শীতের যন্ত্রণা পা ফাটা। এক্ষেত্রে নানারকম আয়ুর্বেদিক প্রতিষেধক রয়েছে। তাতে উপশম মেলে খুব ভালো। একবার হলে বারবার হয় না। কী করবেন, জানালেন আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক অচিন্ত্য মিত্র।
চিকিৎসা বিজ্ঞানে পা-ফাটা খুবই সামান্য একটা ব্যাপার মনে হলেও আসলে তা কিন্তু নয়। ভুক্তভোগীরা কিন্তু নিদারুণ যন্ত্রণায় দিনযাপন করেন। এটা যেহেতু প্রাণঘাতী নয়, তাই আমাদের নজরে এটি সামান্য সমস্যা। কিন্তু শীতকাল এলেই অনেকের কাছেই বিভীষিকার মতো হয়ে যায়, কারণ আবার শুরু হবে পা ফাটার যন্ত্রণা। এই কষ্ট থেকে মুক্তির জন্য বিভিন্ন উপায় মেনেও উপকার পান না অনেকেই। এক্ষেত্রে আয়ুর্বেদ কিন্তু গোড়া থেকে সমস্যা নিরাময় করতে পারে। কেন পা ফাটছে, সেটা জেনে সেই মতো তার প্রতিকার জানা দরকার।
কেন হয়?
শীতকালে আবহাওয়ার শুষ্কতা ও শৈত্যতার কারণে শরীরের ত্বক, হাত, পা ইত্যাদি রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়, তাই হাত-পা-ঠোঁট খসখসে হয়ে যায় এবং ফাটতে পারে। এছাড়া অনেক কারণে হাত-পা ফাটতে পারে। যেমন ভিটামিন-সি, ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স (মূলত, ভিটামিন বি-১২, বি-৩), ভিটামিন-ডি-এর অভাব। এছাড়া যাঁরা অস্থির সমস্যায় ভুগছেন (অস্টিওপোরোসিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস), যাঁদের লিভারের কার্যকারিতা দুর্বল (ফ্যাটি লিভার), অধিক ওজন, খালি পায়ে যাতায়াত করেন, যাঁরা বিভিন্ন চর্মরোগ, যেমন- একজিমা, সোরিয়াসিস ইত্যাদি রোগে ভুগছেন, শীতকাল অনুযায়ী সঠিক আহার-পান করেন না এবং সার্বিকভাবে বাতদোষে আক্রান্ত তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা বারবার ফিরে আসে। আয়ুর্বেদ চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী ঋতুচর্যা বিশেষত, শীতকালীন ঋতুচর্যা সঠিকভাবে পালন করলে আর ভুগতে হবে না ফাটা পা নিয়ে।
শীতকাল আসার আগেই হাত-পা-ঠোঁট ও ত্বকের যত্ন নিতে হবে।
[আরও পড়ুন: অন্তঃসত্ত্বা ইয়ামি গৌতম! ওড়না দিয়ে বেবিবাম্প ঢাকার চেষ্টা নায়িকার? ভাইরাল ভিডিও ]
ঘরোয়া পদ্ধতিতে প্রতিকার
যেহেতু একটি সামান্য বাতদোষ প্রকুপিত হওয়ার জন্য হয়ে থাকে তাই খাদ্য তালিকা, জীবনশৈলী এবং কিছু আচার-আচরণ পালন করতে হবে। বাতদোষে প্রধান প্রতিষেধক হল – যেকোনও তেল, ঘি, মাখন, দুধের মাঠা ইত্যাদি। শুধুমাত্র স্থানিক প্রয়োগ নয়, পথ্য ও অপথ্যের বিশেষ ভূমিকা আছে সেটা মাথায় রাখতে হবে।
শীতকালে ভালো থাকার জন্য প্রকৃতি তার সম্ভার নিয়ে হাজির হয়। মরশুমি শাকসবজি, ফল-মূল খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। এতে ভিটামিনের অভাব দূর হবে। খাদ্যতালিকাতে টক ফল রাখতে হবে। তাতে ভিটামিন-সি-র অভাব দূর হবে। এক্ষেত্রে আমলকী একটু করে খাওয়া বিশেষ উপকারী। হালকা রৌদ্রস্নানে ভিটামিন-ডি-র অভাব দূর করবে।
যিনি একজিমা, সোরিয়াসিস ইত্যাদি চর্মরোগে ভুগছেন তাঁরা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করাবেন। এই সমস্ত রোগের ক্ষেত্রে শীতকালে রুক্ষতা ও শুষ্কতার জন্য পা-ফাটা ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।
পা-ফাটা নিয়ে যাঁরা ভুগছেন, তাঁরা অবশ্যই রাত্রে শোয়ার আগে হালকা গরমজলে এক চিমটে সোহাগার খই অথবা নিমপাতা দিয়ে ১০-১৫ মিনিট সেঁক দিন। সেঁক দেওয়ার পর নারকেল তেল দিয়ে মালিশ করতে হবে। নারকেল তেল ত্বকের শুষ্কতা ও রুক্ষতা নিরাময়ে শ্রেষ্ঠ।
নারকেল তেলের বদলে শতধৌত ঘৃত ব্যবহার করা যেতে পারে। শতধৌত ঘৃত বাড়িতে তৈরি করা যায় বা বাজারে সহজেই পাওয়া যায়। গাওয়া ঘি-কে জলে বারবার ধুয়ে নিতে হয়, একশতবার ধোয়া হয় বলে একে শতধৌত ঘৃত বলে। শতধৌত ঘৃতের সঙ্গে অল্প পরিমাণে হলুদ, যষ্ঠীমধু, নিম, চন্দন ইত্যাদি পরিমাণমতো মিশিয়ে দিনে একবার প্রলেপ দিলে পুরনো পা-ফাটা রোগে বিশেষ উপকার পাওয়া যায়।
বাড়িতে একটি বিশেষ ব্যবস্থা তৈরি করা যেতে পারে। নারকেল তেল ১০০ মিলি মিটার পরিমাণ নিয়ে গরম করে তাতে ২০ গ্রাম মতো মৌচাক ভাঙা মোম মেশাতে হবে। এর সঙ্গে ৫ মিলিমিটার মতো হলুদের রস দিতে হবে। দিনে ২ বার কমপক্ষে পায়ে লাগালে উপকার।
এছাড়া ঘরোয়াভাবে ঘৃতকুমারীর শাঁস প্রয়োগ করা যেতে পারে। ঘৃতকুমারীর রস ১০ মিলিলিটার মতো তাজা সেবন করা যেতে পারে। এতে লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
বিভিন্ন আয়ুর্বেদিক ঔষধ যেমন – জাত্রাদি তৈল, জাত্রাদি ঘৃত, পিণ্ড তৈল স্থানিক প্রয়োগের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। আরোগ্যাধাদি ক্বাথ বা মহামঞ্জিঠাদি ক্বাথ (১০ মিলিলিটার) দিনে ২ বার সেবন কমপক্ষে ৬-১২ সপ্তাহ সেবন করলে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। সঠিকভাবে ত্বকের যত্ন, শীতকালীন ঋতুচর্যা, যেমন শীতবস্ত্র ব্যবহার, মোজা ব্যবহার ইত্যাদি পদক্ষেপ করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।