ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: পরপর দু’বার ক্যানসারকে হারিয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা শর্মা (Aindrila Sharma)। কিন্তু সেরিব্রাল স্ট্রোকের ধাক্কায় ১ নভেম্বর থেকেই হাসপাতালে ভরতি অভিনেত্রী। গত কয়েকদিন ধরে কার্যত কোমাতেই রয়েছেন তিনি। বুধবার সকালে আরও বড় দুঃসংবাদ। এবার হৃদরোগে আক্রান্ত ঐন্দ্রিলা। বস্তুত, মৃত্যুর সঙ্গে নিরন্তর চলছে তাঁর লড়াই। সেই লড়াইয়ে শামিল হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও। বুঝতে পেরেই শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক করতে সিপিআর শুরু করে দেন। তাতে সামান্য উন্নতি হলেও আশঙ্কা কিন্তু কাটেনি।
ঐন্দ্রিলার মতো ক্যানসারজয়ীদের ক্ষেত্রে কতটা মারাত্মক হতে পারে ব্রেনস্ট্রোক? এই প্রশ্নটাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ঐন্দ্রিলার অনুরাগীদের মধ্যে। ক্যানসার বিশেষজ্ঞ ও অঙ্কোলজিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার তরফে ঠাকুরপুকুর ক্যানসার রিসার্চ সেন্টারের ক্লিনিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট ডা. সোমনাথ সরকার বিস্তারিত জানিয়েছেন।
ডা. সরকারের মতে প্রথমেই যেটা জেনে রাখা প্রয়োজন তা হল ক্যানসারের সঙ্গে ব্রেনস্ট্রোকের কোনও সম্পর্ক নেই। দু’টো সম্পূর্ণ আলাদা ক্লিনিক্যাল সিম্পটম। ক্যানসার কিছুটা জিনগত কারণে হয়। বাকি কারণগুলি এখনও গবেষণা চলছে। অবশ্য মস্তিষ্কে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়লে রোগীর আচরণ স্ট্রোকের মতো হয়। তবে ক্যানসার ও ব্রেনস্ট্রোক এক নয় বলেই জানাচ্ছেন এই বিশিষ্ট চিকিৎসক।
ক্যানসারজয়ীদের ক্ষেত্রে ব্রেনস্ট্রোক কতটা মারাত্মক হতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তরে ডা. সোমনাথ সরকার জানান, একবার ক্যানসারে আক্রান্ত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কমে যায়। ঐন্দ্রিলার মতো যাঁরা দু’বার ক্যানসারজয়ী তাঁদের জীবনীশক্তি প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ কমে যেতে পারে। এমন অবস্থায় ব্রেনস্ট্রোক মারাত্মক আঘাত হানতে পারে রোগীর জীবনে।
[আরও পড়ুন: ফুলে ওঠা নখে প্রচণ্ড ব্যথা? মারাত্মক হতে পারে এই সমস্যা, সতর্কবার্তা বিশেষজ্ঞর]
কিন্তু কেন হয় এই ব্রেনস্ট্রোক? এর কারণ অনেক। অনিয়ন্ত্রিত জীবন, রাতজাগা, অতিরিক্ত মদ্যপান কিংবা ধূমপান এবং ভয়ংকর মানসিক চাপ। অফিসের টেনশন বা পারিবারিক কোনও দুশ্চিন্তা থেকেও মানসিক চাপ বাড়তে পারে। তার জেরে হার্টের রক্তচাপ বেড়ে যায়। এর রক্তচাপ ধমনীর মাধ্যমে মস্তিষ্কে গেলেই বিপদ। আচমকা ধমনী ছিঁড়ে গেলে মস্তিষ্কের ভিতরে রক্ত জমাট বাঁধে। একে বলে হেমারেজিক স্ট্রোক।
ব্রেনস্ট্রোক ডানদিকে হলে তার প্রভাব পড়ে শরীরের বাঁদিকে। আবার বাঁদিকে স্ট্রোক বা হেমারেজ হলে তার প্রভাব ডানদিকে পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, মহিলাদের বাঁদিকেই স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি। তাই তিরিশ বছর বয়সের পর থেকেই শরীরের বিশেষ কিছু খেয়াল রাখতে হবে। তার জন্য কী কী করতে হবে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন –
জাঙ্ক ফুড বর্জন করতে হবে।
সময়ে খাবার খেতে হবে।
টেনশন কমানোর উপায় খুঁজে বার করতে হবে। প্রয়োজনে যোগাভ্যাস করতে পারেন।
নিয়মিত রক্তপরীক্ষা করাতে হবে।
বছরে একবার কোলেস্টেরল পরীক্ষা করাবেন।
পরিমিত আহার আর শরীর বুঝে তবেই ব্যায়াম করবেন।
সাতদিন অন্তর রক্তচাপ পরীক্ষা করবেন। এখন ইলেকট্রনিক মেশিন সহজেই পাওয়া যায়। যা দিয়ে বাড়িতে টেস্ট করতে পারেন।
তিন বছর অন্তর ব্লাড সুগারের পরীক্ষা করাবেন।