সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রিফর্ম-পারফর্ম-ট্রান্সফর্ম। তৃতীয়বার সরকারে আসার আগেই নিজের 'ভিশন' স্পষ্ট করে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তাছাড়া তিনি যে রিফর্মের মন্ত্রে বিশ্বাস করেন, সেটা তাঁর প্রথম দুবারের সরকার চালানোর ধরনেই বোঝা গিয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হল, তৃতীয়বারও একই দক্ষতায়, একই দ্রুততার সঙ্গে সেই রিফর্ম অর্থাৎ সংস্কারমুখী পদক্ষেপগুলি করতে পারবেন মোদি?
বস্তুত, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদিকে (Narendra Modi) এ পর্যন্ত সংখ্যালঘু সরকার, বা মিলিজুলি সরকার চালাতে হয়নি। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীনও তিনি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সরকার চালিয়েছেন, আবার দিল্লিতেও দুবার মোদির পক্ষে ছিল নিরঙ্কুশ জনরায়। কিন্তু এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আলাদা। দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার লক্ষ্য নিয়ে নেমে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতাও জুটল না গেরুয়া শিবিরের ভাগ্যে। সরকার চালানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এমন দুই 'বন্ধু'র উপর নির্ভর করতে হচ্ছে, যারা অতীতে একাধিকবার তাঁর সঙ্গে 'বিশ্বাসঘাতকতা' করেছেন। নীতীশ কুমার বা চন্দ্রবাবু নায়ডু কেউই যে নেতা হিসাবে মোদিকে বিশেষ পছন্দ করেন না, সেটা কারও অজানা নয়।
[আরও পড়ুন: মহারাষ্ট্রে বিপর্যয় বিজেপির, ইস্তফা দিতে চান ফড়নবিস]
অতএব সরকার চালাতে গিয়ে আগামী পাঁচ বছর বারবার প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হতে পারে নরেন্দ্র মোদিকে। যে কোনও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে গেলে অপেক্ষা করতে হবে শরিকদের অনুমতির। নরেন্দ্র মোদি এতদিন রাতারাতি নোট বাতিল বা ৩৭০ ধারা রদের মতো সিদ্ধান্ত অবলীলায় নিতে পারতেন কারণ তিনি আত্মনির্ভর ছিলেন। কোনও সিদ্ধান্তের জন্য তাঁকে জবাবদিহি করতে হত না। আবার কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেষ আলোচনাও করতে হত না। সমস্যা হল, এবার দুটোই করতে হবে। সেই সঙ্গে সহ্য করতে হবে শরিকদের বায়নাক্কা। নিজের মন্ত্রিসভাতেও প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র অধিকার থাকবে না। শোনা যাচ্ছে, মন্ত্রক বণ্টন নিয়ে নাকি ইতিমধ্যেই আবদার-অনুরোধ, বায়নাক্কা-হুমকি শুরু হয়ে গিয়েছে।
জোট সরকার হওয়ায় এনডিএর ঘোষিত যে এজেন্ডা সেসব পূরণ করতে গিয়েও কালঘাম ছুটবে মোদি-শাহদের (Amit Shah)। ইতিমধ্যেই রামমন্দির তৈরি, তিন তালাক বাতিল, ৩৭০ রদের মতো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চালু হয়েছে সিএএ (CAA)। কিন্তু অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, এক দেশ-এক নির্বাচন বা এনআরসির মতো কঠিন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রথম বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন, নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবু নায়ডুরা। আন্তর্জাতিক রেটিং সংস্থা মুডিজ বলছে, শক্তিক্ষয় হয়ে যাওয়ায় তৃতীয় মোদি সরকারের কাজ করার দ্রুততা কমতে বাধ্য। সরকারি অনেক কাজ হয়তো হবে, কিন্তু ধীর গতিতে। যার প্রতিফলন ঘটবে আর্থিক উন্নয়নে বা সোজা কথায় জিডিপি বৃদ্ধির হারে।
[আরও পড়ুন: ভোটবাক্স খুলতেই উধাও ৩০ লক্ষ কোটি টাকা! বাজারকে প্রভাবিত করতেই কি এক্সিট পোল ‘স্ক্যাম’?]
এ তো গেল জোট রাজনীতির জটিলতা। অর্থনীতিবিদদের একাংশের ধারণা, মোদির শক্তিক্ষয়ের প্রভাব এবার পড়তে পারে অর্থনীতিতেই। এমনিতেই লোকসভা (Lok Sabha 2024) নির্বাচনের আগে ৮০ কোটি দেশবাসীকে রেশন দেওয়ার ঘোষণা করে রাজকোষের উপর চাপ বাড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এবার শক্তি কমে যাওয়ায় আমজনতার মন পেতে আরও বেশি 'রেওড়ি' বিলি করতে পারেন মোদি। সেক্ষেত্রে আরও টান পড়বে রাজকোষে। সদ্য রিজার্ভ ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ২.১১ লক্ষ কোটি টাকা ঢুকছে সরকারি তহবিলে। সেই টাকা যদি পরিকাঠামো খাতে ব্যয় না হয়ে সরাসরি মানুষের অ্যাকাউন্টে দেওয়া হয়, তাহলে সেটার মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে অর্থনীতিতে।
এখন প্রশ্ন হল, কেন্দ্রে তো এর আগেও জোট সরকার চলেছে। পাঁচ বছর সরকার চালিয়েছেন বাজপেয়ী। ১০ বছর জোট সরকার চালিয়েছেন মনোমোহন সিং। তাহলে মোদির ক্ষেত্রেই কেন এত অসুবিধার তত্ত্ব? জবাবটা স্পষ্ট, মনমোহন বা বাজপেয়ীরা যতটা নমনীয় ছিলেন, মোদি-শাহরা ততটাই দৃঢ়চেতা। তাছাড়া জোট রাজনীতিতে অভ্যস্ত নন তাঁরা। স্বাভাবিকভাবেই শরিকদের সামলে সরকার চালানো মোদির জন্য শাঁখের করাত হতে পারে।