রমেন দাস: মা চাইতেন, বড় চাকরি করবে ছেলে। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে পেয়ে গিয়েছিলেন চাকরিও। কিন্তু একদিন কাজ করেই 'ছুটি' দিলেন চাকরিকে।
জীবন তাঁকে এনে ফেলল অন্য এক বাঁকে। পড়ার বইয়ের পাতায় 'দিদি'র ছবি লুকিয়ে রাখা সেই ছেলেটি আজ রাজনীতির ময়দানে। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের প্রার্থী। তিনি দেবাংশু ভট্টাচার্য (Debangshu Bhattacharya)
এমনিতে রাজনীতির ময়দানে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। 'খেলা হবে' গানে মন জয় করেছেন আট থেকে আশির। দেবাংশুর মা তনুজা দেবী ছেলেকে নিয়ে অন্য এক গল্প শোনালেন সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে। দেবাংশুর বাড়িতে এখন আসছে বিয়ের প্রস্তাব। পাত্রীর ছবি ও চিঠি প্রায় প্রতিদিনই এসে পৌঁছচ্ছে তাঁর বাড়ির ঠিকানায়। দেবাংশুর মা তনুজা দেবী বলছেন, ''আর বলবেন না! কত যে বেনামী চিঠি এসে হাজির হয় আমার বাড়িতে, দেখে আর পারি না!
তরুণ নেতা হিসেবে দারুণ জনপ্রিয়, কথাবার্তায় চৌখস দেবাংশু। সোশাল মিডিয়ায় তাঁর ফলোয়ার সংখ্যাও নজরকাড়া। তাঁর মা বলছেন, ''আমার ছেলের বিয়েরই বয়স হয়নি।''
তনুজা দেবীর কথায় পরিষ্কার, এখনই বিয়ের চিন্তাভাবনা করছেন না তিনি। কারণ হিসেবে মা জানাচ্ছেন, ''আমার ছেলে তো কোনও চাকরি করে না। নিজে ইনকাম না করলে বিয়ে দেব কীভাবে! ওর দিদির বিয়ে দিইনি এখনও।''
[আরও পড়ুন: মমতার উত্তরসূরি কি অভিষেক? মুখ খুললেন তৃণমূল সুপ্রিমো]
প্রার্থী হওয়ার আগে থেকেই দেবাংশু পরিচিত বঙ্গের রাজনীতিতে।বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর তৈরি 'খেলা হবে' স্লোগান ছড়িয়ে পড়েছিল বঙ্গের আনাচ-কানাচে। সেই সময়ে তিনি ছিলেন তৃণমূলের যুবনেতা। তার পরে কেটে গিয়েছে তিনবছর।এবার লোকসভায় দেবাংশু প্রথমবার নির্বাচনের ময়দানে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) তাঁর আইডল। সেই কোন ছোটবেলা থেকে প্রিয় 'দিদি'র ছবি-পেপার কাটিং লুকিয়ে রাখতেন বইয়ের পাতায়। তাঁর আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে নেমে পড়েছেন প্রচারে। বৈশাখের প্রবল গরম উপেক্ষা করে নিজের লোকসভা কেন্দ্রের নানা প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছেন দেবাংশু। তাঁর শয়নে, স্বপনে এবং জাগরণে একটাই লক্ষ্য- রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ সাংসদ হিসাবে পার্লামেন্টে পা রাখা।
অথচ একসময়ে ছেলের রাজনীতির প্রতি ঝোঁক কমাতে পাড়ার লোক দিয়ে ভয় দেখিয়েছিলেন মা। কিন্তু মায়ের এই 'ওষুধে' কাজ হয়নি। এ বিষয়ে তনুজা দেবী বলেন, "একটা সময় ওর রাজনীতির প্রতি ঝোঁক কমাতে আমি পাড়ার লোকজন দিয়ে ভয় দেখিয়েছি। যাতে ও এসব না করে! কিন্তু কাজ হয়নি। আমার ছেলে যা বলবে করেই ছাড়বে।"
[আরও পড়ুন: ‘কবে হারিয়েছ ভার্জিনিটি?’, ছেলেকে প্রশ্ন মালাইকার, পেলেন মোক্ষম জবাব]
কিন্তু মায়ের মন তো। স্নেহের ধারা নিম্নদিকেই ধাবিত হয়। তনুজা দেবী বলছেন, ''ছেলেটা বাড়ি থেকে দূরে দূরে থাকে। কষ্ট হয়। কান্না পায়। আবার ভয় পাই। সব মায়ের যা যা নিয়ে চিন্তা হয়, আমারও তাই। ও এত কিছু বলে। দলের হয়ে মুখ খোলে। আতঙ্কিত লাগে। এখন নিরাপত্তা পেয়েছে। কিন্তু একটা সময় তো ছিল না। ভালো লাগে ওর লড়াই দেখে। আমার ছেলেকে এত মানুষ ভালোবাসে, গর্ব হয়।"
বাড়িতে তাঁকে বুম্বা বলেই ডাকেন সবাই। সেই ছেলেবেলা থেকেই নতুনকে আবিষ্কার করার প্রবল নেশা ছিল তাঁর মনে। সেই নেশার জন্যই তাঁকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অল্প বয়স থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক আন্দোলন তাঁকে তীব্র ভাবে আকর্ষণ করত। তনুজা দেবী বলেন, "ও যখন ক্লাস সেভেন-এইটে পড়ে, দেখতাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি ওর খুব শ্রদ্ধা। দিদি-দিদি করত। তখন কিন্তু দল, রাজনীতি এসব কিছুই বোঝে না। তার পর সময় এগলো। সোশাল মিডিয়ায় লেখালিখি শুরু করল। ওর বয়স বাড়ল যত, তত রাজনীতি ওকে আকর্ষণ করল।''
বাংলার রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, তমলুক কঠিন আসন। তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপি প্রার্থী করেছে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়কে। সিপিএমের তরুণ নেতা সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁর প্রতিপক্ষ। অনেকেরই মনে প্রশ্ন, দেবাংশুর জন্য এই লড়াই বেশ কঠিন। তাঁর মায়ের অবশ্য দাবি, ''একটুও এমন মনে করি না। হয়তো ও কঠিন আসনে লড়ার যোগ্য বলেই দল ওকে নির্বাচিত করেছে। ওর উপরে ভরসা রেখেছে।"