দেব গোস্বামী, বোলপুর: বিশ্বভারতীর উপাচার্যের মেয়াদ বৃদ্ধি করবেন না। বিগত পাঁচ বছর ধরে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর আমলেই নানা ঘটনায় বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। এই উপাচার্যের আমলেই ঐতিহ্যবাহী পৌষ মেলা ও বসন্ত উৎসব বন্ধ করা হয়েছে। তিনিই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে দখলদার বলেছেন। দিন দিন কলুষিত হয়েছে রবি ঠাকুরের বিশ্বভারতী। তাঁর উপাচার্যের পদের মেয়াদ বৃদ্ধি করলে শান্তিনিকেতনের পরিবেশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার মান অবনতির দিকে যাবে। আরও অবনমন হবে। এই মর্মেই বোলপুর-শান্তিনিকেতনের বাসিন্দারা সচিত্র ভোটার কার্ডের নম্বর দিয়ে ইমেল মারফত চিঠি দিয়ে আবেদন জানান পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি ও আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রীকে।
২০১৮ সালে অধ্যাপক বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বিশ্বভারতী উপাচার্যের পদে যোগদান করেন। চলতি বছরের ৮ই নভেম্বর তাঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে বলেই জানা যায়। শান্তিনিকেতনকে ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতি ঘোষণার পরই উপাচার্য তাঁর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য দিল্লিতে ইতিমধ্যেই দরবারও করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের একাংশের মত,”ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্য স্বীকৃতির যথাযথ কার্যকারিতায় উপাচার্যের মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য ১ বছর সময় চাওয়া হয়েছে। কারণ ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য কখনই এই গুরু দায়িত্ব ও আর্থিক দায়বদ্ধতা সঠিকভাবে পালন করতে পারবে না।”
[আরও পড়ুন: ‘হয় TMC নেতাকে গ্রেপ্তার, নয় CBI তদন্তের দাবিতে আদালতে যাব’, BJP কর্মী খুনে হুঙ্কার সুকান্তর]
বোলপুর-শান্তিনিকেতনের বাসিন্দা দেবাশিস দাস ও কাজল নাথরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করেন, “বিশ্বভারতীর উপাচার্য গত পাঁচ বছর ধরে একের পর এক তুঘলকি সিদ্ধান্ত জনকল্যাণমূলক নীতি সম্পূর্ণ বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। শান্তিনিকেতন আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র হওয়া সত্ত্বেও নিম্ন মধ্যবিত্ত, স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পৌষ মেলা ও বসন্ত উৎসব বন্ধ করে পথে বসিয়েছেন। ইতিপূর্বেই বিশ্বভারতীকে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা থেকে শুরু করে পর্যটকদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষিদ্ধ করেছেন। স্বনামধন্য অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে আক্রমণ থেকে শুরু করে বাঙালি জাতি ও দুর্গাপুজো সম্পর্কেও অবমাননাকর মন্তব্য করে উপাচার্য সমগ্র বাঙালি জাতিকে ক্ষুব্ধ করে তুলেছেন। তাই উপাচার্যের পদের মেয়াদ বৃদ্ধি করবেন না।”
অন্যদিকে সুনীল সিংহ, সুব্রত ভকত, আমিনুল হুদারা বলেন,”বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সময় কালেই ১৫০টি মামলা হয়েছে। এছাড়াও অধ্যাপক পড়ুয়াদের শোকজ সাসপেন্ড তো লেগেই আছে। ঐতিহ্যবাহী সমস্ত আচার অনুষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন তিনি। যিনি একের পর এক ঐতিহ্যগুলো ধ্বংস করছেন, তিনি কি করে বিশ্ববিদ্যালয়কে রক্ষা করতে পারেন। একের পর এক বিতর্ক অশান্তি তৈরি করে পরিকল্পিতভাবে রাজ্য ও কেন্দ্রের বিরোধিতা করে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্যেই জঘন্য রাজনীতি করেছেন। কোনওভাবেই বর্তমান উপাচার্যের পদের মেয়াদ বৃদ্ধি করবেন না।” কার্যত চিঠির মূল সারমর্মে উঠে এসেছে স্থানীয় মানুষের রুটি রুজির প্রশ্ন। যা উপাচার্যর তুঘলুকি সিদ্ধান্তে লাটে উঠেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বোলপুর-শান্তিনিকেতনবাসীর তরফে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে এমনই উল্লেখ করা হয়েছে। যদিও এ প্রসঙ্গে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।