সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতার পর প্রায় ৮০ বছর বয়সে প্রয়াত হয়েছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট তথা সেনানায়ক জেনারেল পারভেজ মুশারফ (Pervez Musharraf)। রবিবার দুবাইয়ের হাসপাতালে তাঁর জীবনাবসান হয়েছে। জানা গিয়েছে, তাঁর শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি একে একে বিকল হয়ে পড়ছিল। ভেন্টিলেশনে (Ventilation) রাখা হয়েছিল মুশারফকে। দুবাইয়ের হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অ্যামাইলয়েডোসিসে (Amyloidosis) ভুগছিলেন তিনি। কী এই রোগ? একবার জেনে নেওয়া যাক।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, এটি একটি বিরল রোগ। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের টিস্যুতে জমতে থাকে অ্যামাইলয়েড নামে একটি প্রোটিন (Protein)। আর তা ধীরে ধীরে অঙ্গগুলিকে বিকল করে দিতে থাকে। স্নায়ু, কিডনি, যকৃৎ, হৃদপিণ্ডের মতো অঙ্গ কর্মক্ষমতা হারায়। যে অঙ্গে অ্যামাইলয়েড জমতে থাকে, সেই অনুযায়ী নানা ইঙ্গিত দেয় শরীর। যেসব শারীরিক সমস্যা অ্যামাইলয়েডের উপস্থিতি নিয়ে সংশয় তৈরি করতে পারে, তা হল –
- দুর্বলতা ও ক্লান্তি
- চোখের পাতার চারপাশে মেদ
- জিভে ক্ষত
- শ্বাসকষ্ট
- হাত-পা ব্যথা, ফুলে যাওয়া
- ডায়রিয়া বা মলের সঙ্গে রক্তপাত
এই রোগের বস্তুত কোনও প্রতিকার নেই। কেমোথেরাপি (Chemotherapy)কিংবা স্টেম সেল থেরাপি, প্রচুর ওষুধ প্রয়োগ করে রোগীর কষ্ট দূর করার চেষ্টা করে থাকেন চিকিৎসকরা। তবে আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞান এখনও পর্যন্ত অ্যামাইলয়েডোসিসের কোনও ওষুধ আবিষ্কার করতে পারেনি।
[আরও পড়ুন: সরকারি চাকরিতে পিতার জাতি পরিচয়েও মেয়েরা সংরক্ষণের সুবিধা পাবেন, রায় আদালতের]
চিকিৎসকরা বলছেন, কোনও কোনও জটিল রোগের হাত ধরে শরীরে থাবা বসাতে পারে অ্যামাইলয়েডোসিস। তাতে সংশ্লিষ্ট রোগের চিকিৎসা হলে অ্যামাইলয়েডোসিস ধীরে ধীরে সেরে যেতে পারে। আবার কোনও কোনও ধরনের অ্যামাইলয়েডোসিস প্রাণঘাতী। অনেক সময় জিন মিউটেশনের কারণে হতে পারে এই রোগ। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এর কারণ অজ্ঞাত। শরীরের অঙ্গ বিকল করতে করতে মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের ৭০ শতাংশই পুরুষ।
[আরও পড়ুন: ফের BJP শিবিরে ধাক্কা, অভিষেকের হাত ধরে তৃণমূলে যোগ দিলেন আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক]
মুশারফেরও হয়েছিল তেমনই। ২০২২ সালে মুশারফের এই রোগের কথা প্রকাশ্যে আনে তাঁর পরিবার। বলা হয়েছিল, যে রোগে আক্রান্ত পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, তা নিরাময়যোগ্য নয়। তখন থেকেই ক্রমশ শরীর ভেঙে পড়তে থাকে ৭৯ বছর বয়সী প্রাক্তন সেনানায়কের। ভেন্টিলেশনে কাটিয়েছেন দীর্ঘদিন। শেষপর্যন্ত সেই অ্যামাইলয়েডোসিসই তাঁর প্রাণ কেড়ে নিল। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ, উল্লেখিত যে কোনও শারীরিক সমস্যা অবহেলা করবেন না। কে বলতে পারে, সামান্য ক্লান্তি, হাত-পা ব্যথা কিংবা শ্বাসকষ্ট হয়ত ডেকে আনছে অ্যামাইলয়েডোসিসের মতো প্রাণঘাতী অসুখ?