শেখর চন্দ, আসানসোল: পাহাড়-জঙ্গল আর নীল জলরাশি মাইথনের পর্যটন শিল্পে নয়া দিশা দেখাচ্ছে ‘পলাশ উৎসব’। মন কেমন করা দোলে বসন্ত প্রেমিকদের অনেকেই একদিনের জন্য যান কবিগুরুর শান্তিনিকেতনে। কিন্তু শান্তিনিকেতনের বাইরে বসন্ত উপভোগের নতুন হাতছানি এখন ছোটনাগপুর মালভূমির ‘পলাশ উৎসব’। রূপনারায়ণপুরের একটি সংস্থা আয়োজিত ‘পলাশ উৎসব’ জনপ্রিয় হচ্ছে ক্রমশ।
এবার এই ‘পলাশ উৎসব’ পা দিচ্ছে ১৭ বছরে। সোশ্যাল মিডিয়ায় চলছে এ নিয়ে প্রচার। মাইথনের জল, জঙ্গল আর পাহাড়ের মাঝে বসন্ত উপভোগের নয়া ঠিকানা। নৌকো করে দামোদর পেরিয়ে দ্বীপের মধ্যে জঙ্গলের ভেতর এই উৎসব হয়। এখানে ফকিরি গানের তাল কাটে না বেসুরো গলায়। এখানে সোনাঝুরির ছায়ায় ফুটে থাকা জংলি ফুল মাড়িয়ে দেয় না কাচ ভাঙা মদের বোতল। শান্তির নির্জনতা খানখান হয় না যেখানে। ৭ মার্চ দোল উৎসবের শুরু। ওইদিন ভোর ৬ টা থেকে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে, চলবে রাত পর্যন্ত।
[আরও পড়ুন: অভাবের তাড়নায় বন্ধ লেখাপড়া, ভাইয়ের সঙ্গে মাকেও বোর্ডের পরীক্ষায় বসাল তরুণী]
মাইথনের কাছে ছোট্ট দ্বীপ, কেওটজালির পলাশ বন। আসানসোল থেকে যেতে হলে রূপনারায়ণপুর পেরিয়ে বৃন্দাবনি গ্রাম হয়ে, নৌকো করে দামোদর পেরিয়ে পৌঁছতে হবে কেওটজালির পলাশ বনে। নিঝুম জঙ্গলের মাঝে চলে উৎসব। গানে-কবিতায়-নাচে-গল্পে-ছবি আঁকার আনন্দে, এক সঙ্গে হুল্লোড়, খাওয়া-দাওয়া। পলাশ প্রকৃতিকে আপন করে নেওয়ার উৎসব। আর পাঁচটা বং-ক্রাউড থেকে একটু আলাদা। এমন এক জঙ্গল যেখানে আগুন-রঙা পলাশ তো আছেই, সঙ্গে দেখা মিলবে হলুদ পলাশেরও। রোজগার মাপা জীবনের বাইরে জঙ্গলে অন্য এক অ্যাডভেঞ্চার। সংস্থার পক্ষে দিবাকর দাস জানান, “কবিগুরুর বসন্ত উৎসবের ঘরানা, সীমান্তের এই এলাকায় ছিল না। হিন্দি ভাষাভাষীদের এলাকায় বরং ফাগুয়ার চল রয়েছে। একটা দিন অন্যভাবে কাটানোর এমন উৎসব সম্ভবত এ বাংলায় খুব একটা দেখা যায় না। তাই প্রকৃতিকে ভালোবেসে ‘পলাশ উৎসব’ জনপ্রিয় হচ্ছে ক্রমশ। কলকাতা হোক বা জেলা, যে কেউ আসতে পারেন, পরিবার বা আত্মীয় নিয়ে। হঠাৎ করে পৌঁছে গেলেও বিমুখ হবেন না।”
বেশ কয়েক বছর ধরে এই অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করছেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী রত্না সোম। তিনি জানান, বসন্ত এসে গেলেই অপেক্ষা থাকে পলাশ উৎসবের। ২০০৫ সালে ৩০ জনকে নিয়ে শুরু করা এই উৎসবে এখন অংশগ্রহণ করেন ৫০০ জন। সারা বছর প্রকৃতির পলাশ বনকে আগলে রাখে রূপনারয়াণপুরের এই সংস্থা। নিয়মিত পত্রিকাও প্রকাশিত করে তাঁরা, নাম ‘পলাশ কথা’। সেখানে, লেন্সবন্দি পলাশের সৌন্দর্যের সঙ্গে থাকে পলাশ নিয়ে নানা কথা।