ফুসফুসে সিস্ট হয়েছে, এটা শুনে প্রথমেই আতঙ্কিত হবেন না। আগে জানতে হবে কী ধরনের সিস্ট আছে। কিছু ক্ষেত্রে এটি চিন্তার, কিছু ক্ষেত্রে আবার সাধারণ ব্যাপার। এ বিষয় নিয়েই কথা বললেন মেডিকা সুপারস্পেশালিটি হাসপাতালের সিনিয়র পালমোনলজিস্ট ডা. নন্দিনী বিশ্বাস।
সিস্ট শব্দটা শুনলে, প্রথমেই পলিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোমের কথা মাথায় আসে। হ্যাঁ, এবিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, মহিলাদের এই সমস্যা খুব বেশি। কিন্তু সিস্ট শুধু ওভারিতে কেন, শরীরে নানা স্থানে হতে পারে। তেমনই একটি হল, ফুসফুসের সিস্ট। তবে তফাত আছে। ফুসফুসের সিস্ট আসলে বায়ু ভর্তি সিস্ট। এই সিস্টের ভিতর তরল পদার্থ কিছু থাকে না। অর্থাৎ ফুসফুসের সিস্ট ফুসফুসের গঠনগত একটি ত্রুটি।
কী করে বুঝবেন?
ফুসফুসের সিস্ট থাকলে সচরাচর কোনও রকম লক্ষণ থাকে না। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট বা কাশি হতে পারে।
তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যেটা হয়, অন্য অসুখের টেস্ট করতে গিয়ে বা সিটিস্ক্যান করতে গিয়ে তখন দেখা গেল ফুসফুসে সিস্ট রয়েছে।
কিছু ক্ষেত্রে ক্লিনিক্যাল লক্ষণ থাকে। সাধারণত আইসোলেটেট লাং সিস্ট প্রায় ৫-১০ শতাংশ ক্ষেত্রেই লক্ষণবিহীন হয়। তেমন কোনও সমস্যা করে না। সেগুলির কোনও ট্রিটমেন্টের দরকার পড়ে না।
[আরও পড়ুন: হরমোনের খেলাতেই মেজাজ খারাপ, রাগকে বশে আনবেন কীভাবে? জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা]
সিস্টের নানা ধরন
কিছু ক্ষেত্রে যেমন সিওপিডি, এয়ারওয়েজ অবস্ট্রাকশন হলে সে ক্ষেত্রেও ফুসফুসের সিস্টের পরিবর্তন ঘটতে পারে। যাকে চিকিৎসা পরিভাষায় বলা হয়, প্যারাসিস্টাল এমনফায়োমিক চেঞ্জেস। কারও কারও ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ধূমপান করার জন্য Pulmonary Langerhans cell histiocytosis বা PLCH হয়। লাং এর গঠনের পরিবর্তন হয়। এই সিস্ট পুরো ফুসফুস জুড়ে হতে থাকে। ফলে ফুসফুসের কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। সাধারণত পুরুষদের এই সমস্যা বেশি হয়।
সিস্টিক লাং ডিজিজে, সমস্যা একটু বেশিই থাকে। এক্ষেত্রে ফুসফুসে অনেক কটা সিস্ট থাকতে পারে। দেখা যায়, একই আকারের, একই সাইজের সিস্ট পুরো ফুসফুস জুড়ে থাকে। কখনও কখনও সিস্টের সাইজ বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। পুরুষ ও মহিলার ক্ষেত্রে এই সিস্টের ধরনের তফাত থাকে। এক্ষেত্রে রোগীর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকতে পারে, বুকে ব্যথা, কাশির লক্ষণ প্রকাশ পায়।
লিনফানজিওলিওম্যায়োমাটোসিস (LAM), এটা আর একটি ফুসফুস সিস্টের প্রকার। এই সিস্ট অল্পবয়সি মেয়েদের হতে পারে। সাধারণত মাসিক চলাকালীন ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বেড়ে যায় অথবা জিনগত কারণে হতে পারে। যা এই ধরনের সিস্ট তৈরি করতে পারে। এই ধরনের সিস্টগুলির ক্ষেত্রে শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। রোগীর লক্ষণ থাকে। যদিও এগুলিতে আক্রান্তের প্রবণতা কম।
চিকিৎসা পুরুষ-মহিলাদের আলাদা?
কাশি, শ্বাসকষ্ট হাঁটাচলা করতে সমস্যা, হাঁফ ধরার লক্ষণ থাকলে চিকিৎসা করতে হবে। প্রয়োজনীয় টেস্টের পর উপযুক্ত চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিই আমরা। তবে এই সমস্যার চিকিৎসা পুরুষ-মহিলাভেদে আলাদা। এই সমস্যায় চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সেটা করতে হবে, সঙ্গে ধূমপান বর্জন দরকার। আর যে সিস্ট কোনও রকম সমস্যা করে না সেটা নিয়ে অযথা চিন্তা না করে একটু সতর্ক থাকলেই হয়।