shono
Advertisement

তিনবার তিন দলের সাংসদ, এবার বর্ধমান-দুর্গাপুরে ফিরে আসার পালা কার?

তিনবার লোকসভায় তিন দলের সাংসদ। এ বারে কি ভরসা বিজেপিতে? নাকি ফিরবে তৃণমূল। পালা ভারি কার?
Posted: 04:50 PM Mar 10, 2024Updated: 09:01 PM Mar 10, 2024

সৌরভ মাজি, বর্ধমান: নির্দিষ্ট সময়ের পর জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে লোকসভার আসন পুর্ন বিন্যাস করে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সেই অনুসারে ২০০৯ সালে গঠন করা হয় বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা(Bardhaman–Durgapur Lok Sabha) কেন্দ্র। পশ্চিম বর্ধমান((paschim bardhaman)জেলার দুর্গাপুর পূর্ব, দুর্গাপুর পশ্চিম এবং পূর্ব বর্ধমানের গলসি, বর্ধমান উত্তর, বর্ধমান দক্ষিণ, ভাতার ও মন্তেশ্বর বিধানসভা নিয়ে গঠিত হয় বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্র। এখনও পর্যন্ত তিনটি লোকসভা নির্বাচন( Lok sabha Election) পেয়েছেন এখানকার ভোটাররা। তাতে তিনবার তিনটি দল থেকে সাংসদ বাছাই করেছেন এখানকার বাসিন্দারা। সিপিএম, তৃণমূল ঘুরে এই আসন এখন বিজেপির দখলে।

Advertisement

জনবিন্যাস
মাত্র ১৫ বছর আগে তৈরি হওয়া এই লোকসভা আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার তফসিলি জাতিভুক্ত (এসসি)।  প্রায় ২৪.৫ শতাংশ। মুসলিম ভোটার প্রায় ১৮.৪ শতাংশ। তফসিলি উপজাতি (এসটি) ভোটার ৫.৬। বৌদ্ধ ০.০২ শতাংশ। খ্রিস্টান ০.২৭ শতাংশ। জৈন ০.০২ শতাংশ। শিখ ০.২২ শতাংশ। গ্রাম-শহরের মাপকাঠিতে ৫৪.১ শতাংশ গ্রামীণ ভোটার, শহুরে ভোটার প্রায় ৪৫.৯ শতাংশ। ২০১৯ সালের লোকসভায় মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ১৪ লক্ষ ৩৩ হাজার ১৮৯।

ইতিহাস
২০০৯ সালে ডিমিলিটেশনের পর গঠিত এই লোকসভা আসনে সিপিএম, তৃণমূল ও বিজেপি একবার করে জিতেছে। ২০০৯-এ কেন্দ্রে প্রথমবার লোকসভা ভোটের সময় রাজ্যে ক্ষমতায় বামেরা। সেবার এই কেন্দ্রে জয়ী হন সিপিএমের শেখ সাইদুল হক(Sheikh Saidul Haque)।  তবে ২০১১-র  পালাবদলের পর ২০১৪-এর ভোটে সাংসদ হন তৃণমূলের মমতাজ সঙ্ঘমিতা(Mumtaz Sanghmita)। তবে ২০১৯-এ বিজেপিতে আস্থা  রাখেন ভোটাররা। এমপি হন সুরিন্দরজিৎ সিং আহলুওয়ালিয়া(Surinderjeet Singh Ahluwalia)। এবার কাদের ওপর সাধারণ মানুষ ভরসা রাখবে, সেটাই দেখার।

[আরও পড়ুন: ফের প্রকাশ্যে বিজেপির কোন্দল, ‘জগা হঠাও’, জগন্নাথ সরকারের বিরুদ্ধে পোস্টার]

গত এক দশকের রাজনৈতিক পরিস্থিতি
২০০৯ সালে লোকসভা ভোটের সময় এই কেন্দ্রের সাতটি বিধানসভাই বামেদের দখলে ছিল। ২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল ঘটে। দুর্গাপুরের দুটি কেন্দ্রের একটিতে তৃণমূল ও একটিতে সিপিএম জিতেছিল। পূর্ব বর্ধমানের ৫টি বিধানসভার মধ্যে চারটি তৃণমূল ও একটি সিপিএম পায়। ফলে ২০১৪ লোকসভা ভোটের আগেই রাজনৈতিক চিত্রটাও বদলে যায়। তৃণমূল জেতে সেবার। এর পর ২০১৬-র  বিধানসভায় দুর্গাপুরের ( Durgapur) একটিতে কংগ্রেস ও অন্যটি সিপিএম জেতে। পূর্ব বর্ধমানের ৫টি বিধানসভা যায় তৃণমূলের পকেটে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য বিজেপি তৃণমূলের কাছ থেকে আসনটি ছিনিয়ে নেয়। মূলত দুর্গাপুরের দুই বিধানসভা আসনের লিডই বিজেপিকে জয় এনে দেয়। পূর্ব বর্ধমানের ৫টি বিধানসভায় তৃণমূল এগিয়ে থাকলেও লাভ হয়নি। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল পূর্ব বর্ধমানের ৫টিতেই জয় পায়। দুর্গাপুরের দুটির মধ্যে একটিতে তৃণমূল ও একটিতে বিজেপি(BJP)জিতেছে।
পাশাপাশি, এই লোকসভা আসনের অন্তর্গত  দুর্গাপুর ও বর্ধমান(Bardhaman) পুরসভা দুটিই দখলে রয়েছে তৃণমূলের। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনেও প্রায় সর্বত্রই জিতেছে তৃণমূল। সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচন, পুরভোট ও পঞ্চায়েত নির্বাচনের নিরিখে পাল্লা ভারি তাদেরই।

প্রার্থী ঘোষণা করল ঘাসফুল, বিরোধী শিবিরের সম্ভাব্য মুখ কারা

আজ ব্রিগেডের জনগর্জন সভা থেকে ৪২টি আসনে প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা আসনে প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার কীর্তি আজাদ।
বিজেপি বাংলার কয়েকটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও এই তালিকায় নাম নেই এই কেন্দ্রের প্রার্থীর। তবে স্থানীয় নানা মহলের মতে, আবারও সুরিন্দরজিৎ সিং আহলুওয়ালিয়ার উপরই ভরসা রাখতে পারেন বিজেপি নেতৃত্ব।  কংগ্রেস-বাম জোট হলে প্রার্থী কে হবেন সেটাই দেখার। তবে সিপিএম যদি জোটের হয়ে ওখানে লড়ে, তাহলে দৌড়ে রয়েছেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়((Minakshi Mukherjee), পার্থ মুখোপাধ্যায়, বিশ্বরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, অয়নাংশু সরকাররা। অন্যদিকে কংগ্রেস ওখানে লড়লে প্রার্থী দেওয়া হলে প্রার্থী হতে পারেন প্রদীপ ভট্টাচার্য(pradip bhattacharya)। এছাড়াও আরও দুজনের নাম শোনা যাচ্ছে জেলা মহলে।

[আরও পড়ুন: মোদির আশীর্বাদধন্য ‘জাস্টিস গাঙ্গুলি’ বনাম মমতার ‘তরুণ তুর্কি’ দেবাংশু, তমলুকে মেগা ফাইট]

হালফিলের হকিকত
গত বিধানসভা নির্বাচনে সাতটি বিধানসভার মধ্যে ছয়টি পেয়েছে  তৃণমূল। একটি বিধানসভা বিজেপির দখলে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সব কটি গ্রাম পঞ্চায়েত,পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদের দখল নিয়েছে তারাই । এই লোকসভা কেন্দ্রের আওতাধীন দুটি পুরসভা। পুরভোটে দুটিই জিতেছে তৃণমূল।

সম্ভাবনা
সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচন, পুর ও পঞ্চায়েত নির্বাচনের নিরিখে পাল্লা ভারি তৃণমূলেরই। স্থানীয় রাজনৈতিক মহলের মতে, গত লোকসভা নির্বাচনে সবথেকে বড় ফ্যাক্টর হয়েছিল বামেদের ভোট বিজেপিতে যাওয়া। দুর্গাপুরের দুই বিধানসভা কেন্দ্রে বিজেপির লিডও তৃণমূলের হারের এক্স-ফ্যাক্টর হয়ে পড়ে। পাশাপাশি সেবার পুলওয়ামায়(Pulwama) জঙ্গি হামলার পর তৈরি হওয়া জাতীয়তাবাদী আবেগ ও মোদি হাওয়াও কাজ করেছিল সেই ভোটে। তবে এবারের চিত্র অনেকটাই বদলে গিয়েছে। সাংগঠনিকভাবেও দুর্বল হয়েছে বিজেপি। পূর্ব বর্ধমানের সংগঠন কার্যত ধসে গিয়েছে বলেই মনে করেন অনেকে। পুরানো দিনের বিজেপি নেতাকর্মীদের কেউ বহিষ্কৃত, কেউ আবার দলে গুরুত্ব না পেয়ে বসে গিয়েছেন। পরিস্থিতি এমন যে প্রতি বুথে এজেন্ট দেওয়ার মতো শক্তিও তাদের নেই বলে দাবি রাজনৈতিক মহলের। অন্যদিকে, বিজেপি সাংসদ আহলুওয়ালিয়াকেও নিজের কেন্দ্রের মানুষ কাছে পাননি বলে অভিযোগ। বহুবার ‘নিখোঁজ’ পোস্টারও পড়ে তাঁর বিরুদ্ধে। গত লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি কর্মীদের যে ‘জোশ’ দেখা গিয়েছিল তা উধাও। সভাসমিতিতে ভিড় হচ্ছে না। দুর্গাপুর এবং পূর্ব-বর্ধমানের কিছু জায়গায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থাকলেও তা ভোটবাক্সে বেশি প্রভাব ফেলতে পারবে না বলেই দাবি রাজনৈতিক মহলের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup ছাঁদনাতলা toolbarvideo শোনো toolbarshorts রোববার