বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত, গান্ধীনগর: খাতায় কলমেই ‘ড্রাই স্টেট’। আদপে সুরাপ্রেমীদের স্বর্গরাজ্য মোদির রাজ্য গুজরাট। প্রতিবছর মদ বিক্রি করে কয়েকশো কোটি কোষাগারে তুলছে গুজরাটের বিজেপি সরকার। সরকারি দোকান থেকেই বিক্রি হচ্ছে মদ। যে কোনও রাজ্যের তুলনায় তিনগুণ দামে। পুরো অর্থই যাচ্ছে সরকারের ঘরে। আর বলা হয় গুজরাটে নাকি মদ বিক্রি হয় না। তবে গুজরাটবাসীর জন্য নয়। বাইরের রাজ্য বা বিদেশ থেকে আসা সুরাপ্রেমীদের আমোদের কোনও খামতিই রাখা হয়নি মোদিগড়ে। তাই ভোট বাজারে প্রতিদিনই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে হাজার হাজার লিটার মদ বাজেয়াপ্ত করছে কমিশন ও আবগারি দপ্তর। ভোটাদের মধ্যেও দেদার মদ বিলি হচ্ছে বলে অভিযোগ।
কাজের প্রয়োজনে অথবা ভ্রমণের খাতিরে গুজরাটে (Gujarat) যাওয়ার কথা শুনলেই শুকিয়ে মুখ আমশি হয় সুরাপ্রেমীদের। কিন্তু যে কোনও কারণেই হোক যাঁরা গুজরাটে গিয়েছেন তাঁদের অভিজ্ঞতা কিন্তু বলছে অন্য কথা। সকাল আটটা থেকেই দোকান খুলে বসে থাকে রাজ্যের আবগারি দপ্তর। রাত আটটা পর্যন্ত। সবই সরকারি দোকান। রাজ্যের প্রতিটি শহরে এরকম খুলে রাখা হয়েছে চার থেকে পাঁচটি দোকান। সেখান থেকেই বিক্রি করা হচ্ছে নামী দামি, দেশি-বিদেশি মদ। মদের দোকানের ভিতর ছাড়াও বাইরে বসে থাকেন আবগারি দপ্তরের আধিকারিরকরা। কিন্তু পকেট ভরতি টাকা নিয়ে গেলেই পছন্দমতো মদ হাতে পাবেন না। তারজন্য মানতে হয় কয়েকটি নিয়ম।
[আরও পড়ুন: ‘উচ্চ মাধ্যমিক পাশ, MBA ডিগ্রি ভুয়ো’, অভিষেকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন শুভেন্দুর]
কাজের খাতিরে বা বেড়াতে গেলে যে ট্রেন, বাস বা বিমানে গিয়েছেন তার টিকিট দেখান বাধ্যতামূলক। এরসঙ্গে থাকতে হবে ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড অথবা পাসপোর্ট। ফটো কপির পাশাপাশি অরিজিনাল রাখতে হবে পকেটে। দোকানের সামনে বসে থাকা আধিকারিকদের পরিচয়পত্র ও টিকিট দেখাতে হবে। দেখালেই একটি ছাপান আবেদনপত্র দেবেন আধিকারিকরা। এছাড়াও আগবারি দপ্তরের ওয়েবসাইটে সমস্ত নথি দিয়ে আবেদন করতে হবে। যাঁরা নিরক্ষর বা নেট ব্যবহারে পারদর্শী নন তাঁদের আবেদনপত্র আবগারি দপ্তরের আধিকারিকরাই পূরণ করে দেন। আবেদন পূরণ করার পর দোকানে ঢুকে অর্থ দিলেই মিলবে পছন্দমতো মদের বোতল। তবে দাম শুনলে চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার জোগার হবে।
সাধারণত পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও দক্ষিণ ভারতের দুই রাজ্য-কেরল ও কর্ণাটকে বিদেশি মদের দাম সবচেয়ে বেশি। দেশি মদ জনপ্রিয় করতেই এই তিন সরকার বিদেশি মদের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক নিয়ে থাকে। কিন্তু গুজরাটে দাম এই তিন রাজ্যের তুলনায় আড়াই থেকে তিন গুণ। এক বোতল মদ থেকে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শুল্ক আদায় করে থাকে গুজরাত সরকার। অর্থাৎ অন্যান্য রাজ্যে তিন বোতল মদ বিক্রি করে যে পরিমাণ অর্থ সরকার কোষাগারে তোলে এক বোতল মদ বিক্রি করে সেই পরিমাণ অর্থ ঘরে তোলে ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেলের সরকার।
[আরও পড়ুন: ‘সিবিআই-ইডি-এনআইএ’র জামিন করানোর নামে তোলাবাজি শুভেন্দুর’, বিস্ফোরক অভিষেক]
এখানেই শেষ নয়। এইসব দোকান থেকেই ঘুরপথে স্থানীয়দের কাছেও পৌঁছে যায় মদ। অন্যরাজ্য বা বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের যাঁরা সুরাপ্রেমী নন তাঁদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে দোকান থেকে কেনা হয় মদের বোতল। স্থানীয়দের কাছে চড়া দামে সেই মদ বিক্রি করে আবগারি দপ্তর ও হোটেলের কর্মচারীরা। তাই যে কোনও গাড়ির চালক বা হোটেল কর্মচারীই মদ সরবরাহ করেন। তবে দোকানের তুলনায় অনেক বেশি দামে। এইভাবে মদ বিক্রি করে সরকার বছরে কয়েকশো কোটি টাকা কোষাগারে তুলছে বলে জানালেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আবগারি আধিকারিক। তাঁর মতে, প্রতিদিনই ব্যবসার কাজে ভিন রাজ্য থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ গুজরাটে আসেন। বিদেশি ব্যবসায়ীরাও আসেন। ফলে দিনের ১২ ঘণ্টা দোকান খোলা রেখেও সামাল দেওয়া যায় না। সেইসঙ্গে প্রতিবেশী রাজ্য রাজস্থান থেকেও চোরাপথে রাজ্যে প্রচুর মদ ঢোকে গুজরাটে। যদিও সেখান থেকে সরকারের কোনও অর্থ কোষাগারে যায় না বলে জানান তিনি।