নিজস্ব সংবাদদাতা, রানিবাঁধ: একসময়ে মাওদের অবাধ বিচরণের এলাকায় এখন পর্যটন প্রিয় বাঙালির আনাগোনা। তাই শাল মহুয়ার জঙ্গলঘেরা রানিবাঁধের আদিবাসী গ্রামে হোম স্টে গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন।
চারিদিকে শাল মহুয়ার ঘন জঙ্গল। আঁকাবাঁকা রাস্তা। লম্বা লম্বা গাছের সারি। আর তারই মাঝে চেকড্যাম। দক্ষিণ বাঁকুড়ার মুকুটমণিপুর তো পর্যটকদের কাছে অতি পরিচিত। তবে মুকুটমণিপুরের পাশাপাশি রানিবাঁধের সুতানের জঙ্গল, তালবেড়িয়ার ড্যামের আকর্ষণও পর্যটকদের চোখ টানছে।
শীতের মরশুম শুরু হয়েছে। বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ভিড় বাড়ছে। তাই পর্যটকদের সুবিধার জন্য এবার আদিবাসী গ্রামে হোম স্টে তৈরির পরিকল্পনা নিচ্ছে প্রশাসন। হোম স্টে-র জন্য ইতিমধ্যে রানিবাঁধের জঙ্গলঘেরা সুতান, ঝিলিমিলি, তালবেড়িয়া ড্যাম সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন প্রশাসনিক আধিকারিকরা। তবে এই হোম স্টে তৈরির এই উদ্যোগ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে রানিবাঁধ ব্লক প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
ছবি: সংগৃহীত।
বাম জমানায় রানিবাঁধের বারিকুল ও রাওতোড়া পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা কার্যত মাওবাদী অধ্যুষিত ছিল। ঘন জঙ্গল পথে রানিবাঁধ থেকে বারিকুল হয়ে বেলপাহাড়ি সীমানা ঘেঁষা এলাকা মাওবাদীদের রুট ছিল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জঙ্গলমহলের এই এলাকায় মাওবাদী জুজুতে একসময় পর্যটকদের আনাগোনা প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছিল। তবে একসময়ের মাওবাদীদের মুক্তাঞ্চল জঙ্গলমহলের এই এলাকার পটচিত্র পুরোপুরি পালটে গিয়েছে।
রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদলের পরে এই এলাকা এখন শান্ত। ধীরে ধীরে পর্যটকদের যাতায়াত শুরু হয়েছে। বিশেষ করে শীতের মরশুমে বহু দূরদূরান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন সুতান, ঝিলিমিলি, তালবেড়িয়া এলাকায়। তবে ঝিলিমিলিতে রিসর্ট থাকলেও এই এলাকায় পর্যটকদের রাত্রি যাপনের জন্য সেভাবে হোটেল, লজ নেই। ফলে পর্যটকরা এখানে এসে রাতে থাকতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েন। অনেকে মুকুটমণিপুরে বা খাতড়ায় থাকেন। গাড়ি ভাড়া করে এতটা পথ এসে রাত্রিযাপনের জন্য হোটেল বা লজ না পেয়ে ঘণ্টাখানেকের সফর শেষে তাঁদেরকে ফের ফিরে যেতে হয় মুকুটমণিপুর বা খাতড়ায়। তাই পর্যটকদের সুবিধার জন্য জঙ্গলমহলের আদিবাসী গ্রামে হোম স্টে তৈরি করতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
রানিবাঁধের বিডিও শিবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বাঁকুড়ায় বেড়াতে এসে বহু পর্যটক সুতান, ঝিলিমিলি এলাকায় আসেন। তালবেড়িয়া ড্যাম ঘুরতে যান। কিন্তু ওই এলাকায় কাছাকাছি থাকার ব্যবস্থা নেই। তাই পর্যটকরা এখানে এসে রাত্রিযাপন করতে চাইলেও পারেন না। তাই সুতান, ঝিলিমিলি, তালবেড়িয়া ড্যাম লাগোয়া এলাকায় আদিবাসী বাড়িতে হোম স্টে করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "কয়েকদিন আগে আমরা ওই গ্রামগুলিতে পরিদর্শন করেছি। গ্রামের পরিবেশ, বাড়ির পরিবেশ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হোম স্টে তৈরি হলে বাড়ির মালিকও লাভবান হবেন। এই হোম স্টে তৈরির পরিকল্পনা এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। কতগুলো বাড়িতে হোম স্টে করা যাবে তা এখনও ঠিক হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি ওই এলাকায় হোম স্টে তৈরি করার। এর ফলে শুধু পর্যটকরা নয় স্থানীয় বাসিন্দারাও উপকৃত হবেন।"