শাহজাদ হোসেন, ফরাক্কা: সাড়ে তিনশো বছরের ইতিহাসের সাক্ষী নিমতিতার জমিদার বাড়ি। পলাশির যুদ্ধ থেকে স্বাধীনতার শেষ সংগ্রাম, স্বাধীন বাংলা থেকে পরাধীনতা, আর সেই পরাধীনতা পেরিয়ে ফের স্বাধীনতার সূর্যোদয়ের সাক্ষী থেকেছে মুর্শিদাবাদের এই সুবিশাল জমিদার বাড়ি। শুধু রিয়েল নয়, রিললাইফের একের পর এক মাইলস্টোনের সাক্ষীও এই বিশাল প্রাসাদটি। এখানেই শুটিং হয়েছে ‘দেবী’, ‘তিনকন্যা’, ‘সমাপ্তি’। পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সিনেমা ‘জলসাঘর’ নির্মিত হয়েছিল এই নিমতিতা জমিদার বাড়িতে। সেই জমিদার বাড়িই হেরিটেজের তকমা পেয়েছে। সেজে উঠছে পর্যটন কেন্দ্র রূপে।
প্রায় ৩৫৬ বছর আগে জমিদার গৌরসুন্দর চৌধুরী ও দ্বারকানাথ চৌধুরী গড়ে তোলেন নিমতিতা জমিদার বাড়ি। সিংহ দরজা থেকে দুর্গা মন্দির, সুবিশাল ছাদ থেকে জলসাঘর, কী ছিল না সেখানে!বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম নিমতিতা জমিদার বাড়িতে এসেছিলেন। সন্ধে নামতেই জমিদার বাড়ি অন্যরুপে সেজে উঠত। বসত নাটকের আসর। এখানেই তৈরি হয়েছে একাধিক চলচ্চিত্র। ইতিহাসের সাক্ষী বহন করে চলেছে নিমতিতা জমিদার বাড়ি। বর্তমানে নিমতিতা জমিদার বাড়ি তার জৌলুস হারিয়েছে। জরাজীর্ণ অবস্থা। নিমতিতা জমিদার বাড়িকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দিয়ে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তোলার দাবিতে সরব হন স্থানীয় বাসিন্দারা।
[আরও পড়ুন: কয়লা কাণ্ডে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ, হাসিমুখে ED দপ্তর থেকে বেরলেন অভিষেকপত্নী রুজিরা]
মুর্শিদাবাদ জেলা ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের সম্পাদক অরিন্দম রায় জানান, “বিগত কয়েকবছর ধরে ঐতিহাসিক নিমতিতা জমিদার বাড়ি সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য আমরা বিভিন্ন দপ্তর ও জমিদার বাড়ির সদস্যদের কাছে লিখিত আবেদন করেছিলাম। এই দাবিতে নিমতিতা জমিদার বাড়ি অভিযান ও জমায়েত করা হয়। জেলা প্রশাসনের কাছে দু’বার লিখিত আবেদন করি হেরিটেজ স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নিমতিতা জমিদার বাড়ির সামনে একটি লিখিত সরকারি বোর্ড বসানোর জন্য। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে প্রশাসন এই বোর্ড বসানোতে আমরা খুশি।” পর্যটনের উন্নয়নের স্বার্থে ও ঐতিহ্য রক্ষার লক্ষ্যে হেরিটেজ নিয়ম মেনে ঐতিহাসিক বাড়িটি সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য জমিদার পরিবারের বর্তমান সদস্য ও জেলা প্রশাসনের কাছে আমরা আবেদন জানানো হয়েছে।
নিমতিতা জমিদার বাড়ির বর্তমান সদস্য রবীন্দ্রনারায়ন চৌধুরী বলেন, “ঐতিহাসিক নিমতিতা জমিদার বাড়ি সংস্কার ও সংরক্ষণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমরা পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করে আসছি বিভিন্ন মহলে। ওখানে একটা হেরিটেজ বোর্ড লাগানোর আবেদন ও করেছি। অবশেষে, মুর্শিদাবাদ জেলা ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিক ভাবে লেগে থেকে প্রশাসনকে দিয়ে এই কাজটি করায় আমরা খুশি।” মুর্শিদাবাদ জেলা পর্যটন আধিকারিক জয়ন্ত মণ্ডল বলেন, “জেলা শাসকের নির্দেশে হেরিটেজ ঘোষণা হওয়া নিমতিতা জমিদার বাড়ির সামনে একটি নোটিস বোর্ড লাগানো হল। জমিদার বাড়ির সদস্যরা ও মুর্শিদাবাদ জেলা ইতিহাস ও সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র-র পক্ষ থেকে এই মর্মে লিখিত আবেদন করা হয়েছিল। সাধারণ মানুষদের এই হেরিটেজ ভবনে যথোচিত রক্ষণাবেক্ষণের নিয়ম সম্পর্কে অবগত করতে এই বোর্ড লাগানো হল।”