অভিরূপ দাস: নতুন জামা, বারমুডা, নিদেনপক্ষে একটা স্যান্ডো গেঞ্জি। পয়লা বৈশাখে (Poila Baisakh 2022) আমবাঙালির একটা কিছু তো নতুন হবেই। এরপর নববর্ষের সকালে পাটভাঙা জামার গন্ধ গায়ে মেখে, হাতে নতুন ক্যালেন্ডার। তার সঙ্গে মিষ্টির বাক্স আর পঞ্জিকার কম্বিনেশন অমোঘ। অবশ্য পঞ্জিকার চাহিদা এখন অনেকটাই নিভু নিভু। প্রকাশকরা বলছেন, চাহিদার ধরন বদলে গিয়েছে। জামা বদলে ফেলেছে বাঙালির ‘ভাল দিন’ বাতলে দেওয়ার হ্যান্ডবুকও। চেনা মানুষকে দূর থেকে যেমন চেনা যায়। চেনা পঞ্জিকাও তাই। বেণিমাধব শীল, গুপ্তপ্রেসের ফিকে গোলাপি। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্তের গাঢ় নীল। নতুন গজানো ত্বকের রঙে মদন গুপ্তের ফুল পঞ্জিকা। পুরনো সেই জামা ছেড়ে তা এখন ঢুকে পড়ছে মুঠোফোনের স্টোরেজে।
বার, তিথি, নক্ষত্র, যোগ, করণ–বারো মাসের প্রতিদিনের পাঁচরকম তথ্য দেখে নেওয়া যাচ্ছে এক ক্লিকে। ইংরেজি ১৮৬৯ সালে পথ চলা শুরু করেছিল গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকা। দাম ছিল দু’আনা। এই দুহাজার বাইশে সেই দাম দু’শো টাকা। বেহালার পিয়ালি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিয়ে হয়েছে সদ্য। তাঁর কথায়, পঞ্জিকা তো লাগে অবশ্যই। বাড়িতে টুকিটাকি পুজো লেগেই থাকে। তবে কাগজের পাতায় নয়, অন্যান্য বইয়ের মতো E-বুক হিসাবে থাকলে ভাল। মোবাইলেই দেখে নেব কোজাগরী পূর্ণিমা ক’টায় লাগছে। মহাষ্টমীর অঞ্জলি ক’টা পর্যন্ত দেওয়া যাবে।
[আরও পড়ুন: ‘মরলেও কাউকে জানাবি না, সবাই লুটেপুটে খাবে’, মায়ের পরামর্শ মেনেই ৬ মাস ধরে দেহ আগলে মেয়ে]
গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার কর্ণধার অরিজিৎ রায়চৌধুরীর কথায়, “পিয়ালির মতো অগুনতি মানুষের কথা মাথায় রেখেই গুপ্তপ্রেস পঞ্জিকার PDF ভার্সন বেরিয়েছে নববর্ষে। দাম সেই একই। দু’শো টাকা। যাঁরা পিডিএফ ভার্সন নিচ্ছেন বইটা তাঁদের মুফতে দিচ্ছি।” বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকার দাম দু’শো ত্রিশ টাকা। এখনও তাদের PDF পঞ্জিকা আসেনি। সংস্থার কর্ণধার লাহিড়ীবাবুর কথায়, “শীঘ্রই আসবে। PDF হওয়ার সুবাদে কানাডার প্রবাসী বাঙালিও বৈশাখের সকালে ভ্যাঙ্কুবারে বসে পঞ্জিকার সফট কপি ডাউনলোড করে নিচ্ছেন।”
এহেন PDF-এর কিছু সমস্যাও রয়েছে। পূর্ণচন্দ্র শীল ডায়রেক্টরি পঞ্জিকার প্রকাশক জানিয়েছেন, পিডিএফ জনপ্রিয় হলেও কপিরাইট থাকছে না। কীরকম? পিডিএফ ভার্সন পাসওয়ার্ড প্রোটেক্টেড হলেও লাভ হচ্ছে না। একজন কিনছেন, আত্মীয় পরিজনদের পাসওয়ার্ড বলে দিচ্ছেন। মেয়ের বিয়ে কিংবা ছেলের পৈতে কবে দেবেন? তাঁরা সেখান থেকেই দেখে নিচ্ছেন।
শেষ ভরসা একটা জায়গাতেই। গোলাপি বইয়ের সঙ্গে দৌড়ে এখনও পিছিয়ে রয়েছে গুগল (Google)। কার্তিকে মেয়ের বিয়ে দেবেন। গুগল ঘেঁটে তারিখ-টারিখ সব ঠিক। শেষ মুহূর্তে পঞ্জিকার সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে গিয়ে মাথায় হাত। আগে-পিছে সাতদিনের মধ্যে কোনও বিয়ের তারিখ নেই। গুগলকে ভরসা করতে গিয়ে নাগেরবাজারের গৌরাঙ্গ পোড়েলের মতো মাথায় হাত পড়ে অনেকেরই। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্তের প্রকাশক লাহিড়ীবাবুর কথায়, গুগলে ভরসা করে ঠকে যাওয়ার ঘটনা অহরহ। নববর্ষে একটা পঞ্জিকা তাই মাস্ট।