শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: হারানো জমি ফেরাতে একেবারে হিসেবী পদক্ষেপ গ্রহণ করল তৃণমূল (TMC)। ঘাটাল এলাকার বুথ ধরে ধরে হিসাব কষছে শাসকদল। গত লোকসভা, বিধানসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে কোন বুথে কত ভোটে তৃণমূল প্রার্থীরা হেরেছেন, কেন হেরেছেন বা কত কম ভোটে লিড পেয়েছেন, তার হিসেবনিকেশ চলছে দিনরাত। লক্ষ্য, ঘাটাল বিধানসভা এবার ফেরাতেই হবে। পালাবদলের পর পরপর দুবার ঘাটাল বিধানসভা (Assembly) তৃণমূলের দখলে গেলেও গত ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরের কাছে হার মানতে হয় ঘাসফুল শিবিরকে। সেই হার ভুলতে পারছেন না তৃণমূলের ছোট থেকে বড় নেতারা। এমনকী, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটেও ঘাটাল (Ghatal) বিধানসভা খুব কম মার্জিনে দখলে রাখতে পেরেছিল তৃণমূল। তাই এবার প্রথম থেকেই সতর্ক ঘাটালের তৃণমূল নেতারা। তথ্য বলছে, ঘাটাল লোকসভার সাতটি আসনের মধ্যে একমাত্র ঘাটাল বিধানসভাটিই শাসকদলের হাতছাড়া।
গত ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে ঘাটাল বিধানসভায় মাত্র ৫৮৬৫ ভোটে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। কিন্তু একুশের বিধানসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরের কাছে ৯৬৬ ভোটে হেরে যায় ঘাসফুল শিবির। তার পর ২০২৩-এর পঞ্চায়েত ভোটেও দুটি গ্রাম পঞ্চায়েত হাতছাড়া ও একটি পঞ্চায়েত (Panchayat) কান ঘেঁষে জয়ী হয় তৃণমূল। এমনকী, খোদ ব্লক তৃণমূল সভাপতি দিলীপ মাজিও পঞ্চায়েত সমিতির আসনে দাঁড়িয়ে হেরে যান। ফলে মোটেই স্বস্তিতে নেই ঘাটালের ঘাসফুল শিবির।
[আরও পড়ুন: নোটায় ভোট দিন, প্রয়োজনে তৃণমূলকে জেতান! আর্জি ক্ষুব্ধ ‘আদি বিজেপি’ কর্মী সংগঠনের]
দলীয় সূত্রে খবর, ঘাটাল বিধানসভা এলাকার মধ্যে ঘাটাল ব্লক এলাকায় সবচেয়ে খারাপ ফল হয় তৃণমূলের। আসন্ন লোকসভা ভোটে (Lok Sabha Election 2024) সেই পুরনো জমি উদ্ধার করতে মরিয়া ঘাটালের তৃণমূল নেতারা। ঘাটাল ব্লক তৃণমূল সূত্রে খবর, ঘাটাল ব্লক এলাকায় মোট ২৬৩টি বুথের মধ্যে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৮২টি ও তেইশের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৪৮টি বুথে পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। সর্বশেষ পুরভোটেও খড়ার পুর এলাকায় তিনটি ওয়ার্ড হাতছাড়া হয়ে যায় তৃণমূলের। হারা বুথগুলি বাছাই করে বিশেষ নজর দিতে চলেছে শাসকদল। ওই বুথগুলিতে হারের কারণও চিহ্নিত করা হয়েছে। মূলত বিভিন্ন কারণে ওই বুথগুলির প্রথম সারির কর্মীরা নিষ্ক্রিয় থাকার জন্যই হার বলে ব্লক তৃণমূল নেতাদের ব্যাখ্যা। এমনকী, নিষ্ক্রিয় বুথ সভাপতিদের না সরিয়ে এক সক্রিয় কর্মীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে হারা বুথগুলিতে। খোদ ব্লক তৃণমূল সভাপতি দিলীপ মাজি নিজে ওই বুথগুলিতে গিয়ে নির্বাচনী কমিটি গঠন করে এসেছেন। পাশাপাশি তিনি নিজে ওই বুথগুলিকে নজরদারির তালিকায় রেখেছেন।
[আরও পড়ুন: ডকুমেন্ট পাঠানোর ক্ষেত্রে আকর্ষণীয় ফিচার আনছে WhatsApp! জেনে নিন খুঁটিনাটি]
‘নিষ্ক্রিয়’ বুথ সভাপতিদের ভোটের আগে সরাতে চাইছে না ব্লক তৃণমূল। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে ধারনা ব্লক নেতৃত্বের। শুধু তাই নয়, ২৬৩টি বুথেই অন্তত দশটি করে দেওয়াল লিখতেই হবে বুথ কর্মীদের। সেই সঙ্গে পাড়া বৈঠক থেকে শুরু করে পোস্টার, ফ্লেক্স, হোর্ডিং দিয়ে প্রচার তুঙ্গে তুলতে হবে প্রতিটি বুথে। পাশাপাশি হারানো জমি উদ্ধার করতে ঘাটালের প্রাক্তন বিধায়ক শংকর দোলুইকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। লোকসভা নির্বাচনী কোর কমিটিতেও ঠাঁই দেওয়া হয়েছে শংকরবাবুকে। করা হতে পারে ব্লক নির্বাচনী কমিটির চেয়ারম্যানও। ঘাটাল ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি দিলীপ মাজি বলেন, ‘‘এটা তো ঠিকই এত উন্নয়নের পরও কেন ওই বুথগুলিতে আমরা পিছিয়ে পড়লাম তার কারণ আমরা খুঁজে বের করেছি। তার সমাধানের পথও বের করেছি। আমাদের লক্ষ্য, ঘাটাল বিধানসভাকে বিজেপির হাত থেকে ছিনিয়ে আনতেই হবে। আমরা অনেকটাই আশাবাদী।’’