূমপান, প্রেশার, কোলেস্টেরল, সুগারের মাত্রা বেশি থাকলে রিস্ক বেশি। শুধু এক্সারসাইজ নয়, সবকিছু বজায় রাখতে পারলে তবেই হার্ট ভাল থাকবে, আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি কমবে।
অনুলিখন: ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য