অভিরূপ দাস: একজোড়া নতুন হাঁটু। একটি বসিয়েছে রোবট। অন্যটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে। চিকিৎসকদের দাবি, মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জের শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় প্রথম। সাতষট্টি বছরের শরদিন্দুবাবুর একজোড়া হাঁটু তৈরি হয়েছে রোবট-কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার যুগলবন্দিতে। অস্থিশল্য বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সুজয় কুণ্ডুর নেতৃত্বে উডল্যান্ড মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে হয়েছে এই অস্ত্রোপচার।

একবছর আগেই শরদিন্দুবাবুর ‘রোবটিক্স’ এর মাধ্যমে ডানদিকে নতুন হাঁটু বসেছে। এবার বাঁদিকে হাঁটু বসল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে। কীভাবে তা সম্ভব হল? চিকিৎসক ডা. সুজয় কুণ্ডু জানিয়েছেন, হাঁটু বদলানোর আগে এক্ষেত্রে প্রথমে হাঁটুতে একটা বিশেষ ‘সিটি স্ক্যান’ হয়। সেটাকে ‘পিডিএফ’ ইমেজে রূপান্তরিত করে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মাইক্রোসফটকে। মাইক্রোসফট তা খতিয়ে দেখে সার্জনকে পাঠান একটি থ্রি ডি ইমেজ। এই থ্রি ডায়মেনশন ইমেজটাই ওটি রুমে সার্জনের গাইডবুক।
কোন সাইজের হাঁটু লাগবে? অ্যানাটমিকালি তা কীভাবে বসবে? রোগীর হাঁটুর অংশে ছোটখাটো প্রতিটি হাড়ের হিসাব করে নেয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সিটিস্ক্যানের পিডিএফ দেখে সেই অনুযায়ী একটা স্ক্যানোগ্রাম পাঠায় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। আদতে যা একটি বারকোড। যেমনটা থাকে শপিং মলে কোনও দ্রব্য কিনতে গেলে। ক্যাশ কাউন্টারে যেমন ক্যাশিয়ার সেই বারকোডের উপর লেজার মারে। বাকিটা ঠিক তেমনই। চিকিৎসকের মাথায় থাকে একটি হেলমেট, সেখানে লাগানো থাকে ‘হলো লেন্স।’ ডা. সুজয় কুণ্ডুর কথায়, সেই লেন্স গিয়ে পড়ে ওই বারকোডের উপর। লেন্সের আলো স্ক্যানোগ্রামের উপর পড়লেই চোখের সামনে তৈরি হয় একটা থ্রিডি ভিউ। সেই থ্রিডি ভিউ দেখেই অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসক। ডা. সুজয় কুণ্ডুর কথায়, ‘‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যে অস্ত্রোপচার তা অনেক বেশি নিঁখুত।’’
রোবোটিক্স না কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা? আগামীর ওটি রুম কার দখলে থাকবে? ডা. সুজয় কুণ্ডুর বক্তব্য, ‘‘কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে অস্ত্রোপচার অনেক কম জায়গায় করা যায়। শুধু তাই নয়, কোন মাপের হাঁটু বসাব সেটা আগে থেকেই মাপ হয়ে চলে আসছে। কোন ইনসার্ট লাগবে, কোন সাইজের ফিমার বোন বসবে, পুরোটাই ঠিক করে দেয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।’’ রোবটিক্স-এ মূলত অস্ত্রোপচার করে ইস্পাতের দুটো হাত। তাকে পরিচালনা করেন চিকিৎসক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় যদিও কাজটা করতে হয় চিকিৎসককেই।