অভিরূপ দাস: কালকেও ছিল গমগমে আওয়াজ। আজ বেরোচ্ছে চিঁ চিঁ করে। কারও মুখ নড়ছে। কিন্তু শব্দ বেরোচ্ছে ছিটেফোঁটা। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে রয়েছে ঘুসঘুসে জ্বর। নাক দিয়ে জল গড়ানো। দমক দিয়ে কাশি। হামাগুড়ি দেওয়া শিশু, স্কুলপড়ুয়া কিশোর, মধ্যবয়স্ক থেকে অশীতিপর বৃদ্ধ — বাংলার ঘরে ঘরে এখন এই এক অসুখ। চিকিৎসকরা বলছেন, এমন শরীর খারাপের নেপথ্যে ৮০% দায়ী ভাইরাস। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাকটিরিয়া ঘটিত সংক্রমণও ঘটছে।
অসুখ যেমনই হোক চিকিৎসকদের সাবধানবাণী, ডাক্তার না দেখিয়ে নিজে নিজে অ্যান্টিবায়োটিক নয়। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নিশান্তদেব ঘটকের জানান, ভাইরাল অসুখে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে না। উলটে হিতে বিপরীত। এমনিতেই ভাইরাল জ্বরে রোগীর খিদে নেই। তার উপর অ্যান্টিবায়োটিক আরও দুর্বল করে দিচ্ছে। এ সময় অ্যান্টিবায়োটিকের চেয়ে সুষম আহার জরুরি। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাসের চেম্বার উপচে পড়ছে সর্দি-কাশি গলা ব্যথার রোগীতে। চিকিৎসক জানিয়েছেন, রোগীদের মধ্যে শুকনো কাশির প্রাদুর্ভাব মারাত্মক। কাশি থামাতে দিতে হচ্ছে অ্যান্টি অ্যালার্জিক জাতীয় ওষুধ।
[আরও পড়ুন: মাতৃদুগ্ধে কীটনাশক? উত্তরপ্রদেশের গ্রামে ১০ মাসে ১১১ শিশুর মৃত্যু ঘিরে রহস্য!]
ভাইরাস না ব্যাকটিরিয়া? বোঝা যাবে কীভাবে?
সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. যোগীরাজ রায়ের বক্তব্য, গলা ব্যথা যদি মূল উপসর্গ হয় সেক্ষেত্রে ব্যাকটিরিয়া দায়ী। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ইনফ্লুয়েঞ্জা এ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত দেখা যাচ্ছে। আক্রমণ করছে বরদেতেলা পারটাসিস ব্যাকটিরিয়া। ‘‘এ ব্যাকটিরিয়ার সংক্রমণে হুপিং কাশি দেখা যায়।’’ বলে জানিয়েছেন ডা. যোগীরাজ রায়।
তবে গলার আওয়াজ উধাও হয়ে যাওয়ার কারণ ল্যারিনজাইটিস। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিশান্তদেব ঘটকের কথায়, ‘‘ল্যারিংস অর্থাৎ স্বরযন্ত্র বা ভোকাল কর্ড। এই অংশে প্রদাহ হলেই তাকে বলা হয় ল্যারিনজাইটিস। সাধারণত ভাইরাস আক্রমণ করার জন্যেই এই প্রদাহ তৈরি হচ্ছে।’’
গলা দিয়ে যাঁদের আওয়াজ বেরোচ্ছে, আপাতত তাঁদের জোর করে কথা বলতে বারণ করছেন চিকিৎসকরা। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞর কথায়, মূলত ভাইরাল ফ্লু-তে আক্রান্ত হচ্ছেন অধিকাংশ। চিন্তা করার কিছু নেই। সাতদিনের মধ্যে চাঙ্গা হচ্ছে শরীর। খুব কাশি হলে, চিকিৎসকের পরামর্শে নিতে হবে নেবুলাইজার বা ইনহেলার।
শীত থেকে আচমকা গরম। আবহাওয়ার এই তারতম্যে মাথাচাড়া দিচ্ছে ভাইরাস। আক্রমণ করছে রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট-কে। যা শুরু হয় নাক থেকে। শুরুতেই তাই নাক দিয়ে জল গড়াচ্ছে। তারপর আসছে ফ্যারিংসে। গলায় ব্যথা। স্বরযন্ত্রে সংক্রমণ হলে আওয়াজ বেরোচ্ছে না। ঘরোয়া টোটকা হিসেবে মধু-তুলসীপাতা ব্যবহার করার নিদান দিয়েছেন ডা. ঘটক।
গলা খুশখুশে গরম জলে ভাপ নেওয়ার নিদান দিয়েছেন চিকিৎসকরা। জ্বর এলেও স্নান না করার প্রবণতা মারাত্মক। ডা. নিশান্তদেব ঘটকের কথায়, এ অসুখে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা অত্যন্ত জরুরি। জ্বর এলে ক্যালপল জাতীয় ওষুধ খান। কিন্তু স্নান না করে থাকবেন না।
দাওয়াই
চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে অ্যান্টিবায়োটিক নয়।
কাশি না কমলে বুকের এক্স রে।
স্নান করতে হবে রোজ।
ঘরোয়া টোটকা মধু-তুলসীপাতা।
দিনে দু’বার করে ভেপার।
প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে জল খেতে হবে দিনে সাড়ে তিন লিটার।
শিশুদের ক্ষেত্রে দেড় লিটার।